জেনে নিন বেজোসের মহাকাশ ভ্রমণের আদ্যোপান্ত
বিশ্বের শীর্ষ ধনী, আমাজন ও ব্লু অরিজিনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসের মহাকাশ ভ্রমণ নিয়ে অনেকদিন ধরেই চলছে নানা গুঞ্জন। ২৩০০ এমপিএইচ রকেটে করে তার এই ১১ মিনিটের ভ্রমণের তারিখ নির্ধারিত হয়েছে রিচার্ড ব্র্যানসনের মহাকাশ ভ্রমণের মাত্র নয় দিন পরেই।
তবে সিএনএনের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বেজোসের ফ্লাইট ও তার প্রতিষ্ঠান ব্লু অরিজিনের ব্যবহৃত প্রযুক্তি ব্র্যানসনের প্রযুক্তি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।
ব্লু অরিজিনের 'নিউ শেফার্ড' ইতোমধ্যে কোনো মানুষ বহন ছাড়া ১৫টি স্বয়ংক্রিয় পরীক্ষামূলক ফ্লাইট পাঠানো সম্পন্ন করেছে। এটি এমন একটি সাবঅরবিটাল রকেট যা লঞ্চপ্যাড থেকে উল্লম্বভাবে টেক-অফ করে।
ব্র্যানসনের ভার্জিন গ্যালাক্টিকের এরিয়েল-লঞ্চড মহাকাশযানের চেয়ে এটি সংক্ষিপ্ততর, কিন্তু দ্রুতগতিতে ভ্রমণ করতে পারে।
এর আগে জুন মাসেই বেজোস জানিয়ে দিয়েছিলেন, আগামী ২০ জুলাই হতে যাচ্ছে তার সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, যেদিন তিনি অন্যান্য সহযাত্রী নিয়ে মহাকাশ ভ্রমণে যাবেন। আসছে মঙ্গলবার রাত ৮টায় (ইস্টার্ন টাইম) এই মিশন আরম্ভ হবে।
এল পাসো থেকে ১২০ মাইল দূরে, টেক্সাসের গ্রাম্য এলাকা ভ্যান হর্নের কাছে ব্লু অরিজিনের নিজস্ব মালিকানাধীন ক্ষেত্র থেকে রকেট ও ক্যাপসুল লঞ্চ করা হবে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক বেজোসের এই ঐতিহাসিক ভ্রমণ সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য।
কে যাচ্ছেন সাথে?
বেজোসের সাথে মহাকাশ ভ্রমণে সঙ্গী হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন তিনি ছাড়া আর মাত্র তিনজন। তারা হলেন, বেজোসের ভাই মার্ক বেজোস, ৮৩ বছর বয়সী পাইলট ও 'মার্কারী থার্টিন' নারীদের একজন- ওয়ালি ফাংক এবং সদ্য হাইস্কুল থেকে পাশ করা ১৮ বছর বয়সী অলিভার দিমেন।
কী ঘটবে?
যদিও অধিকাংশ মানুষের কাছে মহাকাশ ভ্রমণ বলতে পৃথিবীর চারপাশে প্রদক্ষিণ করাকেই বোঝায়; কিন্তু বেজোস ও তার সহযাত্রীরা নিউ শেফার্ডে চড়ে ১১ মিনিটের মধ্যে শুধুমাত্র মহাকাশে যাবেন এবং ফিরে আসবেন।
শব্দের চেয়েও তিনগুণ বেশি গতিসম্পন্ন, নিউ শেফার্ডের সাবঅর্বিটাল ফ্লাইট তার জ্বালানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত আকাশের দিকে সোজা উপরে উঠতে থাকবে।
এরপর ক্রু ক্যাপসুল মূল রকেট থেকে আলাদা হয়ে যাবে। ল্যান্ডিংয়ের আগে যাত্রীদের ভরশূন্য একটি অনুভূতি হবে কয়েক মিনিটের জন্য।
মানববাহী ক্যাপসুল থেকে আলাদা হওয়ার পর রকেটের ইঞ্জিন আবার চালু হবে এবং খাড়াভাবে ল্যান্ডিংয়ের জন্য রকেটে থাকা অন-বোর্ড কম্পিউটারগুলো ব্যবহার করবে।
স্পেসএক্স ও ভার্জিন গ্যালাক্টিকের থেকে কীভাবে আলাদা?
মঙ্গলবার ইলন মাস্কের স্পেসএক্সও লঞ্চ হতে যাচ্ছে। কিন্তু স্পেসএক্স যেখানে শুধু কক্ষপথে ফ্লাইট ছাড়ে, ব্লু অরিজিনের নিউ শেফার্ড সেখানে উপ-কক্ষপথে ফ্লাইট ছাড়তে সক্ষম।
উপ-কক্ষপথে সংক্রান্ত ফ্লাইটগুলোকে কক্ষপথ-সংক্রান্ত ফ্লাইটের মতো এত দ্রুত গতিতে যেতে হয় না। আন্তর্জাতিক সীমারেখার ৫০-৬২ মাইল উর্ধ্বে যেতে হয় তাদের।
তাই নিউ শেফার্ড মঙ্গলবার যা করতে যাচ্ছে, তার সঙ্গে রিচার্ড ব্র্যানসনের কাজের অনেকটাই মিল আছে।
কতটা ঝুঁকিপূর্ণ?
মহাকাশ ভ্রমণ বরাবরই ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। কিন্তু উপ-কক্ষপথের ফ্লাইটগুলোতে কম শক্তি ও গতি প্রয়োজন হয় এবং এর ফলে মানুষের কাছে তা অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয়।
তবু একজন মানবসন্তান যখন রকেটে চড়বে, তখন স্বভাবতই শঙ্কা-উদ্বেগ থেকেই যায়।
কিন্তু জেফ বেজোস যে তাতে দমে যাওয়ার পাত্র নন, তা আগেই জানিয়ে দিয়েছেন। বেজোস বলেন, 'পাঁচ বছর বয়স থেকে আমি মহাকাশে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছি।' এ থেকেই এই ভ্রমণের প্রতি তার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা বোঝা যায়।