দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে নেতৃত্ব দিবে ভারত ও বাংলাদেশ, বলছে বিশ্বব্যাংক
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথ সহজেই স্বাভাবিক হয়ে উঠবে বলে ধারণা করছে বিশ্বব্যাংক। মহামারির সময় দেশগুলো বৈষম্য বৃদ্ধির পাশাপাশি শিক্ষা ব্যবস্থায় পিছিয়ে যাওয়াসহ নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। তবে, দ্রুতই অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে দেশগুলো পরিস্থিতি সামলে উঠবে বলে আশা করা যায়।
২০২০ সালে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ পর্যন্ত অর্থনৈতিক সংকোচন ঘটলেও, এ বছর প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ২ শতাংশ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বুধবার বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এই পূর্বাভাস দেওয়া হয়। প্রতিবেদনটির তথ্যানুসারে, দক্ষিণ এশিয়াকে ঐতিহাসিক প্রবৃদ্ধির হারে ফিরে যেতে সাহায্য করবে ভারত এবং বাংলাদেশ।
লকডাউনের মধ্য দিয়ে ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনা এবং সহায়ক রাজস্ব ও মুদ্রা নীতির সমন্বয় অঞ্চলটিকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সাহায্য করেছে। তবে পুনরুদ্ধারের বিষয়ে অনিশ্চয়তা থাকছে বলেও সতর্ক বার্তা দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদী ঝুঁকির সম্ভাবনাও উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।
বিশ্ব ব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের সহ-সভাপতি হার্টউইগ শাফার জানান, "মহামারি এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে টিকাদান কার্যক্রম বাড়াতে হবে। অধিকতর সহনশীল এবং সর্বব্যাপী ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে দেশগুলোকে বিচক্ষণতার সাথে সীমিত সম্পদ ব্যবহারের মধ্য দিয়ে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে হবে।"
মহামারির কারণে স্কুলগুলো বন্ধ রাখার প্রভাব সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দৃশ্যমান না হলেও ভবিষ্যতকে প্রভাবিত করতে চলেছে। শিক্ষা ব্যবস্থা সীমিত হয়ে পড়ায় পাঠদানে ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে। পরিণামে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিতে বড় ধরনের সংকটের আভাস দিচ্ছে বিশ্ব ব্যাংক। বিদ্যালয় থেকে প্রায় ৫৫ লাখ শিশু ঝড়ে পড়ার দরুণ ভবিষ্যতে আয়ের পরিমাণ ১ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি কমতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি।
প্রতিবেদনটিতে উল্লেখিত দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতির অন্যান্য দুর্বল দিকগুলো তুলে ধরা হল-
- মানব সম্পদ সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অবস্থান সাধারণত নিচের দিকে থাকে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি হলেও মানব সম্পদ সূচকে দেশগুলো পিছিয়ে থাকতে পারে।
- মহামারির কারণে অনিশ্চিত কর্মসংস্থানের উপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর আয় কমে যেতে পারে। দক্ষিণ এশিয়ার কর্মজীবীদের ৮৫ শতাংশের অধিক মানুষের জীবিকাই অনিশ্চিত। এই জনগোষ্ঠীর আয় যথাযথভাবে হিসাব করতে ব্যর্থ হলে জিডিপির মানে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
- জেন্ডার বৈষম্য দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। মহামারির সময় কর্মসংস্থানের ধাক্কায় নারী ও পুরুষ সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও নারীদের উপর এর প্রভাব দীর্ঘকালীন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাংলাদেশে পরিচালিত একটি জরিপের তথ্যানুযায়ী পুরুষদের কর্মসংস্থান করোনা-পূর্ব অবস্থার কাছাকাছি ফিরে গেলেও, নারীদের জন্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি।
- পরিপূর্ণ অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য বৈষম্য এবং ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে হবে। সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা আরও সর্বব্যাপী হওয়া প্রয়োজন। এছাড়া, অনিশ্চিত কর্মীদের মূলধারার অর্থনীতিতে সংযুক্ত করতে আরও ভালো পরিকল্পনার প্রয়োজন।
- সূত্র: ব্লুমবার্গ