‘এই ট্রফির মাধ্যমে মোহামেডান এগিয়ে যাবে’
একটু পরপরই ডাকআউটে তাকে খুঁজে নিচ্ছিল সম্প্রচার ক্যামেরা। কখনও তিনি ম্যাচে পিছিয়ে পড়ার ব্যথায় কাতর, কখনও আবার সমতায় ফেরার আনন্দে উদ্বেলিত। এভাবে সময় কেটেছে ১২০ মিনিট। এরপর টাইব্রেকার রোমাঞ্চ, যেখানে বিজয়ের হাসি হাসে তার দল। চওড়া হাসি ফোটে আলফাজ আহমেদের মুখেও। এক দৌড়ে গিয়ে ফুটবলারদের শিরোপা উৎসবে মিশে যান মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের কোচ। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীকে হারিয়ে দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান, এটা মোহামেডানের সবার কাছেই বিশেষ। আর এই বিশেষ জয়টি মোহামেডানকে এগিয়ে নেবে বলে মনে করেন আলফাজ।
মঙ্গলবার কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে টাইব্রেকারে আবাহনীকে ৪-২ গোলে হারিয়ে ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপের শিরোপা জিতেছে মোহামেডান। রুদ্ধশ্বাস ফাইনালের ৯০ মিনিট ৩-৩ সমতায় শেষ হয়। অতিরিক্ত সময়ে দুই দলই একটি করে গোল করে, ৪-৪ সমতা থাকায় খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। যেখানে আবাহনীর দুটি শট ঠেকিয়ে দলকে শিরোপার স্বাদ এনে দেন মোহামেডানকে বদলি গোলরক্ষক আহসান হাবীব।
মোহামেডান তাদের সোনালী সময় ফেলে এসেছে অনেক আগে। এই টুর্নামেন্টে তারা সর্বশেষ শিরোপা জেতে ২০০৯ সালে। সেবার আবাহনীকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় মোহামেডান। এরপর এই টুর্নামেন্টে শিরোপা তো দূরের কথা, কোনোবার ফাইনালও খেলতে পারেনি। কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে ওইবারই সর্বশেষ দেখা হয় ঐতিহ্যবাহী দল দুটির। সর্বশেষ ২০১৪ সালে কোনো টুর্নামেন্টের শিরোপা জেতা মোহামেডান ৯ বছর পর শিরোপার স্বাদ নিলো।
আবাহনীকে হারিয়ে জেতা এই শিরোপা মোহামেডানকে এগিয়ে নেবে বলে বিশ্বাস আলফাজের। শিরোপা উৎসবের পর মোহামেডান কোচ বলেন, 'এর আগেও আবাহনীর বিপক্ষে এমন ফাইনাল মোহামেডান খেলেছে, আমি নিজেও সেই ম্যাচে খেলেছি, কিন্তু আমি সেই ম্যাচটাকে এগিয়ে রাখব না।'
'বাংলাদেশের ফেুটবলে মোহামেডান আবাহনীর লড়াই… এই ম্যাচের জয়ে মোহামেডানের জয় হয়নি, জয় হয়েছে বাংলাদেশের ফুটবলের। অবশ্যই এটা আমার জীবনের স্মরণীয় দিন হয়ে থাকবে। খেলোয়াড় হিসেবে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম, কোচ হিসেবে চ্যাম্পিয়ন হলাম। স্মৃতি হয়ে থাকবে। এই ট্রফির মাধ্যমে মোহামেডান এগিয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।'
মোহামেডানের পক্ষে চারটি গোলই করেন সুলেমানে দিয়াবাতে। টাইব্রেকারের আগে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়ার আগে দারুণ সব সেভ করেন গোলরক্ষক সুজন হোসেন। তার বদলি হিসেবে নেমে আলো ছড়ান আহসান হাবীব বিপু, টাইব্রেকারে ফেরান আবাহনীর দুটি শট।
সাফল্যের কৃতিত্ব দলকে দিয়ে আলফাজ বলেন, 'বিরতির সময় ড্রেসিংরুমে ছেলেদের বলেছি তোমরা মাথা ঠাণ্ডা রেখে খেলো। ফরমেশনে পরিবর্তন এনেছিলাম। তারা সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে। প্লেয়ার বদলই আমি মনে করি পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। সুজনকে বদল করার সময় একটু টেনশন ছিল । তবে আমাদের আগে থেকেই পরিকল্পনা ছিল বিপুকে টাইব্রেকারে নামানোর।'
'আমার মনে হয়, প্লেয়াররা যে কমিটেড ছিল, সুলেমান দিয়াবাতের পারফরম্যান্স অসাধারণ, মুজাফ্ফরভের হাত ভেঙে গেলেও সে দলের জন্য খেলেছে, আসলে আমি বলব-এই প্রশংসার দাবিদার খেলোয়াড়রা। তারা তাদের সবটুকু উজাড় করে দিয়ে মোহামেডানের জন্য খেলেছে এবং চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।' যোগ করেন আলফাজ।