কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব সুইমিং পুল কমপ্লেক্স
চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মী ও তাদের পোষ্যদের সাঁতার শেখাতে প্রায় ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সুইমিং পুল কমপ্লেক্স নির্মাণ করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। কমপ্লেক্সের পাশেই ৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে টেনিস কোর্ট ও বাস্কেটবল গ্রাউন্ড।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রমের একঘেয়েমির মাঝে এ ধরনের খেলাধুলার সুযোগ থাকা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নতুনভাবে উজ্জীবিত করবে, কর্মীদের কাজের গতিশীলতা বৃদ্ধি করবে।
চট্টগ্রাম বন্দর স্টেডিয়ামের পাশে ১ দশমিক ৩০ একর জায়গায় সুইমিং কমপ্লেক্স এবং ১ দশমিক ২৫ একর জায়াগায় নির্মিত হয় টেনিস কোর্ট ও বাস্কেট বল গ্রাউন্ড। গত ২ জানুয়ারি নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সুইমিং কমপ্লেক্স উদ্বোধন করেছেন।
তবে বন্দরের স্টেক হোল্ডার এবং বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের নেতারা বলছেন, ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে সুইমিং পুল কমপ্লেক্স, টেনিস কোর্ট ও বাস্কেটবল গ্রাউন্ড নির্মাণের চেয়ে বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো জরুরী। রিক্রিয়েশন সুবিধার চেয়ে বন্দরে আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজনের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি এডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী বলেন, করোনার এই দুঃসময়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নৈতিক দায়িত্ব ছিলো নাগরিকদের পাশে দাঁড়ানো। তারা সেটি না করে ১৯ কোটি ব্যয়ে সুইমিং পুল বানানো এক ধরনের বিলাসিতা। চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে টাকা ব্যয় না করে রাষ্ট্রের টাকায় বিলাসি এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।
এর আগে চট্টগ্রাম মহানগরে দুটি সুইমিং পুল কমপ্লেক্স নির্মাণ করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। নগরীর পাঁচলাইশ এলাকার জাতিসংঘ পার্কে প্রায় ৪ কোটি টাকায় ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন দুটি সুইমিং পুল ও একটি জিমনেশিয়াম তৈরি করে। কিন্তু সুইমিং পার্কটি বর্তমানে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের একাংশের বিরোধিতার মধ্যেই প্রায় সাড়ে ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম আউটার স্টেডিয়ামে সুইমিং পুল নির্মাণ করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। ২০১৯ সালের ১০ সেপ্টেম্বর) সুইমিং পুলের উদ্বোধনের ৬ মাসের মাথায় মুখ থুবড়ে পড়ে সুইমিং কমপ্লেক্সটি। আন্তর্জাতিক মানের' সুইমিংপুলটির দুই পাশের দর্শক গ্যালারির ফ্লোর থেকে উঠে যায় সিমেন্টের সুইমিংপুলের চারপাশে লাগানো গ্লাস থেকে খুলে পড়ে পুডিং ও রাবার।
চট্টগ্রাম বন্দর সুত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তা কর্মচারী ও তাদের পোষ্যদের সাঁতার প্রশিক্ষণ ও সাতারর চর্চার মাধ্যমে শারিরীক ফিটনেস ও মানসিক ফিটনেস বজায় রাখার লক্ষ্যে এই সুইমিং পুলটি যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে। এ ছাড়াও এই সুইমিং পুলটি দক্ষ খেলোয়াড় তৈরির মাধ্যমে বাংলাদেশের ক্রীড়াক্ষেত্রে অবদান রাখবে। পেশাদার সাঁতারুরা যেমন প্রশিক্ষণ ও অনুশীলন করতে পারবেন, তেমনি দক্ষ ট্রেনারের মাধ্যমে সাঁতারও শিখতে পারবেন নতুনরা। এছাড়া চট্টগ্রামের সাতারু, বিভিন্ন ক্রীড়াবিদ, ক্রীড়ামোদী চট্টগ্রাম বাসীর জন্য এই সুইমিং পুল চাহিদা পুরণে সক্ষম হবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বলেন, বন্দরের স্পোর্টর্স কমপ্লেক্সে যে সকল খেলোয়াড় তৈরি হচ্ছে আমরা তাদের মাধ্যমে এই সুইমিং কমপ্লেক্স, টেনিস কোর্ট ও বাস্কেটবল গ্রাউন্ডে নিয়মিত খেলাধুলার আয়োজন করবো। নিয়মিত প্রতিযোগীতা করবো। যেখানে চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও অংশগ্রহন করতে পারবে।
তিনি আরো বলেন, সুইমিং পুলটি একটি নীতিমালার আলোকে পরিচালিত হবে। নীতিমালা প্রনয়নের কাজ চলছে। নীতিমালার আলোকে মেম্বারশিপ এবং ফি থাকবে।
যা আছে চট্টগ্রাম বন্দরের সুইমিং পুলে
আর্ন্তজাতিক মানের এই সুইমিং পুলের আয়তন ১২৫০ বর্গমিটার। দৈর্ঘ্য ৫০ মিটার ও প্রস্থে ২৫ মিটার। পুলে রয়েছে আটটি লেন। একসাথে ৮ জন সাঁতারু প্রতিযোগীতায় অংশ নিতে পারবে। সুইমিং পুলের গভীরতা সর্বনিম্ন ১ দশমিক ৫ মিটার থেকে সর্বোচ্চ ৪ দশমিক ১০ মিটার পর্যন্ত।
এছাড়া রয়েছে লার্নার্স পুল। এর আয়তন ১৩৬ বর্গমিটার এবং গভীরতা সর্বনিম্ন শূন্য দশমিক ৬মিটার এবং সর্বোচ্চ ১ দশমিক ২০ মিটার। এছাড়া রয়েছে চারশ জন দর্শক ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন গ্যালারী।
সুইমিংপুল কমপ্লেক্সে রয়েছে ভিআইপি শাওয়ার জোন। এই জোনে রয়েছে মেইল ও ফিমেল শাওয়ার, চেঞ্জিং রুম ও টয়লেট। মেইল ও ফিমেল শাওয়ার জোনে ৮ করে ১৬ টি শাওয়ার রুম। লার্নার্স পুলে রয়েছে ১ টি শাওয়ার ও টয়লেট জোন।
আরো রয়েছে সুইমিং পুল এন্ট্রি কাউন্টার, লার্নার্স পুল এন্ট্রি কাউন্টার, অফিস রুম , ফুড কর্ণার, ক্যাকুজি , মেল সাওনা রুম, ফিমেল সাওনা রুম , মেল স্টিমরুম, ফিমেল স্টিম রুম, ফিটনেস সেন্টার, ফাস্ট এইড রুম, ট্রেইনিং রুম , মেইল টয়লেট জোন, ফিমেল টয়লেট জোন। গ্যালারী দর্শকদের জন্য মেইল টয়লেট জোন , ফিমেল টয়লেট জোন।
সুইমিং পুল পাম্প রুমে আছে ৬ টি পাম্প ও ৫ টি ফিল্টার। লার্নার্স সুইমিং পুল পাম্প রুমে আছে ২ টি পাম্প ও ১ টি ফিল্টার।
সুইমিং কমপ্লেক্সটি নির্মাণ করেছে মেসার্স কিউ.এইচ.এম.সি. এস. এল (জেভি)। টেনিস কোর্ট ও বাস্কেটল গ্রাউন্ড নির্মাণ করে ইউনাইটেড করপোরেশন।
এদিকে সুইমিং পুলের উদ্বোধনী দিনে প্রীতি সাতার প্রতিযোগীতায় অংশ নিয়েছিলেন চট্টগ্রাম বন্দরের আট জন প্রতিযোগী। এতে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছিলেন চট্টগ্রাম বন্দরের উপ পরিচালক (নিরাপত্তা) মেজর মো: ওয়াহিদুল হক। তিনি টিবিএসকে বলেন, আন্তর্জাতিক মানের সুইমিং পুলের সব ধরনের সুবিধা রয়েছে এখানে। বন্দরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের রিক্রিয়েশনের সুযোগ তৈরি হয়েছে।