ট্রাম্পের নতুন আদেশে সন্তানের নাগরিকত্ব নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভারতীয় অভিবাসী অভিভাবকরা
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/11/aamerikaan_ddrim.jpg)
প্রথম সন্তানকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন এক দশকেরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ভারতীয় দম্পতি নেতা সাতপুতে ও অক্ষয় পিসে।
বিবিসি-এর এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে তাদের এ অনিশ্চয়তার কথা। তারা এইচ১বি ভিসায় বিদেশি কর্মী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি তাদের প্রথম সন্তান জন্মগ্রহণের সম্ভাব তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। তারা আশায় ছিলেন, তাদের সন্তান আমেরিকান নাগরিক হিসেবে জন্মগ্রহণ করবে।
বড় আইটি কোম্পানিতে চাকরি করা এ দম্পতি ছুটি, উন্নত জীবন সব কিছু নিশ্চিত করেই ক্যালিফোর্নিয়ার সান জোসে নিরাপদ জীবন গড়ে তুলেছিলেন।
কিন্তু সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অস্থায়ী অভিবাসী কর্মীদের সন্তানদের নাগরিকত্ব বাতিলের ঘোষণা অনেকের আমেরিকান ড্রিমকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
যদিও যুক্তরাষ্ট্রের দুটি ফেডারেল বিচারক এই আদেশটি স্থগিত করেছেন। এ কারণে মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ট্রাম্পের এ ঘোষণা কার্যকর হবে না। যার কারণে উচ্চ আদালতে ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্ত ঘুরে যেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
কিন্তু এমন অনিশ্চয়তা, একাধিক মামলা ও আইনি ঝামেলাগুলো অক্ষয়, নেহার মতো হাজার হাজার অস্থায়ী বিদেশি নাগরিকদের দ্বিধার মধ্যে ফেলে দিয়েছে।
নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে অক্ষয় বলেন, "এটি আমাদের সরাসরি প্রভাবিত করবে। যদি এ আদেশ কার্যকর হয় পরে আমাদের কী হবে আমরা জানি না।" তাদের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, তাদের সন্তানের জাতীয়তা কী হবে?
তাদের উদ্বেগ যৌক্তিক। নিউ ইয়র্কভিত্তিক অভিবাসন বিষয়ক আইনজীবী সাইরাস মেহতা বলেন, "মার্কিন আইন অনুযায়ী এখানে জন্ম নেওয়া একজন ব্যক্তিকে নন-ইমিগ্রেন্ট বলার কোনো বিধান নেই।"
নেহা-অক্ষয় দম্পতির সন্তান জন্মের সময় এগিয়ে আসছে। তাই তারা এ সময়ের আগে সন্তানকে জন্ম দিতে পারবেন কিনা তার পরামর্শ চাইতে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলেন। ডাক্তারের পরামর্শ ছিল, যদি সব কিছু ঠিক থাকে তাহলে তারা সন্তানের ৪০ সপ্তাহেই সন্তান প্রসব করতে পারবেন। পরে দম্পতি অপেক্ষা করারই সিদ্ধান্ত নেন।
নেহা বলেন, "আমি চাই সে প্রাকৃতিকভাবেই আসুক।" অক্ষয় বলেন, "আমার প্রাথমিক লক্ষ্য হল নিরাপদ প্রসব এবং আমার স্ত্রীর সুস্থতা। নাগরিকত্ব দ্বিতীয় বিষয়।"
অনেক পরিবারই সি-সেকশনের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করতে চাইছেন গণমাধ্যমে এমন খবর প্রকাশিত হলে ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রসূতি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব ফিজিশিয়ানস অব ইন্ডিয়ান অরিজিনের (এএপিআই) সভাপতি ডা. সতীশ কাথুলা। তিনি জানান, নিউ জার্সিতে কয়েকটি ঘটনা ছাড়া ডাক্তাররা এমন আর কোনো ঘটনার সম্মুখীন হননি।
ওহাইয়োর এক ডাক্তার জানান, "যে দেশে কঠোর চিকিৎসা আইন আছে, সেখানে শুধু নাগরিকত্বের জন্য আমি আগাম সিজারিয়ান সেকশন করার পরামর্শ দেই না। আমাদের ডাক্তাররা নীতিবান এবং তারা এটি কেবল চিকিৎসার প্রয়োজনেই করবেন, নাগরিকত্বের জন্য নয়।"
যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিকত্ব অনেকের জন্যই কাঙ্ক্ষিত। বিশেষ করে এইচ১বি ভিসাধারীদের বেশিরভাগই আসেন নাগরিকত্বের জন্য। ভারতীয়রা যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় বৃহত্তম অভিবাসী গোষ্ঠী।
অভিবাসন নীতির বিশ্লেষক স্নেহা পুরী সতর্ক করে বলেন, "জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের বাতিলের আদেশ ভারতের উপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রে পাঁচ মিলিয়নের বেশি ভারতীয় নন-ইমিগ্রেন্ট ভিসা অধিকারী।
তিনি বিবিসিকে জানান, "যদি এটি কার্যকর হয় তবে ভবিষ্যতে জন্মানো তাদের কোনো সন্তানই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাবে না।
অভিভাবক হতে চলা দক্ষিণ এশীয়রা বিভিন্ন অনলাইন গ্রুপে এ আদেশের প্রভাব ও পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।
যদিও ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছে, এটি বৈধ স্থায়ী বাসিন্দাদের সন্তানদের মার্কিন নাগরিকত্বের নথিপত্র পাওয়ার সক্ষমতাকে প্রভাবিত করবে না।
তবে যুক্তরাষ্ট্রে গ্রিন কার্ডের জন্য ভারতীয়রা বিশ্বের অন্যান্য দেশের নাগরিকদের তুলনায় সব থেকে বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করেন।
বর্তমান ইউএস নীতির অনুযায়ী, যে কোনো একটি দেশের মানুষের জন্য প্রাপ্ত গ্রিন কার্ডের সংখ্যা মোট গ্রিন কার্ডধারীদের ৭ শতাংশের বেশি হতে পারবেনা।
প্রতি বছর এইচ১বি ভিসা গ্রহীতাদের মধ্যে ৭২ শতাংশই ভারতীয়। কাটো ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, ২০২৩ সালে গ্রিন কার্ডের জন্য অপেক্ষমাণ ভারতীয়ের সংখ্যা ১.১ মিলিয়ন অর্থাৎ ৬২ শতাংশ। আর যারা বর্তমানে কর্মসংস্থানের ভিত্তিতে গ্রিন কার্ড পাচ্ছেন, তারা ২০১২ সালে আবেদন করেছিলেন।
কাটো ইনস্টিটিউটের অভিবাসন গবেষণা বিভাগের পরিচালক ডেভিড বায়ার তার প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলেন, "নতুন ভারতীয় আবেদনকারীদের গ্রিন কার্ডের জন্য আজীবন অপেক্ষা করতে হতে পারে। এর মধ্যে চার লাখ অভিবাসী গ্রিন কার্ড পাওয়ার আগেই মারা যেতে পারেন।"
এর বিপরীতে অনেক অভিবাসী নাগরিকত্বের প্রক্রিয়াকরণ আরও গতিশীল করে এক বছরের মধ্যে স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে যেতে পারেন।
ট্রাম্পের এ নির্বাহী আদেশ যদি বাস্তবায়িত হয়, তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদেরও তা প্রভাবিত করবে। কারণ তাদের সন্তান জন্মগ্রহণের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পেত এবং ২১ বছর হলে তার মা-বাবার জন্য গ্রিন কার্ডের আবেদন করতে পারতো।
পিউ রিসার্চের হিসাব অনুসারে, ২০২২ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সাত লাখ ২৫ হাজার অবৈধ ভারতীয় অভিবাসী ছিলেন। এর বিপরীতে মাইগ্রেশন পলিসি ইনস্টিটিউট তাদের সংখ্যা উল্লেখ করেছে তিন লাখ ৭৫ হাজার জন। অবৈধ অভিবাসীরা মার্কিন জনসংখ্যার ৩ শতাংশ এবং বিদেশে জন্মগ্রহণ করা জনগণের ২২ শতাংশ গঠন করে।
এইচ১বি বা ও ভিসাধারী ভারতীয়দের প্রধান চিন্তা তাদের সন্তানদের জীবনমান।
এ ভিসাধারীদের ভিসা নবায়ন করতে তাদের প্রায় যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে যেতে হয়। যারা এই উদ্দেশ্যে ভারত ফিরে যান, তারা প্রায়ই এই অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে দেরি করেন।
এই অভিবাসীরা তাদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী সন্তানরা একই আমলাতান্ত্রিক জটিলতার ভিতর দিয়ে যাক তা চান না।