পেলে: সময়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকা এক কিংবদন্তি
বর্তমান সময়ে প্রযুক্তির কল্যাণে তাৎক্ষনিক খ্যাতি পাওয়া খুব একটা কঠিন কাজ নয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে খুব সহজের নিজের প্রতিভা দেখানো যায় গোটা বিশ্বের মানুষের কাছে। কিন্তু যখন এই সুযোগ ছিলো না, তখন কীভাবে নিজেকে মানুষের কাছে চিনিয়েছিলেন পেলে? কীভাবে গোটা বিশ্ব জেনেছিল, পেলে নামে কেউ আছেন, যিনি ফুটবল খেলাটির সমার্থক?
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দ্বারা নিজের প্রতিভা দেখানোর এই রীতি খুব বেশিদিনের পুরোনো নয়। ১৫ বছর আগেও যারা খেলতেন, তাদের খেলা বর্তমান প্রজন্ম দেখতে পায় ইউটিউবে। আজ থেকে ৩০-৩৫ বছর আগে যারা খেলেছেন, তাদের খেলাও ইউটিউবে পাওয়া যায়, কিন্তু সংখ্যায় সেটি বেশ কম। তাহলে আজ থেকে ৫০ বছর আগে যারা খেলেছেন, তাদের খেলা বর্তমান প্রজন্ম দেখবে কেমন করে!
ঠিক এখানেই মহান পেলে, তিনি যখন তার সেরা ফর্মে ছিলেন তখন মিডিয়া এতোটাও উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার দেখেনি। তবুও পেলেকে চিনতেন সারা বিশ্বের মানুষ। কিন্তু কীভাবে? মুখে মুখে! হ্যাঁ, পেলের কারিশমা এতোই বিশাল ছিলো যে তার নাম রটে গিয়েছিল মানুষের মুখে মুখে।
এখন যেমন ৩০-৪০ সেকেন্ডের ভিডিও দেখেই মানুষ কাউকে বিচার করে ফেলতে পারে বা একজনের নাম মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে যেতে পারে, পেলের সময় এসবের কোনোকিছুই ছিলো না। তবুও মানুষ কেবল শুনে শুনে আর নিজেদের মধ্যে বলাবলি করেই জেনে গিয়েছিল পেলে কে!
কতোটা বড় ব্যক্তিত্ব এবং নিজের কাজে কতোটা পারদর্শী হলে এটা সম্ভব! পেলেই প্রথম ফুটবলার, যার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রসাধনী কোম্পানি এবং অসংখ্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নিজেদের বিজ্ঞাপন করিয়ে নিয়েছে। কারণ, পেলে যেই বিজ্ঞাপনে থাকবেন, সেটি দেখতে এবং সেই পণ্য ব্যবহার করতে মানুষ পাগল হয়ে যাবে, এটি তারা জানতেন।
পেলের সময় টিভি ছিলো একমাত্র উপায় কোনো কিছু জানার বা দেখার। সেই টিভিও যে সবার ঘরে ঘরে ছিলো তা কিন্তু নয়। গুটিকয়েক ঘরে ছিলো আধুনিক টিভি, আর সেখানেই দেখা যেতো পেলের মুখ। তাহলে পেলের মুখ কতোটা পরিচিত ছিলো যে কেবল কয়েকটি টিভি থাকা সত্ত্বেও লোকজন তাকে এতো ভালোভাবে চিনতো! যার ফলে তার করা যে কোনো পণ্যের বিজ্ঞাপন চলতো হুড়মুড় করে।
বর্তমান যুগের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পেলের সময় থাকলে আজ তার সম্পর্কে আরো অনেক কিছুই জানা সম্ভব হতো। বিশেষ করে পেলে যেটির জন্য এতো বিখ্যাত, তার সুন্দর ফুটবলের নিদর্শনটা দেখতে পেতো এই প্রজন্মের মানুষরাও।
লোকমুখে শোনা পেলের খেলার কথা এই প্রজন্মের কাছে রূপকথার মতোই লাগে। মেসি, রোনালদো, নেইমার কিংবা এমবাপ্পেরা আজ যতোটা সহজলভ্য, হাত বাড়ালেই পাওয়া যায়, পেলে কখনোই সেরকম ছিলেন না।
তবুও তার নাম উচ্চারিত হয় সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়দের কাতারে। অনেকের কাছেই তিনি ফুটবলের ঈশ্বর। শুধুমাত্র নাম শুনেই যার পরিচয় বোজা সারা হয়ে যায়, তিনি কতোটা মহান, তা বোধোহয় না ভাবলেও চলছে।