বন্দরের প্রস্তুতি থাকলেও ছুটিতে কন্টেইনার ডেলিভারি নেয়নি আমদানিকারকরা
আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের সাপ্লাই চেইন নির্বিঘ্ন রাখতে ঈদের ছুটিকালীন সময়ে বন্দরের কার্যক্রম শতভাগ সচল ছিল। এই লক্ষে বন্দর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে বিশেষ বৈঠকের পাশাপাশি বন্দর কর্তৃপক্ষ ১৩ দফা নির্দেশনাও জারি করে।
কিন্তু এতসব উদ্যোগও কাজে আসেনি কন্টেইনার ডেলিভারির ক্ষেত্রে। বরং ঈদের আগে এবং পরে অস্বাভাবিক কমেছে ডেলিভারির সংখ্যা। ঈদের আগের দিন ডেলিভারি কমে যায় স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় প্রায় ৯০ ভাগ। ঈদের দিন ডেলিভারি নেমে আসে শূন্যের কোটায়। এর ফলে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার জটের সৃষ্টি হচ্ছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, ঈদের ছুটিতে বন্দরের কার্যক্রম চালু রাখার ক্ষেত্রে সব ধরনের প্রস্তুতি ছিল বন্দরের। কিন্তু বন্দর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো সচল কিংবা আমদানিকারকরা কন্টেইনার ডেলিভারি না নেওয়ায় এমন পরিস্থিতি হয়েছে। তবে মঙ্গলবার (১৮ মে) থেকে ডেলিভারি কার্যক্রম স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে বলে দাবী বন্দর কর্তৃপক্ষের।
অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের ছুটিতে কারখানা, গুদাম বন্ধ থাকে। এই সময়ে তারা পণ্য ডেলিভারি নিয়ে কোথায় রাখবেন। তাই তারা ঈদের ছুটিকালীন সময়ে পণ্যের ডেলিভারি নেননা।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো: ওমর ফারুক টিবিএসকে বলেন, ঈদের ছুটিকালীনর সময়ে আমদানিকারক পণ্য ডেলিভারি নেননি। তাই ডেলিভারির সংখ্যা এই সময়ে স্বাভাবিকের তুলনায় কমেছে। ঈদের তিনদিন কন্টেইনার ডেলিভারি কমলেও ১৮ মে থেকে স্বাভাবিক হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত বন্দরের জেটিতে কন্টেইনার খালাস এবং জাহাজীকরণ করছিল ১০ টি জাহাজ। জেটিতে ভেড়ার জন্য বার্হিনোঙ্গরে ১৩ টি জাহাজ অপেক্ষায় আছে ।
এদিকে বন্দরের পাাশাপাশি ঈদের ছুটিতে বেসরকারী অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপোগুলোতেও (আইসিডি) আমদানি পণ্যের কন্টেইনার ডেলিভারি হয়নি। মঙ্গলবার পর্যন্ত স্বাভাবিক হয়নি ডেলিভারি পরিস্থিতি।
বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো এসোসিয়েশন-বিকডার মহাসচিব রুহুল আমিন শিকদার বলেন, বন্দরের নির্দেশনা অনুযায়ী ঈদের ছুটিতে ১৯টি বেসরকারী আইসিডির কার্যক্রম শতভাগ চালু ছিল। ঈদের আগের দিন থেকে বন্ধ হয়ে যায় ডেলিভারি। মঙ্গলবার (১৮ মে) দুপুর পর্যন্ত ডেলিভারি স্বাভাবিক হয়নি।
বন্দরের পাশাপাশি ১৯টি বেসরকারি আইসিডি থেকে ভোগ্যপণ্য সহ ৩৮ ধরনের আমদানি পণ্য আইসিডি থেকে ডেলিভারি দেওয়া হয়। এছাড়া শতভাগ রপ্তানি পণ্যের কন্টেইনার বোঝাই হয় আইসিডি থেকে। ১৯টি আইসিডিতে কন্টেইনার ধারণ সক্ষমতা ৭৭৭০০ টিইউএস'। মঙ্গলবার পর্যন্ত আইসিডিগুলোতে ছিল খালি কন্টেইনার ৩২৫০০, রপ্তানি পণ্যবাহী কন্টেইনার ৬৭৪০ এবং আমদানি পণ্যবাহী ৭০০০ টিইউএস কন্টেইনার।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, ঈদের ছুটিকালীন সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি পণ্যের ক্ষেত্রে সকল ধরনের ডেলিভারি কার্যক্রমের জন্য কাস্টম হাউস পর্যাপ্ত কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগসহ সার্বিক সুবিধাদির ব্যবস্থা রাখা, আমদানি রপ্তানির সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের শাখা এবং বন্দর অভ্যন্তরে স্থিত ব্যাংকের বুথ সমূহ খোলা রাখতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুরোধ করা হয়। এছাড়া সিএন্ডএফ এজেন্টস, শিপিং এজেন্টস, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার এসোসিয়েশন, বেসরকারী আইসিডি, বার্থ অপারেটর, টার্মিনাল অপারেটর, শিপ হ্যান্ডেলিং অপারেটর, চট্টগ্রাম চেম্বার এবং বন্দর সংশ্লিষ্ট সকল স্টেক হোল্ডার প্রতিনিধিদের তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু রাখার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছিল।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, কন্টেইনার ডেলিভারির হিসাব ধরা হয় সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী দিন সকাল ৮টা পর্যন্ত। এই হিসেবে গত ১২ মে ৩৫১৯ টিইউস, ১৩ মে ৩৬৫০ টিইউস কন্টেইনার ডেলিভারি হয়। ঈদের আগের দিন থেকে অস্বাভাবিক কমে যায় কন্টেইনার ডেলিভারি সংখ্যা। ১৪ তারিখ সকাল ৮ টা পর্যন্ত কন্টেইনার ডেলিভারি হয় মাত্র ৪৮১ টিইউস কন্টেইনার। বন্দরের নির্দেশনা অনুযায়ী ঈদের দিন শুধুমাত্র এক শিফট বা ৮ ঘন্টা কার্যক্রম বন্ধ থাকার ঘোষণা থাকলেও মূলত এইদিন কোন কন্টেইনার ডেলিভারি হয়নি। ১৫মে সকাল ৮টা পর্যন্ত কন্টেইনার ডেলিভারির সংখ্যা শূন্য। এই সময়ে জাহাজ থেকে নামেনি আমদানি কন্টেইনারও।
১৬ মে সকাল ৮টা পর্যন্ত কন্টেইনার ডেলিভারি হয় ৭২১ টিইউস এবং ১৭ মে সকাল ৮ টা পর্যন্ত ডেলিভারি হয় ২১৪০ টিইউস কন্টেইনার।
চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেইনার ডেলিভারির ধারণ ক্ষমতা ৪৯০১৮। বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে ধারণ ক্ষমতার ১৫ ভাগ খালি রাখতে হয়। ১৫ মে বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেইনার ছিল ৩৬৯৯০ টিইউস কন্টেইনার। ১ দিনের ব্যবধানে ১৬ মে ৩৪১৪ টি কন্টেইনার বেড়ে মোট কন্টেইনার সংখ্যা দাড়ায় ৪০৪০৪টি। ১৭ এপ্রিল বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেইনারের সংখ্যা ছিলো ৪০৩৬০টি।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, বন্দরের নির্দেশনা অনুযায়ী শিপিং এজেন্টের কার্যক্রম সচল ছিল। কিন্তু আমদানিকারকরা পণ্য ডেলিভারি না নেওয়ায় বন্দর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো চালু রেখেও কোন ফল আসেনি। অনেক আমদানিকারক ঈদের ছুটিতে বন্দরের ইয়ার্ডকে গুদাম হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। তাই ভবিষ্যতে ঈদের ছুটিতে বন্দরের কার্যক্রম চালু রাখার সুফল পেতে এসব বিষয়গুলোকে বিবেচনায় আনতে হবে।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ঈদে প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মীরা ছুটিতে থাকে। বন্ধ থাকে কারখানা এবং গুদাম। পণ্য ডেলিভারি নিতে কারখানা বা গুদাম চালু রাখার সুযোগ নেই। তাই আমদানিকারকরা এই সময়ে বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারি নিতে পারেনা।