চলতি বছরের শেষেই ভ্যাকসিন? ‘লক্ষ্যের প্রায় কাছাকাছি অক্সফোর্ডের টিকা’ জানালেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী
চলতি বছর শেষ হতে হতেই কী নতুন করোনাভাইরাসের টিকা বাজারে পাওয়া যাবে? প্রশ্নটি সকলের মনে। এনিয়ে বেশ আশাবাদী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।
আজ সোমবার (৫ অক্টোবর) তিনি ভ্যাকসিন তৈরির ব্যাপারে এক মন্তব্যে জানান, অ্যাস্ট্রাজেনেকার সহায়তায় গবেষণাধীন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রার্থী টিকা লক্ষ্যটি অর্জনের দ্বারপ্রান্তেই রয়েছে।
''অগ্রগতি দেখতে আমি অক্সফোর্ডের জেনার ইনস্টিটিউড পরিদর্শন করেছি। আস্ট্রাজেনেকার গবেষক দল অসাধারণ কাজ করছেন। সেখানে গেলে আপনার বিস্ময়কর এক সমাধানের কাছাকাছি আসার অনুভূতি হবে। তবে এটাও সত্য বিস্তারিত পরীক্ষা চালিয়ে যাওয়াটাও প্রয়োজন।''
এদিকে টাইম ম্যাগাজিন প্রকাশিত এক প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী যতগুলো কোভিড টিকা গবেষণার কাজ চলছে; তার মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে ফার্মাসিটিক্যাল জায়ান্ট আস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে সহযোগীতায় তৈরি অক্সফোর্ড বিজ্ঞানীদের প্রার্থী টিকাটি। চলতি বছরের ডিসেম্বরে বড়দিনের ছুটি নাগাদ এটি অনুমোদনের ছাড়পত্র পেতে পারে।
সংশ্লিষ্ট ওষুধ প্রশাসনের অনুমোদন পাওয়া মাত্রই গণটিকা কর্মসূচি শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা কর্তৃপক্ষ- এনএইচএস। এব্যাপারে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করার কথা টাইমকে জানিয়েছে সংস্থাটি।
দেশটির সকল পূর্ণবয়স্ক মানুষকে টিকা দিতে ছয় মাস বা তার কম সময় লাগবে, বলে সংস্থাটির একটি অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে। খবর লাইভমিন্টের।
''আমরা প্রায় ছয় মাসে বা তার চাইতেও অনেক কম সময়ে এ লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করছি'' সংশ্লিষ্ট ওই সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
এদিকে, যুক্তরাজ্য সরকার পূর্ণমাত্রায় উৎপাদনের আগেই অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের ১০ কোটি ডোজ ক্রয়ের অগ্রিম চুক্তি করেছে। টিকার সুরক্ষা পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগেই এ উদ্যোগ নেওয়ার মাধ্যমে পরীক্ষায় সফল হলে- সময়ক্ষেপণ না করেই জনগণের জন্য ভ্যাকসিনের পর্যাপ্ত চালান প্রাপ্তি নিশ্চিত করেছে ব্রিটিশ সরকার।
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউড ইতোপূর্বে অক্সফোর্ড এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে তাদের যৌথ গবেষণাধীন প্রার্থী টিকা উৎপাদনের চুক্তি করেছে। সংস্থাটি গত মাসে ভারতে এর তৃতীয় বা শেষ ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালও শুরু করে।
টিকাটি সফল হলে ভারত নিজের চাহিদা মিটিয়ে এটি নিম্ন এবং মধ্য আয়ের দেশগুলোতে রপ্তানি করবে।
পেটেন্ট নিয়ে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট টিকাটি উৎপাদন করার দায়িত্ব পেয়েছে এবং ভারতীয় এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেই বাংলাদেশি কোম্পানি বেক্সিমকো একটি চুক্তি করেছে বলে জানানো হয়।
ইতোপূর্বে গত ২৮ আগস্ট বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, 'ভ্যাকসিনটি নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন পেলে প্রথম যে দেশগুলো ভ্যাকসিন পাবে' বাংলাদেশ হবে তার মধ্যে একটি।
সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি এই ভ্যাকসিন বাংলাদেশের বাজারে শুধুমাত্র বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস-ই সরবরাহ করতে পারবে।
এর আগে ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাই কমিশনার রবার্ট চ্যাটারসন জানান, টিকাটি ব্যবহার উপযোগী প্রমাণিত এবং উৎপাদন শুরু হওয়া মাত্র তা বাংলাদেশ পাবে। ট্রায়াল ছাড়াই টিকাটি বাংলাদেশে সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
ইতোপূর্বে ভারতে দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের অংশ হিসেবে প্রায় ১৬শ' জন স্বেচ্ছাসেবীর দেহে প্রার্থী টিকার কার্যকারিতা ও সুরক্ষা পরীক্ষা করা হয়েছে। অংশগ্রহণকারী স্বেচ্ছাসেবকদের বয়স ছিল ১৮ থেকে ৫৫ বছরের মধ্যে।
দ্বিতীয় পর্যায়ের পরীক্ষায় প্রার্থী টিকাটি সকল বয়সের ব্যক্তির দেহে ইতিবাচক রোগ প্রতিরোধ সক্ষমতা দেখিয়েছিল, বলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিখ্যাত সাময়িকী ল্যানসেট জার্নালে প্রকাশিত এক নিবন্ধে জানানো হয়।