পেপারফ্লাইতে ভারতীয় লজিস্টিক ফার্মের ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ
বাংলাদেশি ই-কমার্স পণ্যের হোম ডেলিভারি প্রতিষ্ঠান পেপারফ্লাই-তে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে ভারতের লজিস্টিক সংস্থা ই-কম এক্সপ্রেস লিমিটেড।
এ বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশি এ কোম্পানিটির বেশিরভাগ শেয়ার কিনে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ই-কমার্স সার্ভিস পৌছে দিতে কাজ করবে ই-কম এক্সপ্রেস লিমিটেড। পেপারফ্লাইয়ের কর্মকর্তারা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-কে জানিয়েছেন, এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনায় কোনো পরিবর্তন আসবে না।
দেশে বর্তমানে ১০০'র বেশি সার্ভিস পয়েন্টের মাধ্যমে ৪৪৫৬ টি ইউনিয়নে সেবা দিচ্ছে পেপারফ্লাই। মঙ্গলবার ঢাকায় উভয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিনিয়োগ সংক্রান্ত চুক্তিটি স্বাক্ষর হয়। পেপারফ্লাইয়ের এর বর্তমান নেটওয়ার্কের সঙ্গে নতুন বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশে ব্যবসা সম্প্রসারণ করবে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানটি।
ভারতে ২৯০০ সার্ভিস পয়েন্টের মাধ্যমে দৈনিক ১০ লাখ মানুষের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি দেয় ই-কম এক্সপ্রেস। ভারতে ২০টির বেশি রাজ্যে ২৬৫০টি শহরে ব্যবসা রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানটির। পেপারফ্লাইয়ে এ বিনিয়োগের মাধ্যমে নিজ দেশের বাইরে প্রথম বিনিয়োগ করলো প্রতিষ্ঠানটি।
বিনিয়োগ ও অংশিদারত্বের ব্যাপারে পেপারফ্লাইয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কার্য নির্বাহী কর্মকর্তা শাহরিয়ার হাসান বলেন, "ডিজিটালাইজড এ সময়ে গ্রাহকদের ক্রয়ের চাহিদা ও ধরনের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে দেশের লজিস্টিক খাতে পরিবর্তন আনা দরকার। ই-কম এক্সপ্রেসের সাথে অংশীদারিত্ব আমাদের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াবে, বাংলাদেশের লজিস্টিক খাতকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে সামনের দিনগুলোকে কাজ করবো আমরা।"
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগের হার বেড়েছে। এ খাতের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চীনা ই-কমার্স জায়ান্ট আলিবাবা দেশীয় প্রতিষ্ঠান হাংরিনাকি কিনে নেয়ার ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটির সাথে আলোচনা করছে। আলোচনা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে আছে।
দারাজের সাথে চুক্তি ও আলিবাবার অঙ্গপ্রতিষ্ঠান আলিপে বিকাশের ২০ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয়ার পর, হাংরিনাকির সাথে চুক্তি বাংলাদেশে আলিবাবার তৃতীয় বিনিয়োগ হতে যাচ্ছে। পাঠাওয়ের ১৮.৬৭ শতাংশ শেয়ারের অধিকারী গোজেক সিঙ্গাপুর ২০১৮ সালে পাঠাওকে ১ কোটি ৩০ লাখ ডলার ঋণ দিয়েছে।
২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর দেশে সার্ভিস পয়েন্ট স্থাপনের দিক থেকে শীর্ষ লজিস্টিক প্রতিষ্ঠান পেপারফ্লাই। বর্তমানে অনলাইনের মাধ্যমে অর্ডারকৃত পণ্যের ক্যাশ অন ডেলিভারি সার্ভিস দেয় প্রতিষ্ঠানটি। ফেসবুকসহ বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যম অর্ডারকৃত পণ্য ঢাকার বাইরে প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে পরিচিত নাম পেপারফ্লাই। সারাদেশে ১ হাজারের বেশি নিজস্ব ডেলিভারিম্যান রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত ছয় বছরে প্রায় ৩০ লাখ মানুষের কাছে পণ্য পৌঁছে দিয়েছে পেপারফ্লাই।
সার্ভিস পয়েন্ট এবং থার্ড পার্টি প্রোভাইডার হিসাবে নিজেদের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান দাবি করে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ বাংলাদেশে লজিস্টিক খাতে বড় পরিবর্তন নিয়ে আসবে বলে মনে করছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।
পেপারফ্লাইয়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান বিপণন কর্মকর্তা রাহাত আহমেদ বলেন, "দেশের অন্য যেকোনো লজিস্টিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ে আমাদের ব্যতিক্রম বৈশিষ্ট্য হলো, আমাদের ৮৫ শতাংশ ডেলিভারিম্যানই ঢাকার বাহিরে পণ্য সরবরাহ করে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের উদ্যোক্তাদের পণ্য সরবরাহ করতে আমাদের এ উদ্যোগ।" প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মাধ্যেমে দ্রুত পণ্য পৌঁছে দিতে পারলে এ খাত দেশের ১০ শতাংশ জিডিপি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন তিনি।
ই-কম এক্সপ্রেসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কার্য নির্বাহী কর্মকর্তা টি.এ. কৃষ্ণ বলেন, "শক্তিশালী লজিস্টিক সেবা ও উদ্যোক্তাদের নেতৃত্বের মাধ্যমে পেপারফ্লাই একটি প্রসিদ্ধ প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। হোম ডেলিভারির খাতে দ্রুত প্রবৃদ্ধি পাওয়া এবং দীর্ঘমেয়াদে শক্তিশালী ও টেকসই কার্যক্রমের দিকে এগিয়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠানটিতে বিনিয়োগের মাধ্যমে অংশিদারত্বের সুযোগ পেয়েছি আমরা,"
"ই-কমার্স, লজিস্টিক ও প্রযুক্তিগত ইকোসিস্টেমের মাধ্যমে পেপারফ্লাইয়ের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে গ্রাহকদের আরও উন্নত মানে সেবা দিতে কাজ করবো আমরা।"
২০১৬ সালে শাহরিয়ার হাসান, রাজিবুল ইসলাম, রাহাত আহমেদ ও শামসুদ্দিন আহমকেদ পেপারফ্লাই প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে বিগত ৫ বছরে দেশের ই-কমার্স খাতকে এগিয়ে নিতে স্মার্ট রিটার্ন, স্মার্ট চেক, স্মার্ট লগ, ইন-অ্যাপ কল ও ক্যাশলেস পে'র মতো সেবা চালু করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
পেপারফ্লাইয়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, "শুধু ই-কমার্স লজিস্টিকেই নয়, প্রচলিত ক্যুরিয়ার সার্ভিসের ক্ষেত্রেও আরও উন্নতি জায়গা আছে। যেকোনো এন্টারপ্রাইজ, গ্রাহক ও ই-কমার্স সেবা প্রদান করতে পারবে এমনভাবেই পেপারফ্লাইকে বৃহত্তম নেটওয়ার্ক হিসেবে গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। ই-কম এক্সপ্রেসের সাথে আমাদের এ চুক্তি একটি এ লক্ষ্যের দিকেই একটি বড় পদক্ষেপ এবং বিগত বছরগুলোতে আমরা যতোটুকু বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছি তার প্রমাণ।"
বাংলাদেশে বর্তমানে ৫০ হাজারেরও বেশি অনলাইন ব্যবসায়ী ফেসবুক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করছে। ই-কমার্সের জন্য নিবন্ধন ও ইক্যাবের সদস্য হয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছে ১ হাজার ২৭০টি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের পণ্য গ্রাহকদের হাতে পৌঁছে দিতে গড়ে উঠেছে শতাধিক ডেলিভারি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানও।
এছাড়া নিজেদের পণ্য ডেলিভারি দিতে ইভ্যালি, পাঠাও ফুড, ফুডপিওন, দারাজ, চালডাল, হাংরিনাকি, মীনাক্লিক, সহজ-সহ অন্তত ৩০ টি প্রতিষ্ঠানে ৪৫ হাজারের বেশি ডেলিভারিম্যান কাজ করছেন।