ভারতকে ছাড়িয়ে মহামারির নতুন কেন্দ্রস্থল এখন ইন্দোনেশিয়া
গত বুধবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একদিনে ৫৩ হাজার ৫১৭ জনের মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে বিশ্বের চতুর্থ সর্বোচ্চ জনসংখ্যাবহুল দেশ ইন্দোনেশিয়ায়। এখন পর্যন্ত দেশটিতে এটিই একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু। একদিনে আক্রান্তের সংখ্যার হিসেবে ২৭ কোটি মানুষের আবাসস্থল, ইন্দোনেশিয়া এই মুহূর্তে মহামারির কষাঘাতে জর্জরিত দেশ ভারতের চাইতেও এগিয়ে আছে। ফলে এশিয়া মহাদেশ অঞ্চলে করোনা মহামারির নতুন কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছে ইন্দোনেশিয়া।
সংক্রমণের এই মাত্রা যদি নিয়ন্ত্রণ না করা হয়, তাহলে ইন্দোনেশিয়ার সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় ধ্বস নামতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
অনেকে আশঙ্কা করছেন দেশের সত্যিকার করোনা পরিস্থিতি হয়তো যতটা দেখানো হচ্ছে, তার চাইতে আরও ভয়াবহ। কারণ পর্যাপ্ত সংখ্যক মানুষ করোনা পরীক্ষা করাতে পারছে না।শনিবার প্রকাশিত এক জরিপে দেখা গেছে, জাকার্তার প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ বাসিন্দা কোভিড-১৯ এর সংস্পর্শে এসেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেউ কোভিডের সংস্পর্শে এসেছেন কিনা তা নির্ণয়ের পদ্ধতি ব্যবহার না করা এবং কঠোর লকডাউন না দেওয়ার ফলাফল এখন ভোগ করছে ইন্দোনেশিয়া।
রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকায় হাসপাতালগুলো তাদের জায়গা ও সেবা দিতে পারবে কিনা, তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। বিশেষত, প্রাণঘাতী ডেল্টা ভ্যারিয়ান্ট ছড়িয়ে পড়ার পর এই সমস্যা আরও জোরালো হয়েছে। বুধবার দেশটিতে নতুন করে মারা গেছেন ৯৯১ জন এবং এ নিয়ে ইন্দোনেশিয়ায় মোট মৃতের সংখ্যা ৬৯,২৩০।
আন্তর্জাতিক রেডক্রস ফেডারেশন ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (আইএফআরসি) এর ইন্দোনেশিয়া ডেলিগেশনের প্রধান, জ্যান গেলফান্ড বলেন, 'প্রতিদিন আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, ডেল্টা ভ্যারিয়ান্ট ইন্দোনেশিয়াকে ভয়াবহ কোভিড বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।'
রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম আন্তারা নিউজ তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইন্দোনেশিয়ার ১২০,০০০ টি হাসপাতাল শয্যার ৯০,০০০টিতেই এখন রোগী ভর্তি আছে। গত জুন মাসে দেশটিতে অক্সিজেনের দাম বৃদ্ধি পায় এবং এই মুহূর্তে হাসপাতালেও অক্সিজেন ফুরিয়ে গেছে। চলতি মাসের শুরুতেই জাভার একটি হাসপাতালে ষাটের অধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন। এর ফলে সেই হাসপাতালের অক্সিজেন সরবরাহ প্রায় শেষ হয়ে যায়। যদিও হাসপাতালের একজন মুখপাত্র একথা নিশ্চিত করতে পারেননি যে, নিহতদের সবাই কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েই মারা গেছেন কিনা।
বালি ও জাভা দ্বীপে গত সপ্তাহ থেকেই জরুরি লকডাউন জারি করা হয়েছে।
এখন পর্যন্ত রাজধানী জাকার্তার ২০ লাখ মানুষ টিকার পূর্ণাঙ্গ ডোজ নিয়েছেন বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানা যায়।
বুধবার প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো বলেন, বৈশ্বিক এই সংকট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ইন্দোনেশিয়ার একটাই উপায় রয়েছে-তা হলো ভ্যাকসিন।
আন্তারা নিউজকে তিনি বলেন, 'সবাই যেন সমান ও ন্যায্যভাবে ভ্যাকসিন পায় তা নিশ্চিত করতে হবে, কারণ আমরা দেখতে পাচ্ছি যে দেশের সব অঞ্চলের মানুষ সমানভাবে ভ্যাকসিন পাচ্ছে না।'
গত মঙ্গলবার বৈশ্বিক কোভ্যাক্স কর্মসূচির আওতায় অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের ৩৫ লাখ ডোজ ইন্দোনেশিয়ায় পাঠানো হয়েছে। ইন্দোনেশিয়া সরকার জানিয়েছে, এই কর্মসূচির আওতায় তারা এখন পর্যন্ত মোট ১ কোটি ৪০ লাখেরও বেশি ভ্যাকসিন পেয়েছে।