অ্যামাজন ডেলিভারি বয় থেকে স্কটিশ নায়ক
জীবন যুদ্ধটা সহজ ছিল না। এক দেশ থেকে আরেক দেশে ঘুরে ফেরা, কিন্তু ক্রিকেট স্বপ্ন একই। লড়াইয়ের মঞ্চ যত কঠিন আর ভিন্নই হোক না কেন, ক্রিকেটেই ক্যারিয়ার গড়া একমাত্র লক্ষ্য ছিল স্কটল্যান্ডের অলরাউন্ডার ক্রিস গ্রিভসের। মাঝে ছিল অনেক চড়াই-উতরাই, করেছেন অ্যামাজনের ডেলিভারি বয়ের কাজও। সেই গ্রিভসই বিশ্বেমঞ্চে নায়ক হয়ে উঠলেন।
নিজেদের প্রথম ম্যাচে রোববার বাংলাদেশের মুখোমুখি হয় স্কটল্যান্ড। এই ম্যাচে স্কটিশরা যে আন্ডারডগ ছিল, সেটা বলাই বাহুল্য। কোচ শেন বার্জার আগেরদিন হুমকি দিয়ে রাখলেও বাংলাদেশকেই ফেবারিট মানা হচ্ছিল। বল হাতে শুরুটাও ফেবারিটের মতো করেছিল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল।
আগে ব্যাটিং করতে নেমে দল যখন খাদের কিনারে, তখনই আলোক বর্তিকা হাতে ছুটে আসেন গ্রিভস। ৫৩ রানেই ৬ উইকেট হারানো দলকে শক্ত হাতে পথ দেখাতে শুরু করেন তিনি। খেলেন ২৮ বলে ৪টি টার ও ২টি ছক্কায় ৪৫ রানের মহা কার্যকর এক ইনিংস। মূলত তার ব্যাটেই ১৪০ রানের লড়াকু সংগ্রহ পায় স্কটল্যান্ড।
কেবল ব্যাট হাতেই নয়, ৩১ বছর বয়সী স্কটিশ এই অলরাউন্ডার বল হাতেও বড় অবদান রাখেন। বাংলাদেশের ইনিংসে সবচেয়ে বড় দুটি আঘাত হানেন স্কটল্যান্ডের এই লেগ স্পিনার। শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকা সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমকে ফেরান তিনি। এরপরই বাংলাদেশ দিক হারায়, শেষ পর্যন্ত ৬ রানে হার মানে।
ব্যাটে বলে দারুণ পারফরম্যান্স করায় ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেছেন গ্রিভস। কদিন আগে দুবাইতে পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে স্কটল্যান্ড দলে অভিষেক হয় তার। বাংলাদেশের বিপক্ষে মাত্র দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ছিল তার। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি খেলতে নেমেই নায়কের ভূমিকায় গ্রিভস। অথচ কিছুদিন আগেও অ্যামাজনের ডেলিভারি বয়ের কাজ করেতেন তিনি।
গ্রিভসের জীবন যুদ্ধ কতোটা কঠিন ছিল, তা জানেন স্কটল্যান্ডের অধিনায়ক কাইল কোটেজার। প্রশংসা করতে গিয়ে তিনি গ্রিভসের পেছনের লড়াইয়ের কথা তুলে ধরেন। কোয়েটজার বলেন, 'এটা ওর জন্য় দারুণ একটা দিন, তবে অবাক হইনি আমরা। আমরা জানতাম এটা করার সামর্থ্য ওর আছে।'
'গ্রিভসের জন্য আমি গর্বিত, ও জীবনে অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে। বেশিদিন আগের কথা নয়, ও অ্যামাজনের হয়ে ডেলিভারি বয়ের কাজ করত। আর ও এখন বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলছে এবং ম্যাচ সেরার পুরস্কার নিচ্ছে।' যোগ করেন কোয়েটজার।
এক ম্যাচ দিয়ে স্কটিশ ক্রিকেটের নায়ক হয়ে ওঠা গ্রিভসের অবশ্য স্কটল্যান্ডের হয়ে খেলারই কথা ছিল না। দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া এই ক্রিকেটার অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে ইংল্যান্ডের নেট বোলার ছিলেন। তার মা ইংলিশ হওয়ায় আরেক দক্ষিণ আফ্রিকা বংশোদ্ভূত ইংলিশ ক্রিকেটার ম্যাট প্রায়ারের সঙ্গে পরিচয় হয় গ্রিভসের।
প্রায়রকে ইংল্যান্ডের হয়ে খেলার ইচ্ছার কথা জানান গ্রিভস। প্রায়রই তাকে ট্রায়ালের সুযোগ করে দেন। কিন্তু চোটের কারণে চিকিৎসা নিতে গ্রিভসকে স্কটল্যান্ডে যেতে হয়। এরপর নানা বাঁক পেরিয়ে স্কটিশ ক্রিকেটার হয়ে ওঠেন তিনি।
২০১৭ সালে এমসিসি স্কটল্যান্ডের হয়ে লর্ডসে মাত্র ৫৫ বলে ১০৬ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলা গ্রিভস মাসখানেক আগেও স্কটল্যান্ড দলে ছিলেন না। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে চার উইকেট নেওয়ায় দলে জায়গা হয় তার। এরপর বিশ্বকাপের মঞ্চে সুযোগ, সেখানে প্রথম সুযোগেই নিজেকে চিনিয়ে নিলেন স্কটিশ এই ক্রিকেটার।