কাতার বিশ্বকাপে কেন এত অতিরিক্ত সময় খেলানো হচ্ছে?
গত ২০ নভেম্বর পর্দা উঠেছে কাতার বিশ্বকাপের। গত দুদিনে বিশ্বকাপের কয়েকটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং এরই মধ্যে বিশ্বকাপের খেলায় কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন ফুটবলপ্রেমীরা। এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত পাঁচটি ম্যাচে সব মিলিয়ে ৮৫ মিনিট অতিরিক্ত সময় খেলা হয়েছে যা বিশ্বকাপের আগের আসরগুলোতে কখনোই দেখা যায়নি। ইংল্যান্ড বনাম ইরানের ম্যাচটি শেষ হয়েছে ১১৭ মিনিট ১৬ সেকেন্ডে, অন্যদিকে মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) আর্জেন্টিনা বনাম সৌদি আরবের ম্যাচটিও বেশ দীর্ঘায়িত হয়েছে।
এখন ক্রীড়ানুরাগীদের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে যে কেন এত অতিরিক্ত সময় দেওয়া হচ্ছে প্রতিটি ম্যাচে?
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ইরানের ম্যাচটির কথাই ধরা যাক। ইরানের গোলকিপার আলীরেজা বেইরানভান্দ মাজিদ হুসেইনির সাথে সংঘর্ষে নাকে গুরুতর আঘাত পান এবং এরপরে সাত মিনিটের মতো খেলা বন্ধ থাকে। প্রাথমিক চিকিৎসার পর আবার খেলা আরম্ভ করলেও টিকে থাকতে পারেননি, স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়তে হয় আলীরেজাকে।
এবার বিশ্বকাপে প্রতি ম্যাচে ইনজুরিতে কতখানি সময় নষ্ট হচ্ছে সেটিও কাঁটায় কাঁটায় হিসাব রাখছে ফিফা কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার আর্জেন্টিনাকে ২-১ গোলে হারিয়ে দিয়ে বিশ্বকাপের প্রথম অঘটন ঘটিয়েছে সৌদি আরব। এই ম্যাচের প্রথমার্ধে ৪৫ মিনিট শেষ হওয়ার পর অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয় ৭ মিনিট এবং দ্বিতীয়ার্ধের নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পর অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয় প্রায় ১৪ মিনিট!
ম্যাচজুড়ে একাধিকবার খেলা থামিয়ে দেওয়ার কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে খেলোয়াড়দের ইনজুরিতে পড়া, ভিডিও অ্যাসিসট্যান্ট রেফারি (ভার) প্রযুক্তির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সময় লেগে যাওয়া, বদলি খেলোয়াড় নামানো, পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেওয়া ও লাল কার্ড দেখানো, আবার এদব ঘটনার পর বাকবিতণ্ডা কিংবা কিছু খেলোয়াড়ের ইচ্ছাকৃতভাবে দেরি করে খেলা আরম্ভ করা ইত্যাদি।
গত সপ্তাহে ফিফার রেফারি কমিটির চেয়ারম্যান পিয়েরলুইজি কলিনা জানিয়েছিলেন যে, কাতার বিশ্বকাপে ম্যাচ চলাকালীন কতটুকু সময় নষ্ট হচ্ছে তা হিসাব রাখার জন্য আরও একজন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর আগে ২০১৮ সালে রাশিয়া বিশ্বকাপেও তারা এই একই কাজ করার চেষ্টা করেছিলেন।
টুর্নামেন্টের শুরুর আগের সাংবাদিক সম্মেলনে কলিনা বলেছিলেন, "রাশিয়া বিশ্বকাপে আমরা ম্যাচ চলাকালীন যে সময়টুকু নষ্ট হয় তার যথাযথ হিসাব রেখে বাড়তি সময় দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। সে কারণেই ম্যাচগুলোতে অতিরিক্ত ৬-৭ মিনিট, এমনকি ৮ মিনিটও দিতে দেখা গেছে। আপনি বিষয়টা চিন্তা করুন- প্রথমার্ধে যদি কোনো দল তিন গোল করে, তাহলে সেই গোলগুলো উদযাপন এবং পুনরায় খেলায় ফিরে আসতেই ৪-৫ মিনিট সময় চলে যায়।"
আর এসব দিক মাথায় রেখেই কাতার বিশ্বকাপে এত অতিরিক্ত সময় পর্যন্ত খেলা চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
অপটা বলছে, এক বিশ্বকাপের প্রথম বা দ্বিতীয়ার্ধে সবচেয়ে বেশি সময় 'স্টপেজ টাইম'র রেকর্ডও হয়ে গিয়েছে সোমবার (২১ নভেম্বর) ও মঙ্গলবারের (২২ নভেম্বর) ম্যাচগুলোতে।
ইংল্যান্ড বনাম ইরানের ম্যাচের প্রথমার্ধে অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়েছে ১৩ মিনিট ৫৯ সেকেন্ড। মঙ্গলবার আর্জেন্টিনা বনাম সৌদি আরবের ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়েছে ১৩ মিনিট ৫৩ সেকেন্ড। এদিকে ইংল্যান্ড বনাম ইরানের ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধেও ১৩ মিনিট ৫ সেকেন্ড বাড়তি সময় খেলা চলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ওয়েলসের ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়েছিল ১০ মিনিট ৩২ সেকেন্ড। আর সেনেগাল বনাম নেদারল্যান্ডসের ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়েছে ১০ মিনিট ৩ সেকেন্ড।
তবে স্বভাবতই, অতিরিক্ত সময় বেশি দেওয়ায় খেলার অন্তিম মুহূর্তে গিয়ে কিছু গোলও হয়েছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের ১০২ মিনিট ৩০ সেকেন্ডের মাথায় মেহেদি তারেমির পেনাল্টিটি পায় ইরান। অতিরিক্ত সময়ে গোল হওয়ার সর্বশেষ রেকর্ডে যুক্ত হয়েছে এটি।
এর পরপরই নেদারল্যান্ডস বনাম সেনেগালের ম্যাচে ৯৮ মিনিট ১৭ সেকেন্ডের মাথায় গোল করে ইনজুরি টাইমে গোলের আরেকটি রেকর্ড গড়েন নেদা্রল্যান্ডসের ডেভি ক্লাসেন।
তবে ফিফা কর্তৃপক্ষের এত বেশি অতিরিক্ত সময় বরাদ্দের সিদ্ধান্ত সহজভাবে গ্রহণ করছেন না অনেক ফুটবলভক্ত। সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে সমালোচনা-বিতর্কও তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ এ সিদ্ধান্তের জন্য ফিফার প্রশংসা করছেন, আবার কেউ কেউ অযৌক্তিভাবে খেলা দীর্ঘায়িত করার সমালোচনা করেছেন।
তবে স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখা সমর্থকদের জন্য এক ধরনের সংকটই তৈরি করেছে ফিফার এই সিদ্ধান্ত! যেহেতু শেষ মিনিটেও গোল হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়, তাই এরপর আগেভাগে মাঠ ছাড়ার আগে দুবার ভাবতে হবে দর্শকদের!
সূত্র: বিবিসি