জাপানে ময়লা ফেলার নিয়ম ভঙ্গকারীদের নাম প্রকাশ করা হবে
অনভ্যস্তদের জন্য জাপানে সঠিক নিয়মে ময়লা ফেলার কাজটি বেশ জটিল মনে হতে পারে। কারণ এই দেশটিতে ময়লা ফেলার নিয়ম-কানুন বেশ কঠিন। খবর বিবিসির
পুরো জাপানের মধ্যে আবার ফুকুশিমা শহরে আগামীতে বিষয়টি আরও কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
আগামী মার্চ থেকে শহরের কর্তৃপক্ষ সঠিক নিয়ম না মেনে ফেলা ময়লার ব্যাগ পরীক্ষা করবে। যেমন: যেসব ব্যাগে বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য একত্রে ফেলা হয়েছে বা ময়লার ব্যাগ নির্ধারিত আকারের চেয়ে বড় প্রভৃতি।
আর কিছু ক্ষেত্রে নিয়ম না মেনে ময়লা ফেলা মানুষদের নামও প্রকাশ করা হতে পারে।
গত মঙ্গলবার শহরটির মিউনিসিপ্যালিটির এক বৈঠকে এই নতুন নিয়ম পাস হয়েছে।
জাপানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা উন্নত করার উদ্দেশ্যে দীর্ঘদিন ধরে চালানো প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে নতুন এই নিয়ম চালু করা হচ্ছে।
তবে আগে থেকেই জাপানের কিছু শহরের কর্তৃপক্ষ ময়লার ব্যাগ খুলে সেগুলো পরীক্ষা করে এবং কিছু শহরে ময়লা ফেলার নিয়ম না মানা ব্যবসায়ীদের নাম প্রকাশ করা হয়।
তবে ফুকুশিমা হচ্ছে প্রথম শহর, যেখানকার কর্তৃপক্ষ সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ী উভয়েরই নাম প্রকাশের পরিকল্পনা করছে।
বিবিসি-কে দেওয়া এক বিবৃতিতে ফুকুশিমা ওয়েস্ট রিডাকশন প্রমোশন ডিভিশন জানায়, ঠিকভাবে ময়লা না ফেলায় অনেক সময় ময়লা আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ে। এতে করে কাকের সংখ্যা বেড়ে যায়।
তারা জানায়, 'সঠিকভাবে ময়লা না ফেলা একটি বড় উদ্বেগের বিষয়, কারণ এর ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার পরিবেশ দূষিত হয়।'
বিভাগটির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, 'ঠিকভাবে ময়লা না ফেললে এই অভ্যাস ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপর একটি বোঝা হয়ে দাড়াবে। তাই আমরা বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে করি।'
গত বছর ফুকুশিমা শহরে ৯ হাজারেরও বেশি ময়লা ফেলার নিয়মভঙ্গের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে।
বর্তমানে যারা নিয়ম না মেনে ময়লা ফেলে, তাদের ময়লার ব্যাগ না নিয়ে, এর ওপর স্টিকার লাগিয়ে বাসিন্দাদের নিয়ম ভাঙার বিষয়টি জানিয়ে দেয় কর্মীরা।
তারপর বাসিন্দাদের সেই ময়লা আবার বাড়ির ভেতরে নিয়ে গিয়ে সঠিকভাবে আলাদা করতে হয় এবং সঠিক স্থানে রাখতে হয়। তাহলে পরবর্তীতে ময়লা সংগ্রহকারীরা ময়লার ব্যাগটি নিয়ে যায়।
ফুকুশিমার নতুন নিয়ম অনুযায়ী, যদি কেউ এক সপ্তাহ ধরে ঠিকভাবে ময়লা না ফেলে তবে শহরের কর্মীরা প্রথমে সেটি পরীক্ষা করবেন এবং তারপর অপরাধীকে চিহ্নিত করবেন।
এ ধরনের অপরাধীদের প্রথমে মৌখিক সতর্কতা, তারপর লিখিত পরামর্শ দেওয়া হবে এবং সবশেষে তাদের নাম সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।
ফুকুশিমা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ময়লার ব্যাগ পরীক্ষার কাজটি গোপনে করা হবে।
জাপানের প্রতিটি শহরের নিজের নিজস্ব বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নিয়ম রয়েছে।
ফুকুশিমায় ময়লার ব্যাগ প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে নির্দিষ্ট স্থানে রাখতে হয়। তবে আগের রাতেই এগুলো বাইরে ফেলে রাখা যাবে না। অর্থাৎ, সকাল হওয়ার পর এবং নির্দিষ্ট সময়ের আগে ময়লার ব্যাগ নির্দিষ্ট স্থানে রাখতে হবে।
এছাড়া দাহ্য, অ-দাহ্য ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্রভৃতি বর্জ্য আলাদা সময়ে নেওয়া হয়।
যে সব পণ্য আকারে বড় যেমন: গৃহস্থালী যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্র, সেগুলো ফেলার জন্য ময়লা সংগ্রহকারীদের আলাদা করে জানাতে হয়।
ফুকুশিমার মেয়র হিরোশি কোহাটা বলেছেন, ময়লা কমানো এবং সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনার জন্য নতুন নিয়মগুলো চালু করা হয়েছে।
কর্তৃপক্ষকে উদ্ধৃত করে মেইনিচি জানিয়েছে, 'যারা নিয়ম মানে না তাদের পরিচয় প্রকাশ করা কোনো অন্যায় না।'
জাপানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়টি খুব গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হয়। ১৯৯০ এর দশক থেকে দেশটির সরকার এটিকেএকটি জাতীয় অ্যাজেন্ডা হিসেবে গ্রহণ করেছে।
মাটিতে ময়লা ফেলা কমানো, ময়লা কমানো এবং পুনর্ব্যবহারকে উদ্বুদ্ধ করাকেও একটি জাতীয় লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছে।
এ লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ নিজস্ব উদ্যোগ চালু করেছে।
জাপানের কামিকাতসু শহরের বাসিন্দারা তাদের ময়লা ৪৫টি ক্যাটাগরিতে আলাদা করে।
কাগোশিমা প্রিফেকচারে বাসিন্দাদের ময়লার ব্যাগে নিজেদের নাম লেখা আবশ্যক।
এছাড়া, গত বছর চিবা শহর কর্তৃপক্ষ বাসিন্দাদের তাদের বর্জ্য সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনায় সহায়তা করতে একটি এআই সহকারী নিযুক্ত করেছিল।