স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে চট্টগ্রাম বন্দর, পূর্ণোদ্যমে চলছে কনটেইনার লোডিং-আনলোডিং
বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রধান প্রবেশদ্বার– চট্টগ্রাম বন্দরে ছয়দিন পর পূর্ণদ্যমে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সরেজমিনে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের প্রতিবেদক দেখেন, জাহাজ থেকে কনটেইনার উঠানামা, কনটেইনার ডেলিভারি, শ্রমিকের কর্মচাঞ্চল্যে মুখর হয়ে হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম বন্দর।
বন্দরের ১২টি গেইট দিয়েই প্রাইম মুভার, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান আসা-যাওয়া করতে দেখা গেছে। তবে প্রায় চারদিন ডেলিভারি কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বৃহষ্পতিবার গাড়ির সীমাহীন চাপ দেখা গেছে।
দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি, সিসিটি এবং জিসিবি তিনটি টার্মিনালের সবকটি ইয়ার্ডে জাহাজে কনটেইনার উঠানামা করতে দেখা গেছে। খোলাপণ্যবাহী জাহাজ থেকে নামানো হচ্ছে স্ক্র্যাপ-সহ অন্যান্য পণ্য।
তবে কর্মকর্তারা বলেছেন, বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই ) থেকে বন্দর কার্যক্রম চারদিন বন্ধ থাকার ফলে ইয়ার্ডে জমা হওয়া কনটেইনারের ব্যাকলগ কাটিয়ে ওঠার চাপও আছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, স্বাভাবিক অবস্থায় দিনে ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টিইইউ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা হয়। গতকাল বুধবার ৩ হাজার টিইইউ কনটেইনার ডেলিভারি দেওয়া হয়েছে। আজ এর পরিমাণ সাড়ে ৪ হাজার টিইইউ ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক টিবিএসকে বলেন, 'চট্টগ্রাম বন্দরের সব ধরনের কার্যক্রম এখন পুরোপুরি স্বাভাবিক। ডেলিভারি কমে যাওয়ায় ইয়ার্ডে স্বাভাবিকের চেয়ে যে বাড়তি কনটেইনার জমেছে – তা আগামী সপ্তাহের মধ্যে ক্লিয়ার হয়ে আসবে।'
মঙ্গলবার রাত থেকে পণ্য পরিবহন বেড়েছে জানিয়ে ওমর ফারুক বলেন, 'বেশিরভাগ পণ্য কনটেইনার ডেলিভারি দেওয়া হয়েছে।'
বন্দর সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ১৮ জুলাই রাতে ইন্টারনেট বন্ধ হওয়ার আগপর্যন্ত কাস্টমস যেসব পণ্যের শুল্কায়ন সম্পন্ন করে, ২০ জুলাইয়ের মধ্যে ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে সেগুলোর খালাস এবং জাহাজীকরণ সম্পন্ন হয়। এরপর দুইদিন ধরে কার্যত কনটেইনার আর বন্দরের বাইরে যেতে পারেনি। ফলে বন্দরের ইয়ার্ডে কনটেইনারের স্তূপ জমলেও - আমদানি পণ্যবাহী ও খালি কনটেইনার খালাস বন্ধ রাখেনি বন্দর কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) রাত থেকে চট্টগ্রামে সীমিত পরিসরে ইন্টারনেট সেবা চালু হয়। এর ফলে পাঁচদিন পর কাস্টমস অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেম সফটওয়্যারের সঙ্গে সংযুক্ত হয়; যে পদ্ধতিতে তারা আমদানি-রফতানি পণ্যের শুল্কায়ন সম্পন্ন করে। তবে ইন্টারনেটের ধীরগতির কারণে বুধবারও দিনভর শুল্কায়নের গতি কম ছিল বলে কাস্টমস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
চট্টগ্রাম কাস্টম সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব কাজী মাহমুদ ইমাম টিবিএসকে বলেন, 'ইন্টারনেট সংযোগ আসায় কাস্টমস শুল্কায়ন পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে গেছে। কাস্টমস কর্মকর্তারাও দ্রুত পণ্য চালানগুলো শুল্কায়ন করছে। এখন চট্টগ্রাম বন্দর এবং কাস্টমসের কার্যক্রম পুরোপুরি স্বাভাবিক রয়েছে।'
তবে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, চলমান সংকটের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে আটকে পড়া কনটেইনারের অতিরিক্ত মাশুল মওকুফ করা গেলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবে।
চট্টগ্রাম বন্দর শ্রমিকদের খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করতে এসে আজ বৃহস্পতিবার নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, চলমান পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার ডেলিভারি নিতে বিলম্ব হওযায়– যে অতিরিক্ত মাশুল আসবে সেটি মওকুফ করা যায় কিনা সেটি বিবেচনা করা হবে।
তিনি বলেন, 'আমাদের কাছে ব্যবসায়ীরা সেভাবে যদি উপস্থাপন করে– চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সেটা নিশ্চিতভাবে বিবেচনা করবে। কারণ শুধুই ব্যবসা করার জন্য নয়, দেশের অর্থনীতিকে সেবা করার জন্য এ বন্দর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এ বন্দর পরিচালনা হবে না।'