তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা
গত তিন মাসে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ২৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুন মাসে ব্যাংকিং খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা, যা মোট বকেয়া ঋণের ১০.১১%।
মার্চ মাসে ব্যাংকিং খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা, যা মোট বকেয়া ঋণের ৮.৮০%।
জুন শেষে বকেয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ৪২ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা।
খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির পেছনে বেশকিছু বিষয়কে দায়ী করছেন ব্যাংকাররা। তাদের মতে, রপ্তানিকারকদের শিপমেন্টে বিলম্ব, ক্রেতাদের অর্ডার বাতিল, ক্রেতাদের অর্থ পরিশোধে বিলম্ব এবং বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে মেয়াদী ঋণ পরিশোধের জন্য বিশেষ ছাড়ের অনুপলব্ধতার কারণে খেলাপি বাড়ছে।
গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এবারের জুনে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩০ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের কিস্তি পাওয়ার জন্য বর্তমানে খেলাপি ঋণ কমানোর চাপে রয়েছে ব্যাংকিং খাত।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এবিবি'র সাবেক চেয়ারম্যান আনিস এ খান টিবিএসকে বলেন, "ক্লাসিফাইড লোনে অনেক বড় জাম্প হয়েছে।"
"আমি অনেক আগেই প্রেডিকশন করেছিলাম যে সামনের দিনগুলোতে আমাদের ক্লাসিফাইড লোন অনেক বেড়ে যাবে। এর অন্যতম কারণ অনেক ক্লাসিফাইড লোনকে ডেফারেল ও রিশিডিউল সুবিধা দেওয়ার কারণে ক্লাসিফাইড লোন কম দেখানোর সুযোগ ছিল। এখন সেগুলোর মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে ব্যবসায়ীরা আর লোনের কিস্তি চালাতে পারছে না। তাই, লোনগুলো আবার ক্লাসিফাইড হয়ে যাওয়ায় মোট ক্লাসিফাইড লোন অনেক বেশি বেড়ে গেছে," বলেন তিনি।
এসব খেলাপি ঋণের একটা বড় অংশ ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি উল্লেখ করে এ ব্যাংকার বলেন, "আমাদের যেসব ক্লাসিফাইড লোন আছে, এর একটা বড় অংশই ইনটেনশনালি লোনের টাকা ফেরত দিচ্ছে না। এখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চেষ্টা করছে ক্লাসিফাইড লোন কমাতে, তবে তাদের হাতেও করণীয় খুব বেশি নেই।"
ক্লাসিফাইড লোন কমাতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আমদানি কমে যাওয়ার কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে জানান এ ব্যাংকার। তিনি বলেন, "ডলার সংকটে ঠিকমতো র ম্যাটেরিয়াল ও ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানি করতে না পারার কারণে অনেক ব্যবসায়ীর লোন ফেরত দেওয়ার সক্ষমতায় প্রভাব ফেলবে।"
ডেফারেল সুবিধা শেষ হওয়ার কারণে ক্লাসিফাইড লোন বাড়ছে, এই কথার সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন ব্যাংক এশিয়ার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী। তিনি টিবিএসকে বলেন, "অনেক ক্লাসিফাইড লোনের মোট আউটস্ট্যান্ডিং এমাউন্টের ২-৫% জমা নিয়ে রিশিডিউল করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। ফলে অল্প টাকা জমা দিয়েই লোনগুলো নিয়মিত দেখাতে পেরেছিল ব্যাংক। এখন সে সুযোগ না থাকায় ক্লাসিফাইড লোন অনেক বেশি দেখাচ্ছে।"
মূল্যস্ফীতির কারণে ব্যবসায়ীদের মুনাফা করার সুযোগ বেশি থাকে উল্লেখ করে এই অভিজ্ঞ ব্যাংকার বলেন, "জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেলে সেখান থেকে ব্যবসায়ীদের প্রফিট বেশি করার সুযোগ থাকে। তাই সামনের দিনগুলোতে মূল্যস্ফীতির কারণে ক্লাসিফাইড লোন খুব বেশি বাড়বে বলে মনে হচ্ছে না।"
গত বছরের অক্টোবর ও ডিসেম্বরে ব্যাংকিং খাতে নতুন ঋণ পুনঃনির্ধারণ নীতি এবং শিথিলভাবে পরিশোধের সুযোগ দেওয়ার পর খেলাপি ঋণ উল্লেখযোগ্যভাবে ১৩ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা কমে।
২০২২ সাল পর্যন্ত ঋণ পরিশোধে বিভিন্ন ছাড় থাকলেও কিন্তু এ বছর থেকে সেসব ছাড় বাতিল করা হয়েছে বলেও খেলাপি ঋণ বেড়েছে, বলেন আরফান আলী।