ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতির পর যুক্তরাষ্ট্রে ফের চালু হলো টিকটক
যুক্তরাষ্ট্রে ১৭০ মিলিয়ন ব্যবহারকারীর জন্য ফের চালু হয়েছে টিকটক। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার দায়িত্ব গ্রহণের পর নির্বাহী আদেশ জারি করে টিকটকে সাময়িকভাবে নিষেধাজ্ঞা থেকে রেহাই দেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর অ্যাপটি চালু হলো।
শনিবার সন্ধ্যায় জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত আইনের ভিত্তিতে টিকটক নিষিদ্ধ হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাপটি কাজ করা বন্ধ করে দেয়।
তবে রোববার, ট্রাম্প বলেন তিনি আইনটি কার্যকার হওয়ার সময় পিছিয়ে দেয়ার পাশাপাশি আলোচনার জন্য আরও সময় দেবেন। এরপর টিকটক জানায়, তারা 'সার্ভিস পুনরুদ্ধারের' প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
এর কিছুক্ষণ পরই অ্যাপটি আবার কাজ করতে শুরু করে। সেইসঙ্গে একটি পপআপ বার্তায় ট্রাম্পের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো হয়। এক বিবৃতিতে কোম্পানিটি ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছে, টিকটক যাতে যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘমেয়াদে চালু রাখা যায়, সেজন্য তার ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করবে।
এদিকে সোমবার ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে টিকটকের সিইও শো চিউ-এর উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
ট্রুথ সোশ্যাল-এ (ট্রাম্পের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম) ট্রাম্প রোববার লিখেছেন, 'আমি কোম্পানিগুলোকে বলছি, টিকটক যেন বন্ধ না থাকে! আমি সোমবার একটি নির্বাহী আদেশ জারি করব, যাতে আইন কার্যকর পিছিয়ে যায় এবং আমরা জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার জন্য একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে পারি।'
যুক্তরাষ্ট্রে চীনা কোম্পানি বাইটড্যান্সের মালিকানাধীন টিকটক নিষিদ্ধ করার একটি আইন সুপ্রিম কোর্টেও বহাল রেখেছে। নতুন এই আইন অনুযায়ী, দেশটিতে ১৯ জানুয়ারির মধ্যে টিকটকের মালিকানা যুক্তরাষ্ট্র বা তার কোনো মিত্রের কাছে বিক্রি না করলে কোম্পানিটির ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।
ট্রাম্প কীভাবে ইতিমধ্যে কার্যকর আইনের বাস্তবায়ন বিলম্বিত করতে পারবেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাম্প নির্বাহী আদেশ দিলে তার প্রশাসন নিষেধাজ্ঞাটি কার্যকর করবে না।
এ ঘোষণা ট্রাম্পের অবস্থানে বড় পরিবর্তন। কারণ আগে তিনি টিকটক নিষিদ্ধ করার পক্ষে ছিলেন। তবে সম্প্রতি অ্যাপটির প্রতি ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়ে বলেছেন, গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণায় তার ভিডিওগুলো টিকটকে শত কোটি ভিউ পেয়েছে।
এদিকে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন আগেই জানিয়েছিল, তারা ক্ষমতা ছাড়ার আগে আইনটি বাস্তবায়ন করবে না, ট্রাম্প প্রশাসনের ওপর এ কাজ ছেড়ে দেবে।
তবে টিকটক শনিবার সন্ধ্যায়ই নিজ উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের পরিষেবা বন্ধ করে দেয়। পরে ট্রাম্পের আশ্বাসের পর রোববার আবার চালু হলো।
সংক্ষিপ্ত ভিডিও আপলোডের প্ল্যাটফর্ম টিকটক যুক্তরাষ্ট্রে দারুণ জনপ্রিয়। মার্কিন রাজনৈতিক প্রচারণায় তরুণ ভোটারদের কাছে পৌঁছানোর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে এটি।
গত এপ্রিল মাসে কংগ্রেসে গৃহীত একটি আইনে বলা হয়েছিল, বাইটড্যান্স তাদের মার্কিন কার্যক্রম বিক্রি না করহলে অ্যাপটিকে অ্যাপ স্টোর ও ওয়েব-হোস্টিং সার্ভার থেকে সরিয়ে ফেলা হবে।
টিকটক যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টে যুক্তি দিয়েছিল, এই আইন ব্যবহারকারীদের বাকস্বাধীনতার অধিকার লঙ্ঘন করে।
অবশ্য রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট উভয় পক্ষের সমর্থনে কংগ্রেসে পাশ হওয়া এই আইন সুপ্রিম কোর্ট সর্বসম্মতভাবে বহাল রাখে।
টিকটক ইস্যুতে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার দলের সদস্যদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তার গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়ে ট্রাম্পের অবস্থানের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন তার দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতা।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প নির্বাহী আদেশ দিয়ে টিকটকের নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করলে সেটি আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।
ইতিমধ্যেই কয়েকটি রাজ্য টিকটকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এর ফলে জাতীয়ভাবে অ্যাপটি চালু থাকলেও স্থানীয়ভাবে নিষিদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে।