ঋণের শর্ত, অর্থনৈতিক কর্মক্ষমতা নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈঠক আজ
বাংলাদেশকে দেওয়া ঋণের শর্তগুলো রিভিউ এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মক্ষমতা নিয়ে আলোচনা করতে আজ (৪ অক্টোবর) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকে বসছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
বৈঠকের আলোচ্যসূচি অনুযায়ী, আইএমএফ কর্মকর্তাদের সামনে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোর সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরার পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরমধ্যে রয়েছে– ফরেন এক্সচেঞ্জ ইন্টারভেনশন এবং আমদানি নিষেধাজ্ঞা, রপ্তানি আয়ে বিলম্ব, ক্যাপিটাল ফ্লাইট নিয়ে উদ্বেগ, সাম্প্রতিক কর্মক্ষমতা এবং একইসঙ্গে ঝুঁকি ও নতুন নিয়ম-নীতির সামগ্রিক মূল্যায়ন চিত্র।
বাংলাদেশে আইএমএফ মিশন প্রধান রাহুল আনন্দ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন।
এছাড়াও, সাম্প্রতিক মুদ্রাস্ফীতির বিভিন্ন কারণ, প্রত্যাশিত মুদ্রাস্ফীতির বর্তমান মূল্যায়ন এবং বিনিময় হার, মুদ্রানীতি পরিস্থিতি, প্রকৃত সুদহারের স্তর, সরকারি ও বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি এবং ইন্টারেস্ট রেট করিডোর (আইআরসি) অপারেশনালাইজেশন সিস্টেম সংক্রান্ত বিষয়গুলো সভায় উপস্থাপন করা হবে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশকে ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্যাকেজ মঞ্জুর করে আইএমএফ, যার প্রথম কিস্তির অর্থছাড় হয়েছে ফেব্রুয়ারিতে।
শর্তপূরণ সাপেক্ষে আগামী ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ পাবে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় কিস্তি পেতে হলে যেসব শর্ত পূরণ করতে হবে তারমধ্যে একটি হল ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রিজার্ভের পরিমাণ হতে হবে কমপক্ষে ২৫.৩২ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, গত ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২১.১৫ বিলিয়ন ডলার।
আইএমএফের আরেকটি শর্ত হলো ফ্লোটিং এক্সচেঞ্জ রেট কার্যকর করা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত সেপ্টম্বর থেকে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) এবং বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) কাছে এক্সচেঞ্জ রেট নির্ধারণের ক্ষমতা দিয়েছে।
গত জানুয়ারির শুরুতে দেশের ফরেন করেন্সি সেলিং রেট ছিল ১০৩ টাকা। ৩ অক্টোবর এই রেট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১০.৫০ টাকা। যদিও এখন রেমিট্যান্স ও এক্সপোর্ট প্রসিড একক রেট রয়েছে; তবে ব্যাংকাররা বলছেন, প্রকৃত মার্কেট রেট ১১৫/১১৭ টাকা।
এছাড়া, কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্মার্ট রেট নিয়ে অভিজ্ঞতার বিষয়টি আইএমএফের কাছে তুলে ধরবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মানি সাপ্লাই কমাতে যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয়েছে, সেগুলোও তুলে ধরা হবে। এরমধ্যে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমিয়ে আনতে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা (প্রজেকশন) ধরা হয়েছে ১০ শতাংশ। যদিও ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৪.১ শতাংশ।
এদিকে, আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) কেন্দ্রীয় ব্যাংক আইএমএফের সঙ্গে বৈঠকে যে বিষয়গুলো তুলে ধরবে তারমধ্যে রয়েছে– জলবায়ু সম্পর্কিত সবুজ অর্থায়ন,টেকসই অর্থনীতি ও সবুজায়নের নীতি বাস্তবায়ন, ক্যাপিটাল ফ্লাইট সংক্রান্ত উদ্বেগ, বাণিজ্যিক ঋণ, বৈদেশিক ঋণ, আর্থিক নীতির উপযুক্ততা ইত্যাদি।
বৈঠকের আলোচ্যসূচি অনুযায়ী, আগামী ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকায় অবস্থানকালে আইএমএফ প্রতিনিধি দলের কর্মকর্তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ৭ বার বৈঠকে বসবেন।