ঈদের ছুটিতে সচল বন্দর, তবে সুফল মেলেনি কন্টেইনার ডেলিভারিতে
ঈদের টানা ছুটিতেও পুরোপুরি সচল ছিল দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম। বিষয়টি নিয়ে বন্দরের স্টেকহোল্ডার প্রতিনিধিদের সাথে সভা এমনকি বিজ্ঞপ্তিও জারি করে বন্দর।
কিন্তু এতসব আয়োজনের পরও বন্দর ইয়ার্ড থেকে কন্টেইনার ডেলিভারিতে সুফল পাওয়া যায়নি। স্বাভাবিক সময়ে গড়ে সাড়ে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টিইইউস (টুয়েন্টি ফিট ইকুয়েভিলেন্ট ইউনিট) কন্টেইনার ডেলিভারি হয়। সেখানে ঈদের ছুটিতে তা নেমে আসে শূন্য থেকে এক হাজারের কোটায়।
আমদানিকারকরা পণ্য ডেলিভারি না নেওয়ায় গত ৮ দিনের ব্যবধানে চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে জমে গেছে ৬ হাজার ৯২৭ টিইইউস কন্টেইনার। দ্রুত ডেলিভারি পরিস্থিতি স্বাভাবিক পর্যায়ে না পৌঁছালে বন্দর ইয়ার্ডে কন্টেইনার জট তৈরী হবে বলে জানিয়েছেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেইনার ধারণ সক্ষমতা ৪৯ হাজার ১৮ টিইইউস। স্বাভাবিক সময়ে বন্দরে কন্টেইনার থাকে প্রায় ৩৫ হাজার। তবে বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম সচল রাখতে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে ১৫ শতাংশ জায়গা খালি রাখতে হয়। সেই হিসেবে বন্দরে ৪১ হাজার ৬৬৫ টিইইউস কন্টেইনার থাকলেই সেটিকে স্বাভাবিক ধরা হয়। কিন্তু ৭ মে সকাল ৮টা পর্যন্ত কন্টেইনার সংখ্যা দাঁড়ায় ৪২ হাজার ৯২০ টিইইউস।
ইতোমধ্যে কন্টেইনার সংখ্যা স্বাভাবিক সংখ্যার পরিমাণকে ছাড়িয়ে গেছে ১ হাজার ২৫৫ টিইইউস। বন্দর ইয়ার্ডে প্রায় ৮৮ শতাংশ জায়গা কন্টেইনারে ভর্তি হয়ে গেছে। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ৩ শতাংশ জায়গা বেশি ভর্তি হয়ে গেছে কন্টেইনারে।
চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার ডেলিভারি এবং হ্যান্ডেলিংয়ে আগের দিন সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী দিন সকাল ৮টা পর্যন্ত সময় হিসাব ধরে দিন নির্ধারণ করা হয়।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, কন্টেইনার ডেলিভারি অব্যাহত রাখতে সকল ধরনের প্রস্তুতি ছিল বন্দরের। কিন্তু আমদানিকারকরা ডেলিভারি না নেওয়ায় ডেলিভারি হয়নি। তবে ডেলিভারির পরিমাণ কমে গেলেও জেটিতে জাহাজে পণ্য উঠা স্বাভাবিক ছিল।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৯ এপ্রিল বন্দরে কন্টেইনার ডেলিভারি হয় ৫ হাজার ১৫৬ টিইইউস। এ দিন ইয়ার্ডে কন্টেইনার ছিলো ৩৫ হাজার ৯৯৩ টিইইউস। এরপর থেকে ক্রমশ কমতে থাকে ডেলিভারির সংখ্যা। এক দিনের ব্যবধানে ৩০ এপ্রিল ডেলিভারি কমে যায় ১ হাজার ৮৫১ টিইইউস। এদিন ডেলিভারি হয় ৩ হাজার ৩০৫ টিইইউস।
১ মে ২ হাজার ৯৭২ টিইইউস, ২ মে ১ হাজার ৬৮ টিইইউস, ৩ মে ২২৭ টিইইউস কন্টেইনার ডেলিভারি হয়। ৪ এপ্রিল কোন কন্টেইনার ডেলিভারি কিংবা হ্যান্ডেলিং হয়নি। ৫ এপ্রিল ৭০৫ টিইইউস, ৬ এপ্রিল ১ হাজার ৯২ টিইইউস, ৭ এপ্রিল ১ হাজার ৫১২ টিইইউস কন্টেইনার ডেলিভারি হয়। সর্বশেষ গত ৭ এপ্রিল সকাল ৮টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর ইয়ার্ডে কন্টেইনার ছিলো ৪২ হাজার ৯২০ টিইইউস।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোঃ ওমর ফারুক বলেন, রবিবার থেকে কন্টেইনার ডেলিভারির পরিমাণ বাড়বে। আশা করছি এই সপ্তাহের মধ্যেই পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
এদিকে ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার আগে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিলো। ওই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ঈদুল ফিতর এর ছুটিকালীন এবং তার পরবর্তী সময়ে বন্দরের কার্যক্রম ২৪/৭ চালু থাকবে। সকল আমদানি রপ্তানিকারক, শিপিং এজেন্ট, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, সিএন্ডএফ এজেন্ট, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডিং এজেন্ট, প্রাইভেট অফডক সহ বন্দর সংশ্লিষ্ট সকল স্টেকহোল্ডারদেরকে ঈদ ছুটিকালীন সময়ে তাদের পণ্য ডেলিভারি নেওয়ার জন্য ওই বিজ্ঞপ্তিতে অনুরোধ করা হয়েছিলো ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
এছাড়া চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ৫ জন ডেপুটি কমিশনার এবং ১ জন সহকারী কমিশনারের তত্ত্বাবধানে ৭ জন রাজস্ব কর্মকর্তা, ২২ জন সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা এবং ১৩ জন শাখা সহকারীকে ২ থেকে ৪ মে পর্যন্ত ছুটি চলাকালীন সময়ে শুল্কায়নের দায়িত্ব দেয় কাস্টম কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনারবাহী পণ্য আমদানির বৃহৎ একটি অংশের আমদানিকারক তৈরী পোষাক শিল্প মালিকরা। প্রতিবছরের মতো এবারও ঈদের ছুটিকালীন সময়ে পণ্য ডেলিভারি না নেওয়া প্রসঙ্গে কারখানা মালিকরা বলেন, ঈদের সময় স্বাভাবিক ছুটির চেয়ে বেশি ছুটি দিতে হয় শ্রমিকদের। তাই কারখানায় উৎপাদন শুরু করতে সময় লাগে। তাছাড়া ওয়্যারহাউসের কর্মীরাও ছুটিতে থাকে। ফলে ঈদের ছুটি কালীন সময়ে বন্দর থেকে পণ্য খালাসে কিছুটা সময় নেয় কারখানা মালিকরা।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, কারখানা খুললেই আমাদের আমদানি করা কাঁচামাল লাগবে। কাজেই আমাদের প্রয়োজনেই দ্রুত পণ্য ডেলিভারি নিতে হবে। আশা করছি, বড় ধরনের জটিলতা তৈরি হবে না।
এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের মতো বেসরকারি আইসিডিগুলোতেও আমদানি পণ্য ডেলিভারিতে কিছুটা ধীরগতি রয়েছে। তবে রপ্তানি পণ্য জাহাজীকরণ স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছে আইসিডি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশন (বিকডা)।
জানা গেছে, খাদ্যপণ্য সহ ৩৮ ধরনের পণ্য ডেলিভারি হয় আইসিডি থেকে। এছাড়া শতভাগ রপ্তানি পণ্য আইসিডিতে কন্টেইনার ভর্তি করা হয়। আইসিডি থেকে জাহাজের শিডিউল অনুযায়ী বন্দরের হুক পয়েন্টে ( যেখান থেকে পণ্য জাহাজে তোলা হয়) নিয়ে জাহাজীকরণ করা হয়।
প্রসঙ্গত, দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ৯২ শতাংশ সম্পন্ন হয় দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে। বাংলাদেশে যে পরিমাণ কন্টেইনার পরিবহন হয় তার ৯৮ শতাংশ চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে হয়।