রপ্তানির ‘অবাস্তব’ লক্ষ্যমাত্রা সংশোধনের উদ্যোগ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের
ভুল রপ্তানি তথ্যের ওপর ভিত্তি করে 'অস্বাভাবিক' লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে শেখ হাসিনা সরকারের অনুমোদন করা 'রপ্তানি নীতি ২০২৪-২৭' সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এর মাধ্যমে রপ্তানির বাস্তবসম্মত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হবে।
আজ বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এই রপ্তানি নীতি বিশ্লেষণ করে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা কমানো এবং রপ্তানিকারকদের জন্য ঘোষিত বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধায় পরিবর্তন আনা হতে পারে।
গত ১ জুলাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে 'রপ্তানি নীতি ২০২৪-২৭' এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। এটি ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এতে ২০২৭ সালের মধ্যে ১১০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে আগামী তিন বছরের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ দ্বিগুণেরও বেশি হতে হবে— যা অর্জন করা কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে মনে করছেন সরকারের নীতি-নির্ধারকরা।
এছাড়া, হাসিনা সরকারের অনুমোদিত রপ্তানি নীতি আদেশে এলডিসি গ্রাজুয়েশন পরবর্তী সময়ে রপ্তানি প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখতে রপ্তানিকারকদের বিদ্যুৎ বিলে ৫-১০ শতাংশ রেয়াত দেওয়া, মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে ১ শতাংশ শুল্ক বহাল রেখে সব ধরনের শুল্ক থেকে অব্যাহতি দেওয়া, বিশেষ ফান্ড গঠন করে কম সুদে ঋণ দেওয়াসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এসব সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আসতে পারে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: সেলিম উদ্দিন বুধবার (২ অক্টোবর) টিবিএসকে বলেন, "মন্ত্রিসভায় জুলাইতে রপ্তানি নীতি অনুমোদনের সময় ব্যবহৃত কিছু শব্দগত বিষয়ে ক্ল্যারিফিকেশন দেওয়ার কথা ছিল। আমরা সেগুলো সম্পন্ন করে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় উপস্থাপনের জন্য পাঠিয়েছি।"
এতে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রায় কোনো পরিবর্তন আনা হচ্ছে কি-না, এমন প্রশ্নে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে টিবিএসকে বলেন, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) যে রপ্তানি তথ্য প্রকাশ করেছে, প্রকৃত রপ্তানির পরিমাণ তার চেয়ে প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার কমে গেছে। গত অর্থবছর প্রকৃত রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৫১ বিলিয়ন ডলার। সেখানে আগামী তিন বছরে, অর্থাৎ ২০২৭ সালে ১১০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি হবে– এমন কল্পনা কেউই করতে পারে না।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পণ্য ও সেবা রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৭.৫০ বিলিয়ন ডলার। এই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। এর পরের দুই অর্থবছরে একই হারে প্রবৃদ্ধি হলে ২০২৭ সাল নাগাদ রপ্তানি আয়ের পরিমাণ প্রায় ৭০ বিলিয়ন ডলার হতে পারে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে টিবিএসকে বলেন, উপদেষ্টা পরিষদ রপ্তানি নীতি পর্যালোচনা করতে চেয়েছেন।
এক কর্মকর্তা জানান, "আমরা হুবুহু নীতিটি উপদেষ্টা পরিষদের সভায় উপস্থাপনের জন্য পাঠিয়েছি। উপদেষ্টা পরিষদ এটি বিশ্লেষণ করে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেবেন।"
এর আগে, রপ্তানি নীতি ২০২১-২৪ প্রণয়ন করে ২০২১ সালের মধ্যে ৮০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। কিন্তু ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫১ বিলিয়ন ডলার।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, উপদেষ্টা পরিষদের সভার আলোচ্যসূচিতে রপ্তানি নীতি ছাড়াও 'পানি সরবরাহ পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ সংশোধন অধ্যাদেশ ২০২৪' এর খসড়া অনুমোদন এবং কাতার ও মালদ্বীপে সাজাপ্রাপ্ত বাংলাদেশিদের ফেরত আনার বিষয়ে দেশ দুটির সঙ্গে স্বাক্ষরের জন্য চুক্তির খসড়া অনুমোদন পেতে পারে।