বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রস্তুত জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল
জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলের ৪৩৬ একর জায়গা এখন পুরোপুরি প্রস্তুত। ইতোমধ্যেই ১১টি প্রতিষ্ঠান ৮৮ একর জমি নেয়ার জন্য বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ বা বেজার সঙ্গে চুক্তি করেছে। যেখানে বিসিক ও বিটাক ছাড়াও ৯টি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ প্রস্তাব করেছে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকার।
প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৩টি প্রতিষ্ঠান কৃষিভিত্তিক কারখানা তৈরী করবে। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো মেডিকেল এবং সার্জিক্যাল আইটেম, ওভেন ব্যাগ শিল্প, পিভিসি ফ্লেক্স ব্যানার উৎপাদন শিল্প তৈরী করবে। এ প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিকভাবে ৩ হাজার ৬৭৫ জনের কর্মসংস্থান হবে বলে বেজা সূত্রে জানা গেছে।
এছাড়া পাট ও পাটজাত পণ্য, তৈরী পোশাক, ফার্মাসিউটিক্যালস, মসলাজাত পণ্য, চামড়া, সিরামিক সহ বিভিন্ন পণ্যও উৎপাদিত হবে এখানে। পুরো অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু হলে প্রত্যক্ষভাবে কর্মসংস্থান হবে ৩২ হাজার লোকের।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, দেশের গড় দারিদ্র্যের হার ২০ শতাংশ। তবে জামালপুর জেলার ২৩ লাখ ৮৪ হাজার জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৫২.৫ শতাংশ মানুষ এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অপেক্ষাকৃত অনগ্রসর ও দারিদ্র্যপীড়িত জামালপুরের অর্থনৈতিক কার্যক্রম বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এ অর্থনৈতিক অঞ্চল।
জামালপুর জেলার সদর উপজেলায়, দিগপাইত নামক স্থানে রঘুনাথপুর, দিঘুলী, সুলতাননগর জোয়ানের পাড়া, হরিদ্রাহাটা, ছোনটিয়া, গাজ্জাইল মৌজায় মোট ৪৩৬ দশমিক ৯৭ একর জায়গায় এ অর্থনৈতিক অঞ্চলটি। জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন কে (বিসিক) ৫০ একর জমি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক) কে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরীর জন্য পাঁচ একর জমি দেওয়ার বরাদ্দপত্র ইস্যু করা হয়েছে। এ দুইটি প্রতিষ্ঠানসহ ১১টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে বেজার।
গত মাসে (আগস্ট) জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলে ছয় একর জমি বরাদ্দ পায় কালার স্টাইল বাংলাদেশ লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি এখানে আরএমজি, রং এবং টেক্সটাইল রাসায়নিক কারখানা তৈরীতে ১১.৭৬ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে । যেখানে কর্মসংস্থান হবে ১ হাজার ২৩৫ জনের।
বেজা অফিসে জমি বরাদ্দ নেয়ার সময় কালার স্টাইল বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান বলেন, প্রতিষ্ঠানটি শিগগির উৎপাদনে যাবে।
অন্যদিকে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, 'সারাদেশে পরিকল্পিত শিল্পায়নের অংশ হিসেবে জামালপুরের এ অর্থনৈতিক অঞ্চলটিকে খাদ্য ও কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য উপযুক্ত করে গড়ে তোলা হচ্ছে। এর ফলে স্থানীয় জনগোষ্ঠী দেশের মূলধারার অর্থনীতির চাকার সাথে সম্পৃক্ত হবে এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন উদাহরণ তৈরী হবে'।
চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান যা তৈরী করবে
রিলায়েন্স সলিউশন লিমিটেডের প্রতিষ্ঠান বায়োলীপ এগ্রো ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড এবং বায়োলীপ ইন্ডাস্ট্রি দুই একর জায়গা নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি এক একর নিয়ে কৃষিভিত্তিক কারখানা তৈরী করবে। যেখানে বিনিয়োগ হবে ১.১৫ মিলিয়ন ডলার।
অপর এক একর জমিতে ১.৭৩ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে মেডিকেল এবং সার্জিক্যাল আইটেম প্রস্তুত করবে।
ম্যাক্স ইনফোটেক লিমিটেড দুই একর জায়গায় কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্য ও পানীয় কারখানা তৈরী করবে। তারা বিনিয়োগ করবে ২.৬৮ মিলিয়ন ডলার।
সিল্কেন সিউয়িং লিমিটেড ছয় একর জমি নিয়েছে। ইতোমধ্যেই এ ৫টি প্রতিষ্ঠানের জমি হস্তান্তর করা হয়েছে।
এছাড়া নোবেল নেভিগেশন এবং শিপিং লাইন দুই একর জায়গায় ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রি তৈরী করবে যেখানে তারা বিনিয়োগ করবে ৪.৭৪ মিলিয়ন ডলার। বায়ো-জিন কসমেকিউটিক্যালস চার একর জায়গায় প্রসাধনী, প্রোবায়োটিক ফিশ ফিড, পোল্ট্রি এবং ফিশ ফিড উৎপাদন করার কারখানা করবে। তারা বিনিয়োগ করবে ৩.৪৯ মিলিয়ন ডলার।
স্টেপ মিডিয়া লিমিটেড ৬ একর জায়গায় পিভিসি ফ্লেক্স ব্যানার ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রি ৯.৬৩ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে।
পিপিএস প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ৫ একর জায়গায় কারখানা গড়ে তুলবে; যেখানে বিনিয়োগ প্রস্তাব করেছে ৭.৯২ মিলিয়ন ডলার।
ইউপিভিসি পাইপস, এইচডিপিই পাইপস, ইউপিভিসি ডোরস, ইউপিভিসি ফিটিংস, হ্যাঙ্গারস, পিভিসি গার্ডেন হোসে পাইপ প্রভৃতি তৈরী করবে এ প্রতিষ্ঠান।
চলতি মাসের শুরুতে (অক্টোবর) জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলে ছয় একর জমি বরাদ্দ পেয়েছে সিল্কেন সিউয়িং লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি ৯ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে রপ্তানিমুখী 'নিটেড ডাইড ফেব্রিক' কারখানা স্থাপন করবে। এতে অন্তত ১ হাজার ১২ জন লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ।
সিল্কেন সিউয়িং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. এনামুল হক বলেন, "আমরা দ্রুত কারখানার নির্মাণকাজ শুরু করবো। এই কারখানায় জার্সি টপ, নাইটওয়্যার, সোয়েটার ও হুডি উৎপাদন হবে"।
প্রকল্পের উন্নয়ন
৩৩০ কোটি টাকা ব্যয়ের জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে। চলতি বছর প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে। গ্যাস সংযোগ লাইন ও ৩৩/১১ কেভিএ বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন নির্মাণ, ভূমি উন্নয়ন, পানি সরবরাহের কাজ শেষ হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ ৮০ শতাংশ ও সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। অফিস ভবন, ডরমিটরি হাউজ, প্রবেশদ্বার ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ ৮০ শতাংশ শেষ। বেজা বলছে, বিনিয়োগকারীদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিতে প্রস্তুত জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল।
এ অর্থনৈতিক অঞ্চল এমন কোম্পানিগুলোকেই আমন্ত্রণ জানাবে যারা পাট ও পাটজাত পণ্য, আরএমজি পণ্য, ফার্মাসিউটিক্যালস, মশলা, চামড়াজাত পণ্য, সিরামিক পণ্য ইত্যাদি উৎপাদন করবে।
৫০ বছরের ইজারায় অর্থনৈতিক অঞ্চলে উন্নত এবং অনুন্নত জমি পাওয়া যাবে। প্লট হস্তান্তরের আগে জমি উন্নয়ন, ইউটিলিটি এবং সড়কের দেখাশোনার দায়িত্ব বেজার।
পুরো টাকা পরিশোধ করলে বেজা জমি হস্তান্তর করে। ইতোমধ্যে জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৫টি প্রতিষ্ঠানকে বেজা জমি বুঝিয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কাজ শুরু করেছে।
২০৩০ সালের মধ্যে সারা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছে বেজা। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ১ কোটি লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং ২০৩০ সালের মধ্যে বার্ষিক অতিরিক্ত ৪০ বিলিয়ন ডলার মূল্যে পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানির প্রত্যাশা নিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে বেজা।