ট্রাম্পের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হচ্ছেন ফক্স নিউজের হেগসেথ, বিশেষ দায়িত্বে ইলন মাস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) ইলন মাস্ক এবং সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী বিবেক রামাস্বামীকে নতুন গঠিত 'সরকারি দক্ষতা বিভাগ' (ডিপার্টমেন্ট অব গভমেন্ট ইফিশিয়েন্সি) পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছেন। একইসঙ্গে, ফক্স নিউজের উপস্থাপক ও সাবেক সেনাকর্মকর্তা পিট হেগসেথ পেতে যাচ্ছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব।
এ তিনজনই ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে পরিচিত। বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচনে ট্রাম্পকে সমর্থন জানানোয় এই নিয়োগগুলো তাদের প্রতি ট্রাম্পের আস্থা ও সমর্থনের প্রকাশ।
এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য সমর্থন আদায়ে অর্থ ও সময় দুটোই বিনিয়োগ করেছেন টেসলা সিইও ইলন মাস্ক। ট্রাম্পের হয়ে যোগ দিয়েছেন নির্বাচনী সমাবেশে, তার প্রচারণা তহবিলেও ঢেলেছেন অঢেল অর্থ। তাই ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ইলন মাস্ক বড় ধরনের প্রভাব বিস্তার ও সুবিধা আদায় করবেন তা অনেকটা অনুমেয় ছিল।
অন্যদিকে বিবেক ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা। তিনি রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তবে পরে প্রার্থিতা ছেড়ে দিয়ে ট্রাম্পকে সমর্থন দেন।
ট্রাম্পের এক বিবৃতিতে বলা হয়, মাস্ক এবং রামাস্বামী 'আমার প্রশাসনের জন্য সরকারি আমলাতন্ত্র ভাঙার, অতিরিক্ত বিধিনিষেধ কমানোর, অপচয় বন্ধের এবং ফেডারেল সংস্থাগুলোর পুনর্গঠনের পথ প্রশস্ত করবেন।'
এ বিভাগটি সরকার থেকে আলাদাভাবে কাজ করলেও হোয়াইট হাউস ও বাজেট দফতরের সাথে মিলিতভাবে কাজ করবে। ২০২৬ সালের ৪ জুলাই, স্বাধীনতার ঘোষণার ২৫০তম বার্ষিকীতে, এই প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
অন্যদিকে, ফক্স নিউজের উপস্থাপক এবং সাবেক সেনা কর্মকর্তা পিট হেগসেথকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করে ট্রাম্প তার সামরিক সংস্কার প্রতিশ্রুতি আরও দৃঢ় করলেন।
ট্রাম্প, হেগসেথের মনোনয়নের ঘোষণা দিয়ে জানান, 'পিট দৃঢ়চেতা, বুদ্ধিমান এবং আমেরিকা ফার্স্ট নীতিতে (আমেরিকা প্রথম) বিশ্বাসী। পিটের নেতৃত্বে আমাদের সামরিক বাহিনী পুনরায় শক্তিশালী হবে এবং আমেরিকা আর কখনো পিছু হটবে না।'
হেগসেথ পূর্বে সীমিত কিছু নীতিগত অবস্থান প্রকাশ করেছেন, যেখানে তিনি ন্যাটোকে দুর্বল হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং চীনকে প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর প্রভাব বিস্তারের দ্বারপ্রান্তে বলে মন্তব্য করেছেন।
তিনি আরও জানান, ২০২১ সালে সামরিক বাহিনী থেকে তার সরে যাওয়ার পেছনে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় মতাদর্শের জন্য তাকে অবহেলা করা হয়, যা সম্পর্কে তিনি তার বই 'দ্য ওয়ার অন ওয়ারিয়র্স: বিহাইন্ড দ্য বিট্রেয়াল অব দ্য মেন হু কিপ আস ফ্রি'-তে বিস্তারিতভাবে লিখেছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প জুন মাসে ফক্স নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তিনি সেনাবাহিনীর যেসব জেনারেলকে 'ওক' হিসেবে অভিহিত করেছেন, তাদের বরখাস্ত করবেন। সাধারণত বর্ণ ও সামাজিক ন্যায়বিচারকে গুরুত্ব দেয়া কর্মকর্তাদের বোঝাতে 'ওক' শব্দটি ব্যবহার করা হয়, যা প্রগতিশীল নীতির সমালোচনায় রক্ষণশীলরা ব্যবহার করেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে মনোনীত পিট হেগসেথ এই ধরনের বরখাস্তের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
হেগসেথ তার বইয়ে উল্লেখ করেছেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্টের উচিত পেন্টাগনের শীর্ষ নেতৃত্বে ব্যাপক পরিবর্তন আনা, যাতে দেশকে রক্ষায় আমরা প্রস্তুত থাকতে পারি এবং আমাদের শত্রুদের পরাজিত করতে পারি। অনেককেই বরখাস্ত করা প্রয়োজন।' হেগসেথের এই মনোভাব ট্রাম্প প্রশাসনের সামরিক নীতিতে প্রগতিশীল বিরোধী রক্ষণশীল অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এ নিয়োগ ট্রাম্প এবং যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান এয়ার ফোর্স জেনারেল সি কিউ ব্রাউনের মধ্যে সম্ভাব্য দ্বন্দ্বের ইঙ্গিত দিচ্ছে। হেগসেথ পূর্বে ব্রাউনের প্রতি তীব্র সমালোচনা করে বলেন, তিনি বামপন্থী রাজনীতির চরম অবস্থান অনুসরণ করছেন।
এছাড়া সূত্রের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ফ্লোরিডার সিনেটর মার্কো রুবিওকে নিয়োগ দিতে যাচ্ছেন ট্রাম্প। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হতে পারেন ফ্লোরিডার সিনেটর মাইকেল ওয়ালৎস। আর পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থার (ইপিও) প্রধান হচ্ছেন ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের মিত্র লি জেলডিন।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন