বোতলজাত সয়াবিন তেল সংকটের ধাক্কা খুচরায়, কমেছে পেঁয়াজ ও আলুর দাম
বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট দেখা দিয়েছে। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি পর্যায়েই পর্যাপ্ত পরিমাণে তেল কিনতে পারছেন না তারা।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের প্রায় ১০ জন বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১০ দিন ধরে তারা বোতলজাত তেলের পাইকারি সরবরাহ কম পাচ্ছেন।
ইয়াসিন জেনারেল স্টোরের বিক্রয় সহকারী আলী হোসেন টিবিএসকে বলেন, 'বোতলজাত সয়াবিন তেল গত ১০ দিন ধরে চাহিদার অর্ধেক পাচ্ছি।'
বর্তমানে বাজারে এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬৭ টাকায়।
আনোয়ার ট্রেডার্সের বিক্রেতা মোহম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, 'গতকাল (বৃহস্পতিবার) থেকে আমরা বোতলজাত তেল পাচ্ছি না। প্রায় ১০ দিন ধরে এ সংকট তেলে। তাই আমাদের এক লিটারের তেল পাইকারি কিনতে হচ্ছে ১৬৫ টাকায়। এরপর বিক্রিতে আমাদের খরচ আছে। আমাদের তেল বিক্রিতে লাভ হচ্ছে না। ক্রেতারা তেল না পেলে অন্য পণ্য কিনতে চান না। তাই তেলে লাভ না হলেও রাখি।'
বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ভোজ্য তেলের ওপর বর্তমানে প্রযোজ্য আমদানি পর্যায়ের মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। ১৯ নভেম্বর এ-সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
এর আগে তেলের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে ১৬ অক্টোবর পরিশোধিত ও অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেল সরবরাহের ক্ষেত্রে স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ এবং স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে আরোপনীয় ৫ শতাংশ ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়। ফলে বর্তমানে কেবল আমদানি পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট বলবৎ রয়েছে।
কমেছে পেঁয়াজ-আলুর দাম
অন্যান্য পণ্যের মধ্যে দেশি পেঁয়াজের দাম এক মাসের ব্যবধানে কেজিতে ২০ টাকা কমে প্রতি কেজি ১৩০-১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, পেঁয়াজের কলি ওঠায় এবং আমদানি করা পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ায় কমতে শুরু করেছে পণ্যটির দাম। সামনে দাম আরও কমার আশা প্রকাশ করেন তারা।
কারওয়ান বাজারের পাইকরি পেঁয়াজ বিক্রেতা মোহম্মদ নুরুল ইসলাম বলেন, 'গত এক মাসের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। ভারত, পাকিস্তান, মিশর থেকে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। তার ওপর বাজারে পেঁয়াজের কলি ওঠায় দাম কমেছে। এখন দেশি পেঁয়াজের কেরি ১২০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি ৯০ টাকা ও মিসরের পেঁয়াজ ৮৪ টাকা কেজি।'
বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ খুচরা বিক্রি হতে দেখা গেছে ১৩০-১৩৫ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০-১০৫ টাকায়। আর পেঁয়াজের কলি প্রতি কেজি ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে নতুন আলুর দাম কেজিতে ২০ টাকা কমেছে সপ্তাহের ব্যবধানে। প্রতি কেজি নতুন আলু ৯০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছ। আর পুরোনো আলুর কেজি ৭৫ টাকা।
শীতকালীন সবজির সরবরাহ বাড়লেও দাম বেশি
রাজধানীর কাঁচাবাজারে শীতের সবজির সরবরাহ বেড়েছে, তবে দাম গত বছরের তুলনায় বেশি।
কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা আব্দুল আউয়াল বলেন, 'সম্প্রতি দেশের প্রায় ১৩টি জেলায় বন্যা ও সারা দেশে বৃষ্টির কারণে অনেক শাকসবজির খেত নষ্ট হয়ে গেছে। তাই অনেক জায়গায় নতুন করে সবজি খেত তৈরি করতে হয়েছে কৃষককে।'
তিনি বলেন, 'গত বছর এই সময় যে আকারের ফুলকপি কিনেছি ২০ টাকা প্রতি পিস, এখন সেটা কিনতে হচ্ছে ৩০ টাকায়।'
বাজার ঘুরে দেখা যায়, মানভেদে প্রতি কেজি বেগুন ৬০-৮০ টাকা, করলা ৭০-৯০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৬০ টাকা, বরবটি ৭০ টাকা, মূলা ৪০ টাকা, মানভেদে প্রতি পিস ফুলকপি ৪০-৫০ টাকা, প্রতি পিস বাঁধাকপি ৪০-৪৫ টাকা এবং প্রতি পিস লাউ ৭০-৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।