চলতি শতকের মধ্যেই ১৩০ বছর পর্যন্ত বাঁচবে মানুষ, পূর্বাভাস বিজ্ঞানীদের
চলতি শতকের মধ্যে হয়তো ১৩০ বছর বয়সের সৌম্য বার্ধক্যে পা রাখা অনেকের জন্যেই সম্ভব হবে।
পশ্চিমা দুনিয়ার রেকর্ডে সবচেয়ে দীর্ঘদিন বেঁচেছিলেন চেইন-স্মোকার ফরাসী নারী জিন ক্যালমেন্ট। ১৮৭৫ সালে জন্মগ্রহণকারী জিন ১৯৯৭ সালে ১২২ বছর ১৬৪ দিন বয়সে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন।
তবে সাম্প্রতিক একটি গবেষণা বলছে, চলতি শতকের অনেকেই তাঁর চেয়ে বেশি সময় বাঁচতে পারবে।
গবেষকরা শতবর্ষের সামান্য বেশি বা ১০৫ বছর বয়সী ৩ হাজার ৮০০ জন ইতালীয় এবং ৯ হাজার ৮০০ জন ফরাসী নাগরিকের মধ্যে গবেষণা চালান।
গবেষণার ফলাফলে তারা উপসংহার টানেন যে, ১১০ বছরের পর পর্যন্ত বেঁচে থাকা বিরল ভাগ্যের বিষয়। কারণ, এপর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই দুর্বল জিন ও রুগ্ন স্বাস্থ্যের অধিকাংশ মানুষ মারা যায়। তাই ১১০ বছর বয়সীদের জীবিত থাকা ও মৃত্যু ঝুঁকির অনুপাত প্রায় ৫০:৫০। অর্থাৎ, যেকোনো মুহূর্তেই তারা চিরতরে চোখ বুজবেন এমনটাই স্বাভাবিক।
যার মানে দাঁড়ায়, ১১০ বছর পূর্ণ করা কোন ব্যক্তি পরের বছর বাঁচবেন কিনা- তা অনেকটা কয়েন টস করার মতোই অনিশ্চিত। টানা ২০ বার জীবন-মৃত্যুর এ টসে জিতে কেউ ১৩০ বছর বাঁচবেন- এমন ঘটনা দশ লাখে মাত্র একবার ঘটতে পারে।
তবে হতাশ হওয়ার কিছু নেই, প্রত্যাশিত গড় আয়ু নিশ্চিতভাবেই বাড়তে চলেছে। কোভিড মহামারি সত্ত্বেও স্বাস্থ্যখাত ও জীবনযাপনের উন্নতির কারণে বৈজ্ঞানিক নিবন্ধটির লেখকরা বলছেন, চলতি শতকের মধ্যেই ইতিহাস সৃষ্টিকারী ওই ফরাসী নারীর রেকর্ড ভাঙতে পারবেন কেউ কেউ।
বিষয়টির ব্যাখ্যা দেন কানাডার মন্ট্রিয়ালে অবস্থিত এইচইসি বিজনেস স্কুলের পরিসংখ্যানবিদ ও গবেষণায় নেতৃত্বদানকারী ড. লিও বেলজাইল- "বিশ্বের জনসংখ্যা ক্রমে বাড়তে থাকায়, অনেক মানুষই ১০০ বছরে পৌঁছে যাচ্ছে, ১১০ বছরেও আগের চেয়ে বেশি মানুষ পদার্পণ করছে।"
চলতি শতকে আগের চেয়ে অনেক বেশি বয়োবৃদ্ধ জীবন-মৃত্যুর কয়েন টস করবেন, "১১০ বছরের পর প্রতিবছর বেঁচে যাওয়ার হার এতে বাড়বে নিঃসন্দেহে। এভাবে কেউ বেশি সৌভাগ্যবান হলে ১৩০ বছরেও পা রাখবেন।"
রয়্যাল সোসাইটি ওপেন সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত এ গবেষণা মানব আয়ুর সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণের উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়।
যেমন একটি নির্দিষ্ট বয়সসীমা- যার পর আর কারো বাঁচার সম্ভাবনা একেবারেই শূন্যে পৌঁছায়- তা নির্ধারণের চেষ্টা ছিল এটি। অর্থাৎ, ওই বয়সে পৌঁছানো মাত্রই অধিকাংশ মানুষের মৃত্যু হবে।
তবে ফরাসী ও ইতালীয় বয়োবৃদ্ধদের ওপর পরিচালিত গবেষণায় তেমন মধ্যক বয়সসীমার কোন ইঙ্গিত মেলেনি।
বরং ১০৮ বছরে বয়সে পৌঁছানোদের মৃত্যুঝুঁকি কমে ৫০:৫০ অনুপাতে স্থিতিশীল হয় বলে গবেষকরা প্রমাণ পেয়েছেন।
গবেষণার এই ফলাফল অ্যামাজন প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসের মতো অতি-ধনীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। বেজোসও বয়সের প্রভাব কমানোর প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করছেন বলে নানান গণমাধ্যমের সংবাদ সূত্রে জানা গেছে।
ঝিনুকের মতো কিছু প্রাণী কখনোই বয়সে বাড়ে না, এবং কেন সেটা ঘটে- তা উত্তর সন্ধান এখন জেরোন্টোলজি বা বার্ধক্য গবেষণার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।
গবেষকরা লিখেছেন, "চরম বয়সীমার প্রান্তে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি নিরূপণ ছিল আমাদের গবেষণার প্রধান ভিত্তি, যা বয়সের প্রভাব কমানোর আরোগ্যেরও সন্ধান করেছে।"
তারা বলছেন, ১৩০ বছরের মতো বড় বাধার দেওয়াল না থাকলে, তাত্ত্বিকভাবে মানুষ আরও কয়েক দশক পর্যন্তও বাঁচতে পারতো। তবে সে সম্ভাবনা একেবারেই কম হওয়ার কারণ অধিকাংশ ১০৮ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রেই গড়পড়তা আর ১৫ মাস আয়ু থাকে।
সূত্র: ডেইলি মেইল