আংশিক রপ্তানিকারকদের জন্য বন্ড সুবিধা আসছে
পণ্য উৎপাদনে মূলধনী ব্যয় কমিয়ে, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য প্রতিযোগী সক্ষমতা বাড়াতে রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণে- শতভাগ রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের মতোই আংশিক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে শতভাগ ব্যাংক গ্যারান্টির বিপরীতে বন্ডেড ওয়্যারহাউজ সুবিধা দিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশন।
কমিশন বলেছে, ব্যাংক গ্যারান্টির বিপরীতে বন্ড সুবিধা দেওয়া হলে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে মূলধন প্রবাহ বাড়বে, উৎপাদন ব্যয় কমবে; রপ্তানির লিডটাইমও হ্রাস পাবে। এতে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগী মূল্যে রপ্তানির সুযোগ তৈরি হবে, বাড়বে রপ্তানি আয়। অন্যদিকে, রাজস্ব আদায়েও গতি বাড়বে, বন্ডেড ওয়্যারহাউজের পণ্য খোলাবাজারে বিক্রিও বন্ধ হবে।
কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এইচএস কোড চার ডিজিট লেবেলে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য প্রায় ৭৫০টি। এর মধ্যে বস্ত্রখাতের পণ্য ৪৩টি এবং স্থানীয় কাঁচামাল নির্ভর পণ্য ৪৮টি। বাকি ৬৫৯টি আংশিক রপ্তানিমুখী শিল্প পণ্য, যা আয়রন অ্যান্ড স্টিল, রাসায়নিক পণ্য, ইলেক্ট্রনিক্স অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল পণ্য এবং ফার্নিচার খাতের। ২৫-৬৫ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করে এসব খাতের কাঁচামালের প্রায় ৮০-৯০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। শিল্পখাতগুলোর গড় স্থানীয় মূল্য সংযোজনের হার ৩৫-৭০ শতাংশ।
বিদ্যমান ডিউটি ড্র-ব্যাক পদ্ধতির বদলে ব্যাংক গ্যারান্টির বিপরীতে বন্ড সুবিধা দেওয়া হলে কাঁচামাল আমদানি নির্ভর এসব শিল্পের ৬৫৯টি পণ্য উৎপাদন মূলধনী ব্যয় কমবে, যা রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণে খুবই 'অপরিহার্য ও সময়ের দাবি।'
সীমিত পণ্যের উপর অতি-নির্ভরতা বাংলাদেশের রপ্তানিখাতের প্রধান দূর্বলতা ও বাংলাদেশের 'অর্থনীতির দুষ্ট চক্র' উল্লেখ করে ট্যারিফ কমিশন বলেছে, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভিয়েতনামও স্থানীয় শিল্পের বিকাশ ও রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণে এ ধরণের সুবিধা দিয়ে আসছে।
বিদ্যমান পদ্ধতিতে শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্প বন্ড সুবিধায় বিনাশুল্কে কাঁচামাল আমদানি করছে। যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানের তাদের উৎপাদিত পণ্য দেশের বাজারে বিক্রি করার পাশাপাশি রপ্তানিও করেন, এ ধরনের আংশিক রপ্তানিকারকদের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ককর পরিশোধ করতে হয়। পণ্য রপ্তানি করার পর কি পরিমাণ রপ্তানি করেছে তা অডিট করে পরিশোধিত শুল্ককর ফেরত দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এতে ৪-৫ বছর লেগে যায় বলে কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
রপ্তানিকারকের মূলধন এভাবে আটকে থাকায় উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যায়। শতভাগ ব্যাংক গ্যারান্টির বিপরীতে বন্ড সুবিধায় কাঁচামাল আমদানি করতে পারলে রপ্তানির পর ব্যাংক গ্যারান্টির অর্থ ফেরত নিতে পারবেন রপ্তানিকারকরা। আর রপ্তানি না হলে ব্যাংক গ্যারান্টি থেকে শুল্ককর নগদে আদায় করতে পারবে এনবিআর। এতে রাজস্ব আয়েও গতি বাড়বে।
২৩.৮২ কোটি টাকা শুল্ককর পরিশোধ করে অপরিশোধিত ভোজ্যতেল আমদানির পর তা পরিশোধন করে ২০১৮ সাল থেকে ২০২০ পর্যন্ত রপ্তানি করেছে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ।
গ্রুপটির চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল গতবছর বাণিজ্য সচিব বরাবর চিঠি লিখে বলেছেন, পরিশোধিত শুল্ককর ফেরত পাওয়ার জন্য যথা নিয়মে আবেদন করলেও- তা পাচ্ছেন না। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ড্র-ব্যাকে বিলম্বের কারণে শিল্প প্রতিষ্ঠানে তারল্য সংকট তৈরি হচ্ছে এবং রপ্তানির ক্ষেত্রে উৎসাহ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা তৈরি পোশাক আমদানির ক্ষেত্রে কোটা প্রথা আরোপ করায় বাংলাদেশের উদ্বৃত্ত উৎপাদন ক্ষমতা ব্যবহারের স্বার্থে ১৯৯৭ সালে খাতটির জন্য বিশেষ বন্ড সুবিধা প্রবর্তন করে সরকার। এতে অগ্র-পশ্চাৎ শিল্পসহ খাতটি বিকশিত হয়েছে। বন্ড সুবিধাপ্রাপ্ত তৈরি পোশাক পণ্যগুলো রপ্তানি বাণিজ্যে উচ্চহারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করলেও, কাঁচামাল আমদানি নির্ভর বন্ড সুবিধা বঞ্চিত ৬৫৯টি আংশিক রপ্তানিমুখী পণ্য রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ৮-৯ শতাংশের মধ্যেই সীমিত থাকছে।
বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান ও এসোসিয়েশন ডিউটি ড্র-ব্যাক পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যার কথা তুলে ধরে রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হওয়ার কথা জানানোর প্রেক্ষিতে গত মার্চে একটি বৈঠক করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তার প্রেক্ষিতে রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণে শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্পের মতো আংশিক রপ্তানিকারকদেরও ব্যাংক গ্যারান্টির বিপরীতে বন্ড সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনসহ মতামত দিতে ট্যারিফ কমিশনকে অনুরোধ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গত ২২ জুন এ বিষয়ে বাণিজ্য সচিবের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে ট্যারিফ কমিশন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রপ্তানি বৃদ্ধির মাধ্যমে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে হলে বাংলাদেশের রপ্তানিযোগ্য পণ্যের বহুমুখীকরণ অতীব জরুরি। বিদ্যমান ডিউটি ড্র-ব্যাক সুবিধায় তা মোটেই সম্ভব হচ্ছে না। তাই রপ্তানি আয় বাড়াতে তৈরি পোশাক শিল্পের মতো আংশিক রপ্তানিমুখী শিল্পেও বন্ড সুবিধা অপরিহার্য।
স্থানীয় উৎপাদকদের বন্ড সুবিধা দেওয়া হলে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়বে উল্লেখ করে ট্যারিফ কমিশন বলেছে, তৈরি পোশাক ও বস্ত্রখাত সংশ্লেষে গড়ে উঠা অগ্র-পশ্চাৎ শিল্পে কর্মসংস্থানসহ জিডিপিতে মোট আর্থিক অবদানের পরিমাণ রপ্তানিমুখী বস্ত্রখাতের আমদানি করা কাঁচামালের ওপর আরোপিত শুল্ককরের তুলনায় বহুগুণ বেশি।
'কাঁচামাল আমদানি নির্ভর আংশিক রপ্তানিকারকদের অনুকূলে বন্ড সুবিধা দেওয়া হলে একইভাবে পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধির পাশাপাশি অগ্র-পশ্চাৎ শিল্পের সম্প্রসারণসহ অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে গতিশীলতা আসবে ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।'
রপ্তানির ক্ষেত্রে আংশিক রপ্তানি পণ্যের গুরুত্ব তুলে ধরে ট্যারিফ কমিশন বলেছে, স্থানীয় বাজারে চলমান রয়েছে, এমন পণ্য রপ্তানি করা সহজ। কারণ, স্থানীয় ক্রেতাদের কাছ থেকে এসব পণ্যের ইতিবাচক-নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়ে পণ্যের মানোন্নয়ন সম্ভব হয়। শতভাগ রপ্তানিমুখী কোন প্রতিষ্ঠান যখন রপ্তানি শুরু করে, তার ক্ষেত্রে এ সুবিধা পাওয়া যায় না। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই রপ্তানি বাজার ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। এসব বিবেচনায় স্থানীয় উৎপাদনকারী শিল্পের জন্য বন্ড সুবিধা দেওয়া হলে একদিকে মূলধনী ব্যয় কমবে, অন্যদিকে রপ্তানিও বাড়বে।
ক্ষুদ্র আয়তনের জনবহুল বাংলাদেশে শিল্পপণ্যের কাঁচামালের ঘাটতি রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও স্থানীয় উৎস হতে এ ঘাটতি পূরণ সম্ভব হবে না। এর সমাধান হিসেবে আমদানি করা কাঁচামাল নির্ভর প্রতিযোগিতাপূর্ণ রপ্তানিখাত গড়ে তুলতে হবে। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া একইভাবে কাঁচামাল আমদানি নির্ভর প্রতিষ্ঠিত রপ্তানিখাত সৃষ্টি করে উন্নত দেশের কাতারে অবস্থান করছে।
ভিয়েতনামের উদাহরণ তুলে ধরে কমিশন বলেছে, ভিয়েতনামে ব্যাংক গ্যারান্টির বিপরীতে আমদানি পণ্য বিনাশুল্কে খালাসের সুবিধা রয়েছে। এক্ষেত্রে তৃতীয় কোন প্রতিষ্ঠান এ ধরনের গ্যারান্টি দিয়ে থাকে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে তার লিয়েন ব্যাংক আমদানি করা কাঁচামালের উপর আরোপিত শুল্কের সমপরিমাণ অর্থের গ্যারান্টি দেবে, তাই তৃতীয় কোন প্রতিষ্ঠানের দরকার হবে না।
বন্ড সুবিধার অপব্যবহার কমবে, রাজস্ব আদায় সহজ হবে:
বিদ্যমান নীতি অনুযায়ী, রপ্তানি ক্ষেত্রে দু'বছর মেয়াদি সাধারণ বন্ড সুবিধার আওতায় বাৎসরিক নির্ধারিত আর্থিক সীমার মধ্যে রপ্তানিকারক কাঁচামাল আমদানির সুযোগ পান। অন্যদিকে স্পেশালাইজড বন্ড সুবিধার আওতায় রপ্তানি অর্ডারের বিপরীতে ইউটিলাইজেশন ডিকলারেশন (ইউডি) এবং ইউটিলাইজেশন পারমিশন (ইউপি) এর ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও উপকরণ আমদানির সুযোগ পান তারা।
এসব ক্ষেত্রে কাঁচামাল আমদানির নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করেছে কিনা, আমদানি করা কাঁচামাল দ্বারা উৎপাদিত পণ্য সঠিক পরিমাণ রপ্তানি হয়েছে কি-না, অপচয় ও রপ্তানি পরিমাণের সঠিকতা যাচাই ও বছরান্তে বাধ্যতামুলক অডিট সম্পাদনের মতো জটিল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয়। রপ্তানি শেষে বা বছরান্তে এ ধরনের কাজ করতে হয় বিধায়; রাজস্ব ক্ষতির বিষয়টি অনাদায়ী থাকে এবং মামলা দীর্ঘসূত্রিতা তৈরি হয়।
শতভাগ ব্যাংক গ্যারান্টির বিপরীতে বন্ড সুবিধা দেওয়া হলে রপ্তানিকারক নিজ উদ্যোগে রপ্তানির ডকুমেন্টের বিপরীতে ইউডি এবং ইউপি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে গ্যারান্টির অর্থ আরোপিত শুল্ককরের সঙ্গে সমন্বয় করতে বাধ্য হবে। কোনো রূপ অসঙ্গতি দেখা দিলে সরকার ওই ব্যাংক গ্যারান্টি থেকে শুল্ককর বাবদ অর্থ কেটে নিতে পারবে। এক্ষেত্রে সঠিকতা প্রমাণের দায়িত্ব রপ্তানিকারকের দায় হয়ে যাবে। এতে শুল্ক কর্তৃপক্ষের কাজের পরিধি কমবে, গতি বাড়বে। এ পদ্ধতিকে সর্বাধিক নিরাপদ ও ঝুঁকিহীন বলে মন্তব্য করেছে ট্যারিফ কমিশন।
'বিদ্যমান বন্ড ব্যবস্থায় বন্ডেড পণ্যের লিকেজের কারণে স্থানীয় অনেক শিল্প প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে ব্যবসা বন্ধ করেছে' উল্লেখ করে কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রতিবছর বন্ড অডিট বাধ্যতামুলক হলেও কর্তৃপক্ষের সীমাবদ্ধতার কারণে ৪-৫ বছরেও তা সম্ভব হয় না। ফলে আন-অডিটেড বন্ডেড ওয়্যারহাউজগুলোর প্রবৃত অবস্থা জানাও সম্ভব হয় না।
'এসব দিক বিবেচনায় বেসরকারিখাতের আংশিক রপ্তানিমুখী শিল্পকে শতভাগ ব্যাংক গ্যারান্টির বিপরীতে রপ্তানির পণ্যের কাঁচামাল আমদানি সুযোগ প্রদান বাস্তবসম্মত এবং নিরাপদ একটি ব্যবস্থা বলে প্রতীয়মান। দেশের রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণে বিষয়টি অপরিহার্য এবং সময়ের দাবি'- উপসংহার টেনেছে কমিশন।
আংশিক রপ্তানিকারকরা যা বলছেন:
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ৮৫ ভাগেরও বেশি তৈরি পোশাকখাতের উপর নির্ভরশীল। তবে পার্শিয়াল এক্সপোটিং খাতগুলোর রপ্তানির পরিমাণও বাড়ছে। করোনা মহামারির মধ্যেও কেমিকেল প্রোডাক্টস, প্লাস্টিক পণ্য, আয়রন অ্যান্ড স্টিলসহ ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোডাক্টস ও ফার্নিচার রপ্তানি বাড়ছে। এসবখাতে বাংলাদেশের বিনিয়োগও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০২০-২১ অর্থবছর কেমিক্যাল প্রোডাক্টস রপ্তানি হয়েছে ২৮ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৪১ শতাংশ বেশি। কেমিক্যাল প্রোডাক্টসের মধ্যে ওষুধ শিল্পের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ২৪ শতাংশের বেশি।
গত অর্থবছর বাংলাদেশ ১১.৫ কোটি ডলারের প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি করেছে, আগের অর্থব্ছর এর পরিমাণ ছিল ১০ কোটি ডলার।
কোভিড মহামারীর মধ্যেও ফার্নিচার রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ শতাংশ। গত অর্থবছর এখাতের রপ্তানির পরিমাণ ছিল প্রায় ৮ কোটি ডলার।
করোনা মহামারির মধ্যে ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোডাক্টস রপ্তানি উচ্চহারে বেড়েছে। গত অর্থবছর এখাতের রপ্তানি হয়েছে ৫৩ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৮০ শতাংশেরও বেশি।
ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোডাক্টসের মধ্যে আয়রন স্টিল রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির হার ১৩০ শতাংশ। জিপিএইচ ইস্পাত গত ৬ মাসে ৫ কোটি ডলারের ইস্পাত পণ্য রপ্তানি করেছে। কোম্পানিটির হাতে আরও বিপুল পরিমাণ রপ্তানি অর্ডার রয়েছে।
রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণের জন্য আংশিক রপ্তানিকারকদের বন্ড সুবিধা দেওয়ার ট্যারিফ কমিশনের প্রস্তাবকে ইতিবাচক বলে মনে করেন দেশের সবচেয়ে বড় ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম মুর্শেদ।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, রপ্তানির ক্ষেত্রে সুবিধা দিলে যে সুফল পাওয়া যায়, আরএমজি সেক্টরই তার বড় প্রমাণ। আংশিক রপ্তানিকারকদের বিদ্যমান অসুবিধাগুলো দূর করে পৃষ্ঠপোষকতা করলে নতুন নতুন রপ্তানিখাত সৃষ্টি করা সম্ভব।
গোলাম মুর্শেদ বলেন, উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে ইলেক্ট্রনিক পণ্য রপ্তানি বাড়ানোর ওপর ফোকাস করা ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই। তবে এক্ষেত্রে উৎপাদিত পণ্যের মূল্য সংযোজনের সঠিক হিসাব হওয়া জরুরি।
এব্যাপারে জিপিএইচ ইস্পাতের নির্বাহী পরিচালক কামরুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, 'আমরা এখন পর্যন্ত পাঁচটি চালান এক্সপোর্ট করে চারটি চালানের ডিউটি ড্র-ব্যাক পাওয়ার জন্য আবেদন করেও কোন সাড়া পাচ্ছি না।'
'ডিউটি ড্র-ব্যাক পাওয়ার ক্ষেত্রে যে জটিলতা রয়েছে, তাতে বিপুল রপ্তানি সম্ভাবনা থাকা সত্বেও আমরা রপ্তানি করতে আগ্রহ হারাতে বসেছি। রপ্তানি পণ্যের কাঁচামাল আমদানির সময় পরিশোধিত শুল্ক ফেরত নিতে নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। এর পরিবর্তে শতভাগ ব্যাংক গ্যারান্টির বিপরীতে বন্ড সুবিধা দেওয়া হলে ইস্পাতসহ অন্যান্যখাতেও রপ্তানি বাড়বে'- জানান তিনি।
দেশের আরেক বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (হিসাব) চৌধুরী আতিউর রসুল বলেন, বিদ্যমান পদ্ধতিতে আংশিক রপ্তানিকারকদের ডিউটি ড্র-ব্যাক পাওয়া খুবই কঠিন। আইনি জটিলতা ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লোকবল সংকটের কারণে রপ্তানির পর ডিউটি ড্র-ব্যাক পেতে অনেক ভোগান্তি হয়।
'শতভাগ রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের মতো ব্যাংক গ্যারান্টির বিপরীতে আংশিক রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানকেও বন্ড সুবিধা দেওয়া হলে রপ্তানি করা সহজ হবে। এতে উৎপাদন ব্যয় কমবে, রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণও সম্ভব হবে'- জানান তিনি।