তৃতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলের অনুমোদন পেল সিটি গ্রুপ
প্রথম দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের সম্ভাবনা পর্যবেক্ষণের পর, 'পূর্বগাঁও অর্থনৈতিক অঞ্চল' নামে তৃতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলের অনুমোদন পেয়েছে সিটি গ্রুপ। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য ইতোমধ্যেই চালু হয়েছে এ অঞ্চলের নির্মাণ কাজ।
দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যবসায়িক সংস্থা সিটি গ্রুপ, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ৯৩ একর জমিতে অর্থনৈতিক অঞ্চলটি গড়ে তুলছে। শিল্প কেন্দ্রটি রাজধানী ঢাকা থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার এবং সড়কপথে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
এ উদ্যোগের চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার পর সিটি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হাসান বলেন, "প্রাথমিকভাবে ১০,০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে পূর্বগাঁও অর্থনৈতিক অঞ্চলে। এর মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে প্রায় ১১,০০০ লোকের।"
মঙ্গলবার (৫ মার্চ) ঢাকায় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)-এর প্রধান কার্যালয়ে, প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুনের সভাপতিত্বে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই অর্থনৈতিক অঞ্চলের লাইসেন্স দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে সিটি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হাসান জানান, তারা ইতোমধ্যেই ভূমি উন্নয়নের কাজ শেষ করেছেন; এখন কারখানা স্থাপনের জন্য অভ্যন্তরীণ রাস্তা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজে মনোযোগ দেবেন। আগামী এক বছরের মধ্যে প্রাথমিক কাজ শেষ হবে বলে আশা করছেন তারা।
"স্টিল মিল, রাসায়নিক এবং সিরামিক খাতে বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। এ লক্ষ্যে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব সবুজ শিল্প গড়ে তোলা হবে," বলেন তিনি।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরে সিটি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, তারা অঞ্চলটিকে ১৫০ একর জমিতে সম্প্রসারণ করতে চান।
তিনি আরও বলেন, "এ কাজটি চলমান প্রক্রিয়া। অর্থনৈতিক অঞ্চল ডেভলপমেন্টের মধ্যে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আসেন, আমাদের সঙ্গে কথা বলেন। ইতোমধ্যে জাপান, চীন, থাইল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান এখানে বিনিয়োগের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে।"
বর্তমানে, সিটি গ্রুপ দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিচালনা করছে: এরমধ্যে একটি হলো নারায়ণগঞ্জের সিটি ইকোনমিক জোন এবং অন্যটি মুন্সীগঞ্জের হোসেন্দী ইকোনমিক জোন। উভয় অঞ্চলই ইতোমধ্যে উৎপাদনে রয়েছে।
মো. হাসান বলেন, "আমাদের সিটি ইকোনমিক জোন এবং হোসেন্দী ইকোনমিক জোনে দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের ২১,০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। হোসেন্দীতে নতুন দুটি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত, আমরা গ্যাসের অপেক্ষায় আছি। যত তাড়াতাড়ি গ্যাস পাবো, তত দ্রুত সেখানে উৎপাদন শুরু হবে।"
"দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে অর্থনৈতিক অঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাসের প্রয়োজন। এর জন্য আমাদের বেজার সহোযোগীতা দরকার। কারণ আমরা বিদ্যুৎ ও গ্যাস না পেলে প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে যেতে দেরি হয়; এতে বিনিয়োগকরীরা অনাগ্রহ দেখায়," বলেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন সাংবাদিকদের বলেন, "বিদ্যুৎ আমাদের চাহিদা মতো উৎপাদন হচ্ছে। আর গ্যাসে আপাতত সংকট রয়েছে, সরকার এলএনজি আমদানি করে সংকট নিরসনের চেষ্টা করছে। আমরা চাচ্ছি, গ্যাসের চাহিদা মিটিয়ে এরপরেই গ্যাস-ভিত্তিক শিল্প কারখানাগুলো করবো।
"জ্বালানি মন্ত্রণালয়সহ অন্যন্য মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যেই বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। আশা করি, দ্রুতই গ্যাসের চাহিদা সংকট কেটে যাবে," বলেন তিনি।
নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলায় সিটি গ্রুপের আওতাধীন সিটি ইকোনমিক জোন লিমিটেড ২০১৮ সালে লাইসেন্স পায়। এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৮টি শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়েছে। গ্রুপটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে এসব শিল্পের মধ্যে আছে– শস্যজাত পণ্য, ভোজ্য তেল, অপরিশোধিত তেল, ওভেন ব্যাগ, পোল্ট্রি ফিড, খাদ্য পণ্য, দুগ্ধজাত পণ্য ইত্যাদি।
সিটি ইকোনমিক জোনে উৎপাদিত পণ্য দেশের চাহিদা পূরণ করার পর বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। এখানে ১৫,০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে এবং এ পর্যন্ত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ১২,০০০ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
অপরদিকে, সিটি গ্রুপের আওতাধীন মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলায় ১০৮.৫৭ একর জমিতে হোসেন্দী ইকোনমিক জোন লিমিটেড স্থাপন করা হয়। ২০২০ সালে লাইসেন্স প্রাপ্তির পর থেকে এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৬টি শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়েছে। এসব শিল্পের মধ্যে রয়েছে সোডিয়াম ক্লোরাইড, পরিশোধিত চিনি ও চিনিজাত দ্রব্য, এলপিজি বটলিং ও সরবরাহ, কাগজ ও কাগজজাত পণ্য, বিভিন্ন ধরনের সিমেন্ট ও উপজাত, জাহাজশিল্প (বাল্ক কেরিয়ার, প্যাসেঞ্জার ভেসেল, ফেরি, ন্যাভাল শিপ) ইত্যাদি। এখানে প্রায় ৭,০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে এবং এ পর্যন্ত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৫,০০০ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
২০৪১ সালের মধ্যে সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এক কোটি লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ। বেজার আশা, এই অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে এবং সেখান থেকে বার্ষিক ৪০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি করা সম্ভব হবে।