‘সব আইন-কানুন মেনে মুনাফা করা সম্ভব, এসএমসি এন্টারপ্রাইজ তার প্রমাণ’
২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় পাঁচ দশক ধরে জনকল্যাণমূলক উদ্যোগ নিয়ে কাজ করা এসএমসি-র (সোশ্যাল মার্কেটিং কোম্পানি) বাণিজ্যিক শাখা এসএমসি এন্টারপ্রাইজ। চলতি বছর কল্যাণমূলক সংস্থা হিসেবে এসএমসির ৫০ বছর পূর্তি হয়েছে। এ সময়ে প্রতিষ্ঠানটি অনেক সাফল্য অর্জন করেছে।
এসএমসসির স্বনির্ভর হয়ে ওঠার যাত্রা, দাতা নির্ভরতা থেকে লাভজনক উদ্যোগে রূপান্তরিত হওয়া নিয়ে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে কথা বলেছেন এসএমসি এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েফ নাসির। কোম্পানিটির সর্বাধিক বিক্রিত পণ্য, বাজারের চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যতের প্রবৃদ্ধির পরিকল্পনা নিয়েও কথা বলেছেন তিনি।
গত ৫০ বছরে এসএমসির অর্জনগুলো নিয়ে বলবেন?
পঞ্চাশ বছর আগে, ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশে সোশ্যাল মার্কেটিং কর্মসূচি শুরু করে এসএমসি। প্রথমে এটি একটি ছোট পরিবার পরিকল্পনা সোশ্যাল মার্কেটিং কর্মসূচি দিয়ে শুরু হয়েছিল। এ কর্মসূচি ছিল সীমিত পরিসরে। বিদেশি কয়েকটি দাতা সংস্থা থেকে আমরা কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা পেয়েছিলাম।
সেই সময়ে দেশে একটি সমস্যা ছিল—সেটা হলো উচ্চমাত্রায় সন্তান জন্মদান। চ্যালেঞ্জ ছিল এটিকে একটি যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে নিয়ে আসা। বহু চেষ্টায় এই ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি এসেছে এবং এখানে এসএমসি একটি বড় ভূমিকা রেখেছে। বর্তমানে পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ে যত রকম সেবা আছে, এসএমসি নেটওয়ার্ক তার ৫০ শতাংশ দেয়।
পরে ১৯৮০-র দশকে ডায়রিয়া মহামারি আকার ধারণ করে। এ সমস্যা মোকাবিলায় এসএমসি যেটা করেছে, ওরাল স্যালাইনকে ব্যাপকভাবে সহজলভ্য করেছে। মানুষের হাতের কাছে যেন ওরাল স্যালাইন পাওয়া যায়, সেই ব্যবস্থা করেছে।
আমাদের ছোটবেলায় ছিল একমুঠ গুড়, একচিমটি লবণ দিয়ে স্যালাইন বানানো। টিভিতে এটা দেখাত। সেই সময় স্যালাইন মানুষের কাছে পৌঁছানো একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। তখন ডব্লিউএইচও ও আইসিডিডিআর,বি-র সহযোগিতায় এসএমসি একবার ব্যবহারযোগ্য ওরাল স্যালাইনের কনজ্যুমার প্যাক নিয়ে আসে।
মূলত ওষুধপণ্য হলেও এটি এখন মুদি দোকানেও সহজলভ্য। এর ফলে স্যালাইন ব্যাপকভাবে সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। এটা এসএমসির জন্য এক বিশাল অর্জন।
এসএমসি এন্টারপ্রাইজ কেমন চলছে?
আমরা ২০১৪ সালে আমাদের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করি। এরপর থেকেই এসএমসি এন্টারপ্রাইজ অত্যন্ত সফল উদ্যোগ হয়ে উঠেছে। বর্তমানে আমাদের সাড়ে ৪ হাজার কর্মী আছেন। আর আমরা দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি অর্জন করছি।
এসএমসি কি এখনও বিদেশি সহায়তানির্ভর?
একসময় বিদেশি সহায়তার ওপর নির্ভর করে ছোট পরিসরে কার্যক্রম শুরু করলেও এখন আমরা অনেকটাই স্বনির্ভর। আমাদের কার্যক্রম আমরা নিজেরাই পরিচালনা করতে পারি।
গত ৫০ বছরে আমরা একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছি, যা মা ও শিশুর সেবা এবং শিশুর বিকাশ নিয়ে কাজ করা ১৫ হাজারের বেশি সেবাদানকারীকে সহায়তা করে। এখন এসব কর্মকাণ্ডের ব্যয় আমরা নিজেদের অর্থেই মিটাই।
আমাদের বাণিজ্যিক কার্যক্রমের মাধ্যমে কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলো পরিচালিত হয়। আর যেকোনো উদ্বৃত্ত অর্থ ফের ব্যবসায় বিনিয়োগ করা হয়।
তাছাড়া এসএমসি কিছু বিদেশি দাতা সংস্থার সঙ্গে অংশীদারত্বমূলক প্রকল্পও পরিচালনা করছে।
এসএমসি এন্টারপ্রাইজের বিশেষত্ব কী?
এসএমসি এন্টারপ্রাইজ আসলে একটি অনন্য প্রতিষ্ঠান, কারণ আমরা দেখিয়েছি, কঠোরভাবে সব নিয়মকানুন মেনে চলার পাশাপাশি সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করেও এদেশে লাভজনক ব্যবসা করা সম্ভব।
আমাদের শক্তি হলো, আমরা দেশের সব আইন-কানুন মেনে বাজারের বড় বড় প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকছি।
আমি বলব, আমাদের তিনটি মূলভিত্তি আছে—আমরা কড়াভাবে নিয়মকানুন মেনে চলি, গুণগত মানের ব্যাপারে আপসহীন এবং এই নীতিগুলোর ভিত্তিতেই আমরা মুনাফা করছি।
সম্পূর্ণ কর দিয়েও কীভাবে ভালো মুনাফা করা সম্ভব?
প্রথমে বলব, সদিচ্ছা। আর দ্বিতীয়টা হচ্ছে, ক্রেতা কী চায়, সেটা আমরা বুঝি। বুঝি তাদের প্রয়োজনটা কী।
এসএমসির সবচেয়ে বেশি বিক্রিত পণ্য কী কী?
আমাদের অনেকগুলো সফল ব্র্যান্ড রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি ব্র্যান্ডের বার্ষিক টার্নওভার ১০০ কোটি টাকারও বেশি।
এর মধ্যে যদি আমরা একটা যুগান্তকারী পণ্যের কথা বলতে চাই, তাহলে আমি বলব ওরস্যালাইন। পরেরটি বলব জয়া স্যানিটারি ন্যাপকিন। এটার ব্যাপক গ্রহমযোগ্যতা, বিশেষ করে গ্রাম অঞ্চলে। তারপর আছে এসএমসি প্লাস ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকস, স্মাইল বেবি ডায়াপার এবং টেস্ট মি ইনস্ট্যান্ট সফট ড্রিংক পাউডার।
বাজারে এখন এসএমসির মোট কতগুলো পণ্য আছে?
বাজারে এখন এসএমসির ৩০টিরও বেশি পণ্য রয়েছে। আমরা আরও বেশ কয়েকটি নতুন ভোক্তাপণ্য বাজারে আনার পরিকল্পনা করছি।
এসএমসি কি কখনও ব্যর্থ হয়েছে?
এসএমসির অনেক সাফল্যের গল্প থাকলেও, কিছু ব্যর্থতা অবশ্যই রয়েছে।
আসলে কাজ করলে সফলতা বা ব্যার্থতা আসবেই। কিছু যদি না করেন, তাহলে হয়তো কোনো ব্যর্থতা থাকবে না। এসএমসির ক্ষেত্রে ব্যর্থতা মাত্র ৫ শতাংশ, যেটা আসলে একেবারে নগণ্য।
একটা উদাহরণ হচ্ছে, আমরা আগে বোতলজাত পানি বাজারে এনেছিলাম। সেখানে আমরা সফল হতে পারিনি। আমরা পরে পানিটা বন্ধ করে দিয়েছি। এছাড়া আরও কয়েকটা পণ্য আমরা বের করেছিলাম, কিন্তু সেগুলো মার্কেটে ভাল করেনি।