ব্যক্তিগত রকেটে চেপে আজ মহাকাশের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাবেন বেজোস
আজ ২০ জুলাই সেই মাহেন্দ্রক্ষণ; আজকের দিনেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী, আমাজন ও ব্লু অরিজিনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস (৫৭) মহাকাশের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাবেন।
অ্যাপোলো-১১ এর চন্দ্রাভিযানের ৫২তম বার্ষিকীকে সম্মান জানাতে এই দিনটিকেই মহাকাশ অভিযানের জন্য বেছে নিয়েছেন বেজোস। ১৯৬৯ সালে এই দিনেই নীল আর্মস্ট্রং ও বাজ আলড্রিন প্রথম চাঁদে পা রাখেন।
নিজস্ব সংস্থা ব্লু অরিজিনের তৈরি মহাকাশযান 'নিউ শেপার্ড' বহন করবে তাকে। যানটি ১০০ কিলোমিটার উচ্চতায় মহাকাশ ও পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মধ্যবর্তী কারম্যান লাইনে কিছুক্ষণ অবস্থান করেই আবার ফিরে আসবে। পুরো ভ্রমণটি সম্পন্ন হবে ১১ মিনিটে।
ঠিক নয়দিন আগে গত ১১ জুলাই ভার্জিন গ্যালাকটিকের তৈরি ইউনিটি-২২ নামের মহাকাশযানে চেপে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকো রাজ্যে থেকে মহাকাশে সফল ভ্রমণ সম্পন্ন করেন বেজোসের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ব্রিটিশ বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী রিচার্ড ব্র্যানসন।
তবে ব্র্যানসনের সুরে সুর মিলিয়ে বেজোসও বলেছেন, এটি কোন প্রতিযোগিতা নয়।
এনবিসি নেটওয়ার্ককে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বেজোস বলেন, "একজন ব্যক্তিই সবার আগে মহাকাশে গেছেন, তার নাম ইউরি গ্যাগারিন এবং সেও অনেক বছর আগের কথা"।
সোভিয়েত বৈমানিক এবং নভোচারী ইউরি গ্যাগারিন ভস্টক নভোযানে করে ১৯৬১ সালের ১২ই এপ্রিল সর্বপ্রথম মহাকাশ ভ্রমণ করেন।
তিনি আরও বলেন, "এটি কোনও প্রতিযোগিতা নয়, বরং ভবিষ্যত প্রজন্ম যাতে মহাকাশে অবিশ্বাস্য সব কীর্তি স্থাপন করতে পারে সেজন্য পথ সুগমের ব্যবস্থা করা"।
কৃত্রিম অভিকর্ষজ শক্তি ব্যবহার করে মহাকাশে অজস্র মানুষের বসবাস এবং কাজের জন্য 'স্পেস কলোনী' নির্মাণ করবেন, এই উদ্দেশ্যেই ২০০০ সালে 'ব্লু অরিজিন' সংস্থার সূচনা করেন বেজোস।
বর্তমানে 'নিউ গ্লেন' নামক ভারি ওজন সমেত মহাকাশে যেতে পারে এমন একটি রকেট বানানো হচ্ছে সংস্থাটিতে। এছাড়া নাসার প্রকল্পাধীন 'মুন ল্যান্ডার' বানানোর কাজেও হাত দিয়েছে সংস্থাটি।
এদিকে ফক্স বিজনেস নেটওয়ার্ককে দেয়া আরেকটি সাক্ষাৎকারে বেজোস বলেন, "আমি উত্তেজনা বোধ করছি, তবে চিন্তিত নই একেবারেই। যানের আসনটিতে বসার পর কেমন বোধ হয় সেটি তখনই বলা যাবে।
আমরা প্রস্তুত। আমাদের নভোযান প্রস্তুত। দারুণ একটি দলের সাথে চলেছি এবং আমি পুরো ভ্রমণটি নিয়ে আশাবাদী। ধারণা করছি, আমার ক্রুমেটরাও আমার মতই একই রকম উৎফুল্ল।"
স্থানীয় সময় সকাল আটটার দিকে পশ্চিম টেক্সাসের গ্রাম্য এলাকা ভ্যান হর্নের কাছে মরুভূমির 'লঞ্চ সাইট ১' থেকে চার জন যাত্রী সহযোগে উৎক্ষেপিত হবে 'নিউ শেপার্ড'। উৎক্ষেপণের ৯০ মিনিট আগে থেকেই ব্লু অরিজিন ডট কম ওয়েবসাইটে পুরো অভিযানটির লাইভ সম্প্রচার শুরু হবে।
'নিউ শেপার্ড' এর আগে মানুষ ছাড়া ১৫টি স্বয়ংক্রিয় পরীক্ষামূলক ফ্লাইট পাঠানো সম্পন্ন করেছে। এটি এমন একটি সাব-অরবিটাল রকেট যা লঞ্চপ্যাড থেকে উল্লম্বভাবে টেক-অফ করে।
শব্দের চেয়েও তিনগুণ বেশি গতিসম্পন্ন, নিউ শেপার্ডের সাব-অরবিটাল ফ্লাইট তার জ্বালানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত আকাশের দিকে সোজা উপরে উঠতে থাকবে।
এরপর ক্রু ক্যাপসুল মূল রকেট থেকে আলাদা হয়ে যাবে। ল্যান্ডিংয়ের আগে যাত্রীদের ভরশূন্য একটি অনুভূতি হবে কয়েক মিনিটের জন্য।
মানববাহী ক্যাপসুল থেকে আলাদা হওয়ার পর রকেটের ইঞ্জিন আবার চালু হবে এবং খাড়াভাবে ল্যান্ডিংয়ের জন্য রকেটে থাকা অন-বোর্ড কম্পিউটারগুলো ব্যবহার করবে।
বেজোসের সাথে মহাকাশ ভ্রমণে সঙ্গী হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন তিনি ছাড়াও আরো তিনজন। তারা হলেন, বেজোসের ভাই মার্ক বেজোস, ৮৩ বছর বয়সী পাইলট ও সাবেক মার্কিন বিমানচালক ওয়ালি ফাংক এবং সদ্য হাইস্কুল থেকে পাশ করা ১৮ বছর বয়সী ডাচ কিশোর অলিভার ডিমেন। মজার বিষয় হচ্ছে, ওয়ালি ফাংক হবেন প্রবীণতম মহাকাশচারী। আবার, সব ঠিক থাকলে ডিমেন ইতিহাসে নাম লেখাবেন সর্বকনিষ্ঠ মহাকাশযাত্রী হিসেবে। ফলস্বরূপ মজার বিষয় হচ্ছে, একই অভিযানে থাকছেন পৃথিবীর শীর্ষ ধনী, প্রবীণতম এবং একাধারে সর্বকনিষ্ঠ মহাকাশযাত্রী।
ব্লু অরিজিনের সিইও বব স্মিথ একটি বিবৃতিতে বলেন, "কীভাবে একটি যানবাহনকে এমন নিরাপদ করে গড়ে তুলতে হয় যেন তার মাধ্যমে আমাদের প্রিয়জনকে মহাশূন্যে পাঠাতে আমরা দ্বিধা না করি, সেটি আমরা জানি"।