আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির আসন সমঝোতা নিয়ে অচলাবস্থা
গত কয়েকদিনে দফায় দফায় বৈঠকের পরেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতার বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি জাতীয় পার্টি।
শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) রাত ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় দুই পক্ষ নতুন আরেকটি বৈঠকে বসে।
সূত্রমতে, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ২৬টি আসনের প্রস্তাব দেওয়া হলেও এ সংখ্যা বাড়িয়ে ৩৫-৪০টিতে নিয়ে যেতে জাতীয় পার্টির নেতারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
জাতীয় পার্টির একজন নেতা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, আওয়ামী লীগ তাদের দাবি পূরণ না করলে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন থেকে সরে যেতে পারে দলটি।
তিনি বলেন, গত তিন নির্বাচনে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ ছিল নাহয় সমঝোতায় নির্বাচন করেছে। 'এখন জাতীয় পার্টির চাওয়া তো বেশি কিছু না। যেখানে ১৪ দল তাদের আসন পেতে পারে, সেখানে জাতীয় পার্টির মতো দল ৩৫-৪০টি আসন চাইলে সেটা অনেক বড় কিছু না।'
জাতীয় পার্টি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালে নির্বাচন নিয়ে কারও আগ্রহ থাকবে না বলেও জানান এই নেতা।
বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ জানিয়েছে, তারা ১৪ দলীয় জোটের সদস্যদের সঙ্গে মাত্র সাতটি আসন ভাগাভাগি করবে।
সাতটি আসনের মধ্যে জোটের অন্য তিন সদস্য হাসানুল হক ইনুর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ও রাশেদ খান মেননের ওয়ার্কার্স পার্টি তিনটি করে আসন পাবে এবং জোটের পক্ষে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জাতীয় পার্টি (জেপি) লড়বে একটি আসনে।
রোববার বিকাল ৪টার মধ্যে বৈধ প্রার্থীরা মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে পারবেন। দলগুলোকে এ সময়ের মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়ে তাদের চূড়ান্ত প্রার্থীর নাম জানিয়ে দিতে হবে এবং দলীয় প্রতীক বরাদ্দ দিতে হবে।
এছাড়াও কোনো দল তার দলীয় প্রতীক জোটভুক্ত দলের কোনো প্রার্থীর অনুকূলে বরাদ্দ দিতে চাইলেও সেটা এ সময়ের মধ্যে করতে হবে।
সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) রিটার্নিং কর্মকর্তারা বৈধ প্রার্থীদের অনুকূলে প্রতীক বরাদ্দ দেবেন। তখন থেকেই দল বা প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণায় নামতে পারবেন।
শনিবারের বৈঠক
শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠকে সমঝোতার বিষয়টি মীমাংসা না হওয়ায় শনিবারও বৈঠক হবে বলে জানায় জাতীয় পার্টি।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু শনিবার দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, 'আজকেও [আওয়ামী লীগের সঙ্গে] মিটিং হবে। ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের আগপর্যন্ত দুই দলের মধ্যে বৈঠক হবে।'
রোববার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন হওয়ায় শনিবারের বৈঠকেই আসন সমঝোতার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে বলে আশা করছিলেন জাতীয় পার্টির নেতারা।
শুক্রবারের বৈঠক সম্পর্কে চুন্নু বলেন, 'কতগুলো আসন কিংবা নির্দিষ্ট কোনো আসন নিয়ে আলোচনা হয়নি। মূলত নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু হয়, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আসন সমঝোতার বিষয়টি মুখ্য না।'
এদিকে জাতীয় পার্টির সঙ্গে শুক্রবারের বৈঠক সফলভাবে শেষ হয়েছে বলে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক।
বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে। এ বিষয়ে শনিবার দুই দলের পক্ষ থেকে আলাদাভাবে গণমাধ্যমে ব্রিফ করা হবে।'
জাতীয় পার্টির নিজেদের মধ্যেই দ্বন্দ্ব
এদিকে জাতীয় পার্টিতে নিজেদের মধ্যেই চলছে দ্বন্দ্ব। দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ ও তার সমর্থকরা জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচন করছেন না। মঙ্গলবার রওশন এরশাদ নিজেই জাতীয় পার্টির সঙ্গে কোনো জোট কিংবা সমঝোতা না করতে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করে এসেছেন।
২০০৮ সালে জাতীয় পার্টি মহাজোটের অংশ হিসেবে নির্বাচনে ৪৯টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। এর মধ্যে ২৯টি আসনে আওয়ামী লীগ কোনো প্রার্থী দেয়নি। বাকি ২০টি আসনের যেখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দিয়েছে তার কোনোটিতেই জিততে পারেনি জাতীয় পার্টি।
২০১৪ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ৩৩টি আসনে জয়লাভ করে এবং আওয়ামী লীগ এই আসনগুলোতে কোনো প্রার্থী দেয়নি।
২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে ২৬টি আসন দিয়েছিল, কিন্তু দলটি তার মধ্যে জিতেছিল ২১টি আসনে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগ আসন ছাড় না দিলে ৪-৫টি আসনে জয়ী হওয়ারও সম্ভাবনা নেই জাতীয় পার্টির।