ওয়ার্ডে মানুষ ৩৫ হাজার, ত্রাণ এসেছে ২১ জনের
আয়তনের দিক দিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় বগুড়া পৌর এলাকার নাগরিকদের জন্য কয়েকবার বরাদ্দ হবার পরও ত্রাণ সামগ্রী পাননি অনেক অসচ্ছল পরিবার। ৭১ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই পৌসভার ২৮ জনপ্রতিনিধিকে গত দুই সপ্তাহ আগে ৫০০ জন করে দিন মজুর ও শ্রমজীবীর তালিকা দিতে বলে স্থানীয় প্রশাসন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারা তালিকাও প্রদান করে। তবে ত্রাণ সহায়তা আসে খুবই কম।
সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরসহ ২১ ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন, তাদের এলাকায় শত শত মানুষের এ মুহূর্তে খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন। তবে দেওয়া হচ্ছে খুবই অল্প।
তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ পর্যন্ত দুই দফায় ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। সেগুলো তুলনামূলক কম হলেও তৃতীয় দফায় যে সহায়তা আসবে তাতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যক্তিকে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া সম্ভব হবে।
বগুড়া পৌর এলাকার ২১ নাম্বার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রুহুল কুদ্দুস ডিলু জানান, তার ওয়ার্ডে মানুষ আছে প্রায় ৩৫ হাজার। কিন্তু ১০ কেজি চাল ও পাঁচ কেজি আলু দেওয়া হয়েছে মাত্র ২১ জনকে।
"আমাদের ওয়ার্ডে অধিকাংশই গরীব মানুষ, আমি চিন্তিত এ বরাদ্দ কাকে দেবো" বললেন রুহুল কুদ্দুস ডিলু। তার দাবি, সবার প্রত্যাশা পূরণে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।
বগুড়া মোটর মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ও একই পৌরসভার ১৫ নাম্বার ওয়ার্ড কাউন্সিলর আমিনুল ইসলাম বলেন, এ দূর্যোগে অনেকেই লজ্জায় তাদের অভাবের কথা প্রকাশ করতে পারছেন না। তার ওয়ার্ডে এই মুহূর্তে অন্তত চার হাজার পরিবারের মানুষের জন্য ত্রাণ প্রয়োজন। কিন্তু বরাদ্দ এসেছে মাত্র ২১টি পরিবারের জন্য।
''গত ৪ এপ্রিল থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত এলাকার দুই হাজার ৮০০ পরিবারের চাহিদা মেটাতে নিজ তহবিল থেকে আমি পাঁচ কেজি করে চাল, আটা ও তেলসহ নানা সামগ্রী বিতরণ করেছি। যতদিন এ দূর্যোগ থাকবে ততদিন এ সহায়তা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করবো'', বললেন আমিনুল ইসলাম।
বগুড়া পৌরসভার ১৭ নাম্বার ওয়ার্ড কাউন্সিলর মেজবাহুল হামিদ বলেন, আমার ওয়ার্ডে ত্রাণ সামগ্রী প্রয়োজন সাড়ে চার হাজার পরিবারের। ব্যক্তিগত উদ্যোগে দেড় হাজার পরিবারের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছি। আরও অন্তত তিন হাজার পরিবারকে ত্রাণ দেওয়া প্রয়োজন।
তিনি বলেন, মাত্র ২১ জনের জন্য ১০ কেজি করে চাল ও পাঁচ কেজি আলু পেয়েছি। সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না কাকে ছেড়ে কাকে দেব।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দিন মজুর, বিকশা চালকসহ নিম্ন আয়ের বিপুল সংখ্যক মানুষকে ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
বগুড়া শহরের লতিফপুর কলোনী এলাকার দোকান কর্মচারী ওয়াহেদ মিয়া প্রায় এক মাস ধরে বেকার। পাঁচ জনের সংসারে তিনিই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। খাদ্য সংকটে থাকা ওয়াহেদের এখনই সাহায্য প্রয়োজন। কিন্তু কেউ তার খবর নিচ্ছেন না।
শহরতলীর সামবাড়িয়া এলাকার বিধবা রমেছা বেগম জানান, তার ঘরে প্রয়োজনীয় খাবার নেই। বাসা বাড়িতে কাজ করে চলতো সংসার। ছেলের আয়ের সঙ্গে মায়ের রোজগারে ভালই চলছিল তাদের। কিন্তু করোনার কারণে মা ও ছেলে একই সঙ্গে বেকার হয়ে পড়েছেন। গত ১৫ দিন ধরে তারা খুব কষ্টে দিনানিপাত করছেন।
জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা (ডিআরআরও) আজাহার আলী মন্ডল জানান, বগুড়া পৌর এলাকার জন্য তিনদফা চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ বরাদ্দ অনুযায়ী প্রত্যেক ওয়ার্ডে ১০ কেজি করে চাল পাবেন অন্তত এক হাজার পরিবার।
তিনি বলেন, বগুড়া শহরে বর্তমানে কর্মহীন দোকান ও বাণিজ্যিক কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। এ ছাড়া যান্ত্রিক-অযান্ত্রিক থ্রি-হুইলারের চালক বেকার হয়ে পড়েছে অন্তত ৩০ হাজার। এ ছাড়া ফুটপাতে নানা ধরনের পণ্য বিক্রি করেন এমন অন্তত পাঁচ হাজার মানুষের ব্যবসা গত ২০ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে।
আজাহার আলী বলেন, প্রথম দুই দফায় ত্রাণ তুলনামূলক কম এসেছিল। তৃতীয় দফায় যে ত্রাণ আসবে তা দিয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক উপকারভোগীকে সহায়তা করা সম্ভব হবে।