সিরিয়ায় ধ্বংসস্তূপের নিচে জন্ম, ‘আয়া’র দায়িত্ব নিতে চেয়ে অজস্র অনুরোধ
তুরস্ক-সিরিয়ায় শক্তিশালী ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত ২১ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত সিরিয়ার ধ্বংসস্তূপের নিচেই জন্ম নিয়েছে এক শিশু! তবে শিশুটিকে জন্ম দেওয়ার পর জন্মদাত্রী মা ধ্বংসস্তূপে চাপা পরা অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করেন।
সদ্য জন্ম নেওয়া এ শিশু ভূমিকম্পে নিজের পিতামাতা ও চার ভাই-বোন সকলকেই হারিয়েছে। বর্তমানে শিশুটি সিরিয়ার শহর আফরিনের একটি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। পরিবার হারানো এ শিশুটির দায়িত্ব নিয়েছে শিশুটির পিতামহ সালাহ আল বাদরান। খবর দ্য গার্ডিয়ান এর।
নবজাতক শিশুটির নাম রাখা হয়েছে 'আয়া'। যার অর্থ 'সৃষ্টিকর্তার এক নিদর্শন'।
আয়ার চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক হানি মারুফ বলেন, "শিশুটির মা আবু হাদিয়া সম্ভবত মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগে সন্তান জন্ম দিয়েছে। মায়ের মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা পরে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়েছে।"
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বর্তমানে আয়া'র শারীরিক অবস্থা আশঙ্কামুক্ত রয়েছে।
'আয়া'র পিতামাতার বসবাস ছিল উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার জেন্ডেরিস শহরে। শহরটিতে শিশুটির পরিবারের বসবাস ছিল পাঁচতলা এক ভবনে। ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়া ঐ পাঁচতলা ভবনের কনক্রিটের নিচেই জন্ম নেয় 'আয়া'।
ভূমিকম্পের প্রায় ১০ ঘণ্টা পর কনক্রিটের স্তুপের নিচে মৃত মায়ের আম্বিলিক্যাল কর্ডের সাথে যুক্ত অবস্থায় শিশুটিকে জীবন্ত উদ্ধার করে উদ্ধারকারীরা।
শিশু 'আয়া' কে উদ্ধারের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতোমধ্যেই ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। 'আয়া'র দায়িত্ব নিতে অনেকেই ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
কাতারি একজন টিভি অ্যাঙ্কর লিখেছেন, "যদি আইনি প্রক্রিয়া আমাকে সম্মতি দেয় তবে আমি শিশুটির দায়িত্ব নিতে চাই।" অন্য এক নেটিজেন লিখেছেন, "আমি শিশুটির দায়িত্ব নিতে চাই এবং সুন্দর একটি ভবিষ্যৎ উপহার দিতে চাই।"
হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খালিদ আত্তিয়াহ জানান, শিশু 'আয়া'র দায়িত্ব নিতে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে অসংখ্য ফোনকল আসছে।
তবে দ্য গার্ডিয়ান এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, 'আয়া' কে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়ার পর জেন্ডেরিস শহরেরই বাসিন্দা, পিতামহ সালাহ আল বাদরানের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) তুরস্কের গাজিয়ানতেপে সিরিয়া সীমান্তের কাছে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। পরে একই দিনে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার আরেকটি ভূকম্পন আঘাত হানে।
তীব্র দুটি ভূমিকম্পে দুই দেশেই হাজার হাজার ভবন ধসে পড়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া মানুষদের বাঁচাতে উদ্ধারকর্মীরা প্রাণপণ প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমান, তুরস্ক এবং সিরিয়া জুড়ে আড়াই কোটিরও বেশি মানুষ এই ভূমিকম্পের শিকার হয়েছেন।