ঘূর্ণিঝড় হামুন: কক্সবাজারে ঝোড়ো হাওয়ার তীব্রতা কমেছে, বেড়েছে মহেশখালী-কুতুবদিয়ায়
উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় 'হামুন' কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করেছে। এ কারণে কক্সবাজার উপকূলজুড়ে তীব্র দমকা হাওয়া ও ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে কক্সবাজারের উপকূলীয় কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি অনেক গাছপালা ভেঙে গেছে।
তবে রাত ৯টার পর ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে কক্সবাজার সদর উপকূলে ঝোড়ো বাতাসের তীব্রতা কমতে শুরু করেছে। অন্যদিকে মহেশখালী ও কুতুবদিয়াত ঝোড়ো হাওয়া ক্রমাগত বাড়ছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইয়ামিন বলেন, যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তাতে হানুম কক্সবাজার অতিক্রম করছে বলে মনে হচ্ছে। এর মধ্যে বেশ কিছু গাছ ভেঙে কয়েকটি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ, কিছু ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত, কিছু এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
এছাড়া বিদ্যুৎ বন্ধ থাকার পাশাপাশি মোবাইল নেটওয়ার্কে জটিলতা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
অন্যদিকে মহেশখালীতে ঘূর্ণিঝড় হানুমের তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এডভোকেট শেখ কামাল। তিনি বলেন, ঝোড়ো বাতাসের কারণে অসংখ্য ঘর, গাছ ভেঙে গেছে। রাত ৯টা ৪৫ মিনিটের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে।
মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কত, তা এখনো ঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না বলে জানান শেখ কামাল।
এছাড়া ঝড়ে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বাংলাবাজার এলাকার সড়কে গাছপালা ভেঙে পড়েছে। এতে প্রায় ৫ কিলোমিটারজুড়ে যানবাহন আটকা পড়েছে। পরিস্থিতির স্বাভাবিক করতে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস।
মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে শুরু হওয়া দমকা হাওয়া ও ভারী বৃষ্টি এ পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদতফরের সর্বশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় 'হামুন' বিকেল ৩টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ২৮৫ কি.মি. দক্ষিণ পশ্চিমে; কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ২৫০ কি.মি. দক্ষিণ পশ্চিমে; মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ২৩৫ কি.মি. দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৮০ কি.মি. দক্ষিণে অবস্থান করছিল। প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির মূল অংশ আজ রাত ৯টা নাগাদ উপকূল অতিক্রম শুরু করতে পারে। যার কারণে কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর কক্সবাজার আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. ইমাম উদ্দিন জানান, 'ঘূর্ণিঝড়টি সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে কক্সবাজার উপকূলে আঘাত আনার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। এটি কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করছে। মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত ২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। কিন্তু, এখন বৃষ্টির মাত্রা বেড়েছে। বেড়েছে বাতাসের গতিবেগও।'
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানিয়েছেন, জেলার ৯টি উপজেলায় ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। যেখানে অনেক মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে এসেছেন। তাদের সঠিক সংখ্যা এই মুহূর্তে বলা সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে, দমকা হাওয়ার কারণে জেলার ব্যাপক এলাকাজুড়ে গাছ ভেঙ্গে যাওয়ার তথ্য জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। একইসঙ্গে মহেশখালী উপজেলার ধলঘাটা, কুতুবদিয়া উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নসহ উপকূলীয় নিম্নাঞ্চলে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।