ইসরায়েলকে সমর্থন করায় ডাউনিং স্ট্রিটের ঈদ উদ্যাপন বয়কট
ইসরায়েলকে সমর্থন করায় কিছু কনজারভেটিভ রাজনীতিবিদ পাশাপাশি ব্যবসায়িক ও দাতব্য সংস্থার নেতারা ডাউনিং স্ট্রিটের ঈদ উদ্যাপন অনুষ্ঠান বয়কটের ঘোষণা দেন। এমন ঘোষণার পর সোমবার ডাউনিং স্ট্রিটে আয়োজিত হওয়া এ অনুষ্ঠানে অংশ নেননি প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। খবর বিবিসি'র।
অনুপস্থিতির কারণ হিসেবে তার কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, পার্লামেন্টে তার জরুরি কাজ রয়েছে এবং তিনি হাউস অব কমন্সে ইরান বিষয়ে একটি বিবৃতি দিচ্ছেন।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন সবাইকে ওই অনুষ্ঠানে যাওয়ার আহ্বান জানালেও স্বাভাবিক সংখ্যার প্রায় অর্ধেক, আনুমানিক ৫০ জন অতিথি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
রোববার ডাউনিং স্ট্রিট থেকে জারি করা এক বিবৃতিতে সুনাকের একজন মুখপাত্র জানিয়েছিলেন, মি. সুনাক মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্যদের স্বাগত জানাতে উন্মুখ হয়ে আছেন। কিন্তু তারপর উপস্থিত অতিথিরা অনুষ্ঠানে ঋষি সুনাককে না পেয়ে কিছুটা অবাক হন।
প্রতিবছর ঈদ ও মুসলিমদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কর্তৃক আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নিজে আমন্ত্রিত অতিথিদের অভ্যর্থনা জানালেও এবার অভ্যর্থনা জানান উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্ড্রু মিচেল।
যারা এসেছিলেন তাদের মধ্যে অনেকে ফিলিস্তিনি পতাকা সম্বলিত ছোট ব্যাজ পরেছিলেন এবং অন্যরা ঐতিহ্যবাহী ফিলিস্তিনি কেফিয়াহ স্কার্ফ পরে এসেছিলেন।
ঈদ অনুষ্ঠানে কনজারভেটিভ পার্টির নেতা ব্যারনেস ওয়ার্সিসহ গুরুত্বপূর্ণ অতিথিদের কেউই উপস্থিত ছিলেন না। ব্যারনেস ব্রিটেনের প্রথম মুসলিম মহিলা মন্ত্রিপরিষদ মন্ত্রী ছিলেন এবং গাজার জনগণের দুর্দশা নিয়ে তার সমালোচনা স্পষ্ট ছিল।
প্রধান মুসলিম দাতব্য সংস্থা এবং উল্লেখযোগ্য মুসলিম ব্যবসায়ীরা সকলেই অনুষ্ঠান বর্জন করেন।
এর আগে গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ এবং নারী ও শিশুসহ বেসামরিক নাগরিকদের মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগ উল্লেখ করে ইসরায়েলের প্রতি সরকারের সমর্থনে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন নেতৃস্থানীয় ব্যবসায়ী এবং দাতব্য তহবিল সংগ্রহকারী আসিফ আনসারি। এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, 'একজন মুসলিম হিসেবে আমি মনে করি মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য ব্রিটিশ সরকারের সাথে সুসম্পর্ক থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই বছর ব্রিটিশ সরকার যে অবস্থান নিচ্ছে তাতে আমি খুব দৃঢ়ভাবে এর বিরুদ্ধে অবস্থান জানাচ্ছি।'
তিন ব্রিটিশ ত্রাণকর্মী নিহত হওয়ার পরও ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রাখার যুক্তরাজ্যের সিদ্ধান্তের বিশেষ নিন্দা জানিয়ে আনসারি এটিকে নৈতিক সীমানার উল্লেখযোগ্য লঙ্ঘন বলে বিবেচনা করেন।
অতিথিদের কেউ কেউ বলেছিলেন যে তারা আসবেন কিনা তা নিয়ে দ্বিধায় ছিলেন এবং পরিবারের সাথে এ নিয়ে আলোচনা করেছেন।
একজন নারী বলেছেন, তিনি প্রথমবারের মতো ডাউনিং স্ট্রিটে আমন্ত্রিত হওয়ার বিষয়টি মিস করতে চান না, তবে গাজার পরিস্থিতিও ভুলে যাওয়া হয়নি তা পরিষ্কার করে উল্লেখ করেন তিনি।
আরেকজন বলেছেন যে তিনি অনেক বছর ধরে এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে আসছেন, এবং নতুন এ পরিস্থিতি উদ্ভূত হওয়ার পর ভাবছিলেন আসবেন কিনা!
তিনি বলেন, ' আমি আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি কারণ ডাউনিং স্ট্রিট ঈদ উদ্যাপন করছে এবং এই উদযাপন আমি পালন করি। আমি বুঝতে পারছি কেন অনেকে বয়কট করেছে কিন্তু আমার জন্য আসাটা সঠিক ছিল।'
অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে আসা অতিথিরা জানান, তারা অনুষ্ঠানে কোনও এমপিকে দেখতে পাননি। একজন বলেন, 'আমি সংসদ প্রার্থী দেখেছি, কিন্তু কোনও এমপি পাইনি। তারা হয়ত সেখানে ছিল, কিন্তু আমি তাদের দেখিনি।'
ডাউনিং স্ট্রিটে এই প্রথম এমন কোনও অনুষ্ঠানের বয়কটের ঘটনা ঘটেছে।
উল্লেখ্য, ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন সমর্থনে ক্ষুব্ধ আমেরিকান মুসলমানরাও এই মাসের শুরুতে হোয়াইট হাউসের বার্ষিক ইফতার অনুষ্ঠান বয়কট করেছিলেন।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন