দ. কোরিয়ায় সামরিক আইন জারি কেন্দ্র করে রাজনৈতিক সংকট: প্রেসিডেন্ট ইউনের ভাগ্যে এরপর কী?
হঠাৎ করেই সামরিক আইন জারির ঘোষণা দেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল।
গতকাল মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) রাতে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে এ ঘোষণা দেন তিনি, যা বিস্মিত করে দেশবাসীকে।
দক্ষিণ কোরিয়ার উদারপন্থী বিরোধী দল– ডেমোক্রেটিক পার্টি পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ। ইউন ডেমোক্রেটিক পার্টির একটি প্রস্তাবের কথা উল্লেখ করেন।
এই প্রস্তাবে, তারা কিছু শীর্ষ সরকারি প্রসিকিউটরদের অভিশংসনের প্রস্তাব দিয়েছে এবং সরকারের বাজেট প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।
এই প্রেক্ষাপটে, মুক্ত ও সাংবিধানিক শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া তার আর কোনো উপায় ছিল না উল্লেখ করে ইউন বলেন, বিরোধী দলগুলো দেশকে সংকটে ফেলার জন্য সংসদীয় প্রক্রিয়াকে জিম্মি করে রেখেছে।
এদিকে সামরিক আইন জারির প্রতিবাদে সৈনিকদের বাধা উপেক্ষা করেই পার্লামেন্টে সমবেত হন আইনপ্রণেতারা। তাঁরা প্রেসিডেন্টের জারি করা ডিক্রিকে ভোটাভুটির মাধ্যমে বাতিল করে দেন। ছয় ঘণ্টা পরে যা মেনেও নেন ইউন।
মঙ্গলবার যা যা হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ায়
স্থানীয় সময় রাত ১১টার দিকে টেলিভিশনের সম্প্রচারিত ভাষণে ইউন সামরিক আইন জারির ঘোষণা দেন, এই ভাষণ পূর্ব-নির্ধারিত ছিল না। তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টির বিরুদ্ধে উত্তর কোরিয়ার প্রতি সহানুভূতি পোষণ করাসহ রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন কার্যকলাপের অভিযোগ তোলেন।
তাঁর ডিক্রির বলে, সেটি বাতিলের আগপর্যন্ত কিছু সময়ের জন্য দেশের নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণভাবে চলে যায় সামরিক বাহিনীর হাতে। এরপর তাঁরা জাতীয় আইনসভা (সংসদ) ভবনের বাইরে সেনা ও পুলিশ মোতায়েন করে। আইনসভার ছাদে অবতরণ করে সামরিক হেলিকপ্টার।
এদিকে ইউনের ঘোষণার সাথেসাথেই এর তীব্র নিন্দা জানান দক্ষিণ কোরীয় রাজনীতিকরা, তাঁরা এটিকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক বলে উল্লেখ করেন। বিরোধী দলের নেতা লি জায়ে-মুয়েং ডেমোক্রেটিক পার্টির আইনপ্রণেতাদের একত্র হয়ে ভোটাভুটির মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের ডিক্রি বাতিলের আহ্বান জানান।
বিরোধী নেতার ঘোষণার পর রাস্তায় নেমে আসে হাজার হাজার মানুষ। রাজপথে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি থাকলেও তারা জনতার সাথে সহিংসতায় যায়নি। কোনো ধরনের সংঘাত ছাড়াই সেনাদের ব্যারিকেড পাশ কাটিয়ে পার্লামেন্টে প্রবেশ করেন আইনপ্রণেতারা। মধ্যরাতের জরুরি অধিবেশনে অংশ নিয়ে তারা এক ভোটাভুটির মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের আদেশ বাতিল করেন, পার্লামেন্টে উপস্থিত ১৯০ এমপির প্রায় সবাই এটি বাতিলের পক্ষে ভোট দেন।
এরপর রাত সাড়ে ৪টার দিকে প্রেসিডেন্ট ইউন জানান, তিনি নিজের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করছেন। তাদের আদেশ বাস্তবায়নে পাঠানো সেনা সদস্যরাও ব্যারাকে ফিরে যাবেন বলে জানান তিনি। তবে সামরিক আইন জারির সিদ্ধান্ত যৌক্তিক ছিল বলেও আত্মপক্ষ সমর্থন করেন।
ইউনের অভিশংসন হতে পারে?
সামরিক আইন বলবৎ হলে, গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব হয়। সভা-সমাবেশের ওপরও আসে নিষেধাজ্ঞা, যা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিরুদ্ধ।
তাই দেশে গণতন্ত্রবিরোধী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বিরোধী দল ইউনের বিরুদ্ধে অভিশংসনের উদ্যোগ নিতে পারে। আজ বুধবারে তাঁকে অভিশংসন করার একটি প্রস্তাব পার্লামেন্টে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন বিরোধীদলের একদল আইনপ্রণেতা। ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই প্রস্তাবটির ওপর ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হবে।
৩০০ আসনের দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্ট। এরমধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ আইনপ্রণেতা পক্ষে ভোট দিলে প্রেসিডেন্টের অভিশংসন করা যাবে। বর্তমানে পার্লামেন্টের ১৯২টি আসন রয়েছে ডেমোক্রেটিক পার্টি এবং কয়েকটি ছোট দলের। অভিশংসনের জন্য মাত্র ৮ জন এমপির সমর্থন কম পড়ছে তাদের। ইউনের দলের অনেকেও সামরিক আইন জারির জন্য তাঁর ওপর ক্ষুদ্ধ। তবে এমন এমপিদের সংখ্যা কত সেটি তাৎক্ষনিকভাবে জানা যায়নি, তবে এরাও তাঁর বিরুদ্ধে ভোট দিলে প্রেসিডেন্ট পদ হারাবেন ইউন।