দা ভিঞ্চির 'কম বয়সী 'মোনালিসা’? মুগ্ধ দর্শক
গত শতাব্দীর শুরুতে জনসম্মুখে আসা একটি চিত্রকর্ম ইতালিতে সম্প্রতি শিল্পপ্রেমীদের মাঝে আলোড়ন তৈরি করেছে। কেননা কেউ কেউ দাবি করছেন, চিত্রকর্মটি এঁকেছেন লিওনার্দো দা ভিঞ্চি। যাতে কি-না আবার ১৬ শতকে লিওনার্দোর অনবদ্য সৃষ্টি মোনালিসার কম বয়সী সংস্করণকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
চিত্রকর্মটির নাম রাখা রয়েছে 'আইজেলওর্থ মোনালিসা'। এটিকে গত মাসে তুরিন শহরে জনসাধারণের কাছে প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছিল। তখন চিত্রকর্মটিকে দেখতে বহু মানুষ ভিড় করেছিল।
ধারণা করা হচ্ছে যে, চিত্রকর্মটি ষোড়শ শতাব্দীর শুরুর দিকে আঁকা হয়েছে। পরবর্তীতে সপ্তদশ শতাব্দীর শেষ দিকে এটি ইতালি থেকে ইংল্যান্ডে নিয়ে যাওয়া হয়। আর ১৯১৩ সালে সামরসেটের একটি সম্ভ্রান্ত বাড়ি থেকে ইংরেজ শিল্পী হিউ ব্লেকার চিত্রকর্মটি উদ্ধার করেন।
পরবর্তীতে ওয়েস্ট লন্ডনের আইজেলওর্থের স্টুডিওর নাম অনুযায়ী চিত্রকর্মটির নামকরণ করা হয়। বর্তমানে এটির ব্যক্তি মালিকানায় রয়েছে; যারা এটিকে সকলের কাছে পরিচিত করে তুলতে চান। আর এই দায়িত্বটি নিয়েছেন জুরিখে অবস্থিত মোনালিসা ফাউন্ডেশন।
দ্য গার্ডিয়ানের রিপোর্ট অনুযায়ী, ফাউন্ডেশনটির মতেও এই চিত্রকর্মটিও লিওনার্দোর আঁকা সত্যিকারের মোনালিসা। রিপোর্টে বলা হয়, "ফাউন্ডেশনটি মনে করে, এটি বিখ্যাত মোনালিসা চিত্রকর্মের প্রথম সংস্করণ। যেখানে লিওনার্দো কম বয়সী মোনালিসাকে চিত্রিত করেছে। যার মূল চিত্রকর্মটি ল্যুভর মিউজিয়ামে বহু লোককে আকর্ষিত করে আসছে।"
তবে চিত্রকর্ম সংশ্লিষ্ট অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেন যে, এটি আসলেই লিওনার্দোর নিজের আঁকা সত্যিকারের চিত্রকর্ম কি-না! বিখ্যাত এই চিত্রশিল্পী ফ্রান্সে থাকাকালীন ১৫১৯ সালে স্ট্রোকে মারা গিয়েছিলেন বলে মনে করা হয়।
এ সম্পর্কে দ্য গার্ডিয়ানের লেখক জনাথান জোন্স বলেন, "আমার দৃষ্টিতে এটি লিওনার্দোর কাজ হওয়ার সুযোগ নেই। চিত্রকর্মটি নিয়ে যে দাবিটি করা হচ্ছে তা অবিশ্বাস্য বলে মনে হচ্ছে। এটা আমার কাছে অকল্পনীয় মনে হয় যে, যিনি কি-না শিল্পীদের মধ্যে সবচেয়ে সূক্ষ্ম, পর্যবেক্ষণশীল ও ধৈর্যশীল; সেই শিল্পীর দ্বারা এমন জঘন্য, অপ্রত্যাশিত চিত্রকর্ম তৈরি হতে পারে।"
জনাথান জোন্স মনে করেন, আলোচিত এই চিত্রকর্মটি শিল্পগুণে বেশ বাজে মানের। একইসাথে এতে মোনালিসার মুখের আকৃতি 'ভুল' বলে মনে হচ্ছে। কেননা রেনেসাঁ শিল্পীরা চেহারার চিত্রকর্মে সচারাচর যে অনুপাত রাখতো, এটিতে তা নেই।
অন্যদিকে মোনালিসা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, "পেইন্টিংটিতে মুখের আকৃতির পার্থক্যের কারণ হচ্ছে এটিকে সাবজেক্টের কম বয়সী অবস্থা চিত্রায়িত করা হয়েছে। এটি প্রমাণ করে যে, লিওনার্দো তার মাস্টারপিসের দুটি সংস্করণ তৈরি করেছিলেন। এরমধ্যে এই প্রথমটি ১৫০৩ সালে ফ্লোরেন্সে তৈরি করা হয়েছিল।
১৭৯৭ সাল থেকে বেশিরভাগ সময়েই মোনালিসার বিখ্যাত চিত্রকর্মটি প্যারিসের ল্যুভর মিউজিয়াম জনসাধারণের কাছে প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছে। প্রতিবছর লাখ লাখ দর্শনার্থী জাদুঘরটিতে ভিড় করায় এটিকে বিশ্বের সরাসরি সবচেয়ে বেশি লোকের দেখা চিত্রকর্ম বলেও অভিহিত করা হয়।
এখনো পর্যন্ত 'আইজেলওর্থ মোনালিসা' চিত্রকর্মটি বিক্রির জন্য তোলা হয়নি। তবে নাম না জানা বিক্রেতারা এটি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিলে তা চড়া দামে বিক্রি হতে পারে।
লিওনার্দোর আরেক বিখ্যাত চিত্রকর্ম 'সালভাদর মুন্ডি' ২০১৭ সালে নিউ ইয়র্কে ৪৫০.৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে বিক্রি করা হয়েছিল। যিশু খ্রিস্টের আঁকা চিত্রকর্মটি চতুর্দশ শতাব্দীর শেষের দিকে কিংবা পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথমদিকে আঁকা হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।
একইভাবে মোনালিসার আঁকা চিত্রকর্মটির ১৯৬২ সালে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমানে ঐ হিসেবে যার বাজারদর ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।