উত্তেজনায় ঠাসা ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়াকে হারাল ঘানা
ম্যাচ শুরুর বাঁশি বাজতেই গোলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠলো দক্ষিণ কোরিয়া। শুরুর ২০ মিনিটে ঘানাকে পাত্তাই দিলো না তারা। কিন্তু ঘানাই দেখালো চমক, ১০ মিনিটের ব্যবধানেই দুবার জালের ঠিকানা করে নিলো আফ্রিকার দেশটি। দ্বিতীয়ার্ধে সমতায় ফিরতে মরিয়া কোরিয়া জবাবটা দিলো আরও কম সময়ে, তিন মিনিটে দুই গোল। তবে কয়েক মিনিটের মাথায় ব্যবধান গড়ে দিলেন মোহামেদ কুদুস, যা শতচেষ্টা করেও আর পূরণ করতে পারলো না কোরিয়া। উত্তেজনায় ঠাসা ম্যাচে রোমাঞ্চকর জয় পেল ঘানা।
সোমবার এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে কাতার বিশ্বকাপের 'এইচ' গ্রুপের রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে দক্ষিণ কোরিয়াকে ৩-২ গোলে হারিয়েছে ঘানা। তাদের হয়ে জোড়া গোল করেন কুদুস, একটি গোল করেন মোহামেদ সালিসু। দক্ষিণ কোরিয়ার পক্ষে দুটি গোলই করেন গুই সাং চো। এই জয়ে শেষ ষোলোর আশা ভালোভাবেই বাঁচিয়ে রাখলো ঘানা। তিন পয়েন্ট নিয়ে দুই নম্বরে তারা, পর্তুগাল এক নম্বরে। শুরুর ম্যাচে ড্র করা কোরিয়া নেমে গেল তলানিতে। এই হারে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেল তাদের।
ম্যাচে বল দখল থেকে শুরু করে আক্রমণ সাজানো, সবখানেই এগিয়ে ছিল দক্ষিণ কোরিয়া। ৬৪ শতাংশ সময় বল নিজেদের পায়ে রাখে অসাধারণ ফুটবল খেলা দেশটি। অবিরত আক্রমণ সাজানো কোরিয়া গোলমুখে ২২টি শট নেয়, এর মধ্যে ৭টি ছিল লক্ষ্যে। গোলমুখে ঘানার নেওয়া ৭টি শটের ৩টি লক্ষ্যে ছিল, যে তিনটিতেই গোল পায় তারা।
প্রথম মিনিট থেকেই আক্রমণ শাণাতে শুরু করে দক্ষিণ কোরিয়া। মুহুর্মুহু আক্রমণে ঘাণার রক্ষণভাগ এলোমেলো করে দেয় তারা। ঘাণা কেবল প্রতিপক্ষের আক্রমণই ফিরিয়েছে, পাল্টা আক্রমনে যেতে পারেনি। ম্যাচের শুরুর ১৭ মিনিট একচ্ছত্র আধিপত্য ধরে রেখে খেলে দক্ষিণ কোরিয়া। এশিয়ার দেশটি এই সময়ের মধ্যেই ৭টি কর্নার পায়। যদিও অবিরত এই আক্রমণ করেও জালের ঠিকানা করে নিতে পারছিল না তারা।
এরপরও চলতে থাকে কোরিয়ার দাপট। বেশিরভাগ সময়ে বল নিজেদের পায়ে রেখে আক্রমণ করে যেতে থাকে তারা। ২০ মিনিট পর্যন্ত ঘানা কেবল আক্রমণই ফিরিয়ে গেছে। এর মধ্যে একবারও দক্ষিণ কোরিয়ার রক্ষণে হানা দিতে পারেনি তারা। একবার বল নিয়ে ছুটলেও কোরিয়ার ডি-বক্সের বাইরে থেকেই বলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে তারা।
২০ মিনিট পেরিয়ে একটু থিতু হয়ে ছন্দ খুঁজে নেয় ঘানা, আক্রমণ সাজাতে থাকে আফ্রিকার দেশটি। আক্রমণ ফেরাতে ব্যস্ত থাকা ঘানাই ২৪তম মিনিটে এগিয়ে যায়। এ সময় ডি-বক্সের বেশ বাইরে ফ্রি-কিক পায় তারা। জর্ডার আয়েয়ুর ফ্রি-কিক উড়ে গিয়ে ছোট বক্সের জটলার মধ্যে পড়ে। সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাঁ পায়ের শটে বল জালে জড়ান সেন্টার ব্যাক মোহামেদ সালিসু।
সময়ের সাথে সাথে খেলা গুছিয়ে নেওয়া ঘানা গোল দিয়ে বদলে যায়। এবার তারাই দেখাতে থাকে দাপট। তবে শুরুর বেশ কয়েক মিনিট শাসন করা দক্ষিণ কোরিয়াও সমতায় ফিরতে চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে। এর মাঝে ৩২তম মিনিটে দারুণ একটি আক্রমণ সাজিয়েও সুযোগ নষ্ট করে ঘানা। লম্বা পাস থেকে বল পেয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন ইনাকি উইলিয়াম, তার সামনে প্রতিপক্ষের কেবল একজন খেলোয়াড় ছিল, কিন্তু তিনি বলটি হারিয়ে ফেলেন।
৩৪তম মিনিটে তাদের চেষ্টা বিফলে যায়নি, আবারও জালের ঠিকানা খুঁজে পায় ঘানা। ঘানার দ্বিতীয় গোলেও জড়িয়ে জর্ডানের নাম। ঘানার এই উইঙ্গার ডি-বক্সের বেশ দূর থেকে ক্রস বাড়ান। সুযোগসন্ধানী মোহামেদ কুদুস বলে হ্লাকা মাথায় ছুঁইয়ে আদায় করে নেন গোল। গোলশোধে মরিয়া কোরিয়া প্রথমার্ধের শেষ দিকে বল চাপাতে থাকে, যদিও গোলের দেখা মেলেনি। যোগ করা সময়ে উ ইয়ং জুংয়ের নেওয়া শট উপর দিয়ে চলে যায়। ২-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় ঘানা।
প্রথমার্ধের মতো দ্বিতীয়ার্ধেও বল দখলে রেখে খেলতে শুরু করে দক্ষিণ কোরিয়া। আগের অর্ধে ছিল এগিয়ে যাওয়ার তারা, কিন্তু এই অর্ধে সমতায় ফেরার চ্যালেঞ্জ। এ পথে সুবিধা করতে পারছিল না তারা। ২-০ গোলে এগিয়ে যাওয়া ঘানা সুযোগ পেলেই হানা দিচ্ছিল। ৫০তম মিনিটে ডি-বক্সে ঢুকে বাঁ পায়ের শট নেন তারিক ল্যাম্পটে, তার শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তিনি মিনিট দারুণ আক্রমণ সাজায় কোরিয়া। কাং ইন লির ক্রসে হেড নেন গুই সাং চো, বল জড়িয়ে যাচ্ছিল জালে। দারুণ দক্ষতায় ঝাঁপিয়ে দলকে বিপদমুক্ত করেন ঘানার গোলরক্ষক লরেন্স আতি-জিগি।
৫৮তম মিনিটে আর সাং চোকে আটকাতে পারেনি ঘানা। কাং ইন লির দারুণ ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে বল জালে জড়ান কোরিয়ার এই স্ট্রাইকার। ব্যবধান তখনও ২-১, তাই গতি ধরে রেখেই খেলতে থাকে এশিয়ার দেশটি। তিন মিনিটের মধ্যে মিলে যায় সাফল্য, এবারও ত্রাতা সাং চো। ৬১তম মিনিটে ছোট ডি-বক্সে সিন সু কিমের থেকে চিপ ইন পেয়ে লাফিয়ে উঠে হেড করে নিশানাভেদ করেন তিনি। সমতায় ফিরে বদলে যায় দক্ষিণ কোরিয়া, গতিময় ফুটবল কেরতে থাকে তারা।
কিন্তু এই সুখ বেশি সময় থাকেনি কোরিয়ার। ৬৮তম মিনিটে কোরিয়ার ডি-বক্সে হানা দেয় ঘানা। ছোট বক্সের একটু বাইরে থেকে গোলে শট নেন ইনাকি উইলিয়ামস। কিন্তু মিস শট হয়, তার পায়ে বল লেগে দিক পরিবর্তন হয়ে বল চলে যায় ডান পাশে। সেখানে ছিলেন কুদুস, ঘানার এই রাইট উইঙ্গার বাঁ পায়ের প্লেসিং শটে বল জালে জড়ান। তার দ্বিতীয় গোলে আবারও এগিয়ে যায় ঘানা।
আরেকবার পিছিয়ে পড়া দক্ষিণ কোরিয়া অবিরত আক্রমণ সাজাতে থাকে। ৭৫তম মিনিটে ডি-বক্সের একটু বাইরে থেকে কাং ইন লির অসাধারণ ফ্রি-কিক ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে ফেরান ঘানার গোলরক্ষক। কর্নার কিক থেকে গোল করার সুযোগ পায় কোরিয়া, কিন্তু কিম জিন সু-এর শট ফিরিয়ে দলকে বিপদমুক্ত করেন সালিসু। ৮৪তম মিনিটে কিমের আরেকটি শট বারপোস্টের উপর দিয়ে চলে যায়।
গোলশোধে মরিয়া দক্ষিণ কোরিয়া যোগ করা ১০ মিনিটে একের পর পর এক আক্রমণ সাজায়। এ সময় ঘানার ডি-বক্সেই বেশিরভাগ সময় বল থাকে, একবারের জন্য বল কোরিয়ার রক্ষণে যায়নি। তাদের টানা আক্রমণে দিশেহারা হয়ে ওঠে এগিয়ে থাকা ঘানা। ৯৭ মিনিটে দারুণ সুযোগ তৈরি করে কোরিয়া, কিন্তু লি-এর হেড অসাধারণ দক্ষতায় ফেরান ঘানার গোলরক্ষক আতি-জিগি। এরপরও চেষ্টা চলতে থাকে, তবে জালের ঠিকানা করে নিতে পারেনি তারা।