আফগানিস্তান ছেড়েছেন তালেবান মুখপাত্রের সাক্ষাৎকার নেওয়া সেই নারী সাংবাদিক
চলতি মাসের শুরুর দিকে আফগানিস্তানে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন টোলো নিউজের সাংবাদিক বেহেশতা আরগন্দ। তার নেওয়া তালেবানের একজন সিনিয়র প্রতিনিধির সাক্ষাৎকার বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে।
দু'দিন পরে আরগন্দ সাক্ষাৎকার নেন মালালা ইউসুফজাইয়ের, যাকে এই তালেবানরাই হত্যার চেষ্টা করেছিল কয়েক বছর আগে। টোলো নিউজ জানায়, কোনো আফগান টিভিতে এটিই ইউসুফজাইয়ের প্রথম সাক্ষাৎকার।
তবে, এসকল যুগান্তকারী কাজের পরও আরগন্দ দেশ ত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বলেছেন, "আমি দেশ ত্যাগ করছি কারণ, লক্ষ লক্ষ মানুষের মতো আমিও তালেবানকে ভয় করি।"
এ বিষয়ে টোলো নিউজের স্বত্বাধিকারী সাদ মোহসেনি বলেন, আরগন্দের ঘটনাটি আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতির মূর্ত প্রতীক।
গত রোববার সিএনএনের এক নির্ভরযোগ্য সূত্রকে মোহসেনি জানান, "আমাদের প্রায় সব পরিচিত রিপোর্টার এবং সাংবাদিকরা চলে গেছেন। তাদের বদলে নতুন লোক নিয়ে উন্মাদের মতো কাজ করে যাচ্ছি আমরা।"
তিনি আরও বলেন, "আমাদের সামনে এখন দু'টি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। লোকজনকে কাজে ফিরিয়ে নিয়ে আসা এবং আমাদের কাজ চালিয়ে যাওয়া।"
এদিকে, সিএনএন-কে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে তার গত দুই সপ্তাহের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন আরগন্দ।
২৪ বছর বয়সী আরগন্দ বলেন, নবম শ্রেণীতে থাকা অবস্থায় তার একজন শিক্ষক তাকে "সাংবাদিকের মত করে" একটি লেখা পড়তে বলার পর তিনি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছর যাবত সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়াশোনা করেন তিনি। পরবর্তীতে কিছু সময়ের জন্য বেশ কয়েকটি সংবাদ সংস্থা এবং রেডিও স্টেশনে কাজ করার পর এই বছরের শুরুতে উপস্থাপক হিসাবে টোলো নিউজে যোগ দিয়েছিলেন আরগন্দ।
তিনি বলেন, "তালেবান দেশ দখলের আগে আমি সেখানে এক মাস ২০ দিন কাজ করেছি।"
এর আগে, তালেবানের মুখপাত্রের সাথে আরগন্দের ১৭ আগস্টের সাক্ষাৎকারটি নিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টের একটি কলামে মোহসেনি বলেন, "আফগানিস্তানের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একজন নারী উপস্থাপকের মুখোমুখি হয়েছিল তালেবান।"
এ বিষয়ে আরগন্দ বলেন যে, সাক্ষাৎকারটি কঠিন হলেও তিনি সেটি করেছিলেন "আফগান নারীদের জন্য।"
তিনি বলেন, "আমি নিজেকে বলেছিলাম, 'আমাদের মধ্যে কাউকে না কাউকে অবশ্যই শুরু করতে হবে ... যদি আমরা আমাদের বাড়িতে থাকি বা অফিসে না যাই, তারা বলবে যে নারীরা কাজ করতে চায় না,' তাই আমি কাজ শুরু করতে নিজেকে মানিয়ে নিলাম। আমি সেই তালেবান সদস্যকে বলেছিলাম, 'আমরা আমাদের অধিকার চাই, আমরা কাজ করতে চাই। এটি আমাদের অধিকার।'"
এদিকে দেশটিতে বর্তমানে প্রতিদিনই সংবাদ মাধ্যমকে লক্ষ্য করে তালেবানদের ভয় দেখানোর নতুন বিবরণ উঠে আসছে।
ইউসুফজাইয়ের সাক্ষাৎকার নেওয়ার দুই দিন পর, আরগন্দ একজন অ্যাক্টিভিস্টের কাছে সাহায্যের আবেদন করেন। এরপর মঙ্গলবার, তার পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্যের সাথে তিনি কাতার বিমান বাহিনীর একটি উচ্ছেদ বিমানে চড়ে দেশ ত্যাগ করেন।
তবে, আরগন্দ বলেছেন যে দেশে ফেরার আশা করছেন তিনি।
"তালেবানরা যদি তাদের প্রতিশ্রুতি মত কাজ করে ও পরিস্থিতির উন্নতি হয়, এবং যদি আমি বুঝতে পারি যে দেশে থাকা নিরাপদ তাহলে আমি আফগানিস্তানে ফিরে যাব এবং দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করব," বলেন তিনি।
- সূত্র: সিএনএন