সংশোধিত এডিপিতে অগ্রাধিকার পাচ্ছে করোনা মোকাবেলার প্রকল্প
চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে (আরএডিপি) অর্থ বরাদ্দে কোভিড-১৯ মোকবেলায় চলমান প্রকল্পগুলো বিশেষ অগ্রাধিকার পাবে। নতুন প্রকল্প অনুমোদনের ক্ষেত্রেও বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হবে সরাসরি করোনা মোকাবেলা ও করোনার আঘাত থেকে অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারের উদ্যেশ্যে প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলোতে।
এর পাশাপাশি কৃষি, কৃষিভিত্তিক শিল্প, আইসিটি শিক্ষার উন্নয়ন, দারিদ্র্য কমানো এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কমানোর লক্ষ্যে নেওয়া প্রকল্পগুলোর অগ্রাধিকার দিয়ে আরএডিপি প্রণয়নের নীতিমালা তৈরি করেছে পরিকল্পনা কমিশন। সরকারের সব মন্ত্রনালয় ও বিভাগের পাশাপাশি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) আওতায় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর কাছে বুধবার এ নীতিমালা পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, লকডাউনের মধ্যে সব কিছু বন্ধ থাকলেও করোনা মোকাবেরায় স্বাস্থ্য খাতের দুটি প্রকল্প বিশেষ ব্যবস্থায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর পরবর্তী সময়ে এ সংক্রাক্ত কোন প্রকল্প আসলে ফেরত দেওয়া হয়নি।
তিনি আরও বলেন, সহসাই করোনা ভাইরাসের সংক্রমন কমে আসার তেমন কোনো লক্ষণ নেই। ভবিষ্যতে ভ্যাকসিনেশনের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করা প্রয়োজন হবে। এসব বিবেচনায় করোনা মোকাবেলা সংক্রান্ত প্রকল্পগুলো আরএডিপিতে বিশেষ অগ্রাধিকার পাবে।
পরিকল্পনা কমিশনের গাইডলাইনে বলা হয়েছে, দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিশেষ করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগের চাহিদা, রাজস্ব আহরণ, বিদেশি সহায়তা, ব্যবহারের সক্ষমতা ও অর্থ ব্যয়ের ধারা বিবেচনা করে এডিপি সংশোধন করা হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ কর্তৃক আরএডিপির আকার নির্ধারণ করার পর অর্থনৈতিক সেক্টরভিত্তিক অগ্রাধিকার, চলমান প্রকল্পের চাহিদা, প্রকল্পের বাস্তবায়নের অগ্রগতি ইত্যাদি বিবেচনায় বরাদ্দ বিভাজন করা হবে।
চলমান প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে নীতিমালায় বলা হয়েছে, করোনা মোকাবেলা ও দারিদ্র্যবিমোচনে সরাসরি সহায়ক হতে পারে এমন প্রকল্প আরএডিপিতে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
অগ্রাধিকার থাকবে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস, বন্যা, অতিবৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় নেওয়া প্রকল্পে। সরকারি-বেসরকারি অংশীধারিত্বে (পিপিপি) বাস্তবায়ন করা হচ্ছে এমন প্রকল্পের সহায়ক প্রকল্পেও পর্যাপ্ত অর্থ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নীতিমালায়।
বাস্তবায়নে ধীরগতি রয়েছে এমন প্রকল্পের বরাদ্দ কেটে নিয়ে দ্রুতগতির প্রকল্পে বাড়তি বরাদ্দের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নীতিমালায়। তাছাড়া চলতি অর্থবছরে কাজ শেষ হওয়ার অপেক্ষায় থাকা প্রকল্পে পর্যাপ্ত অর্থ দিতে ধীরগতির প্রকল্পের বরাদ্দ কমানোর পরামর্শও রয়েছে এ নীতিমালায়।
সম্পদের সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় সংশোধিত এডিপিতে নতুন প্রকল্প না নিয়ে চলমান প্রকল্পের বাস্তবায়নে গতি আনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
নতুন অননুমোদিত প্রকল্পের মধ্যে করোনা মোকাবেলায় সক্ষম প্রকল্প প্রস্তাব করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নীতিমালায়। তাছাড়া বিদেশি সহায়তা পাওয়ার বিষয়ে দাতা সংস্থার সঙ্গে চুক্তি বা সমঝোতা হয়েছে এমন প্রকল্পগুলোও এডিপিতে যুক্ত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর সব দেশেই সম্পদের সীমাবদ্ধতার বিপরীতে ব্যয়ের বাড়তি চাহিদা রয়েছে। আমাদের অগ্রাধিকারের তালিকাও দীর্ঘ। তবে বাস্তবতা হলো সব প্রকল্পে চাহিদা অনুযায়ী অর্থের যোগান দেওয়া কঠিন। এ বিবেচনায় ধীরগতির ও কম অগ্রাধিকার প্রকল্পের বরাদ্দ কমে আসবে।
বেশ কয়েক বছর ধরেই এডিপি প্রণয়ন নীতিমালায় মোট প্রকল্পের ৩০ শতাংশ সরকারি-বেসরকারি অংশীধারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে বাস্তবায়নের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ বিবেচনায় পিপিপি প্রকল্পের সহায়ক প্রকল্প প্রস্তাব করার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে নীতিমালায়।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ১২ হাজার ৬১১ কোটি টাকার এডিপি প্রনয়ন করা হয়েছিল। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা ও বাস্তবায়নকারী সংস্থার তহবিল থেকে ৯ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। প্রকল্প সহায়তা হিসেবে বিদেশি উৎস থেকে ৭০ হাজার ৫০২ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্য রয়েছে।
বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে এডিপি বাস্তবায়নে ৩৮ হাজার ৪৭২.৭৭ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে, যা বরাদ্দের ১৭.৯৩ শতাংশ। বড় এডিপি প্রণয়ন করা হলেও বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণে প্রতিবছর থেকেই বড় একটা অঙ্ক কেটে নেওয়া হয়ে থাকে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম বলেন, অর্থমন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেওয়া বরাদ্দ চাহিদা অনুযায়ী মন্ত্রণালয়গুলোর প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হবে। রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি আর করোনার কারণে বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণে আরএডিপির আকার কমতে পারে বলেও তিনি ধারণা দেন।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মূখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন এ বিষয়ে বলেন, করোনার কারণে সরকারের অগ্রাধিকারের পরিবর্তন হয়েছে। শুধু বাস্তবায়নের ভিত্তিতে সংশোধিত এডিপি প্রণয়ন করলে অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলো অর্থসঙ্কটে পড়তে পারে।
এ অবস্থায় করোনা সঙ্কটের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা, গ্রামীন অবকাঠামো, শিক্ষা ও অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে নেওয়া প্রকল্পগুলোতে বাড়তি বরাদ্দ রাখতে হবে বলেও তিনি মনে করেন।