‘লাভ-আয়ের কথা চিন্তা করে বিপিএলে মালিকানা নিইনি’
ড্রাফটের আগের দিন ঢাকা ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকানা হারায় রুপা ফেব্রিক্স লিমিটেড এন্ড মার্ন স্টিল লিমিটেড। ফ্র্যাঞ্চাইজিটি বিসিবির তত্ত্বাবধানে ছিল। ড্রাফট থেকে খেলোয়াড় নিয়ে দলও গড়ে বিসিবি। এর কয়েকদিন পর মিনিস্টার গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি হয় বিসিবির, দলটির নাম এখন মিনিস্টার ঢাকা।
দল গড়তে পারলেও আফসোস নেই মিনিস্টার গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ রাজ্জাক খান রাজের। মাশরাফি বিন মুর্তজা, তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, আন্দ্রে রাসেলদের নিয়ে গড়া মিনিস্টার ঢাকা দলটি নিয়ে আশাবাদী তিনি। ফ্র্যাঞ্চাইজিটির চেয়ারম্যানের পদে থাকা রাজ্জাক খানের বিশ্বাস, তার দল দারুণ ক্রিকেট উপহার দেবে।
ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত থাকাই তার মূল উদ্দেশ্য। লাভ বা আয় করার জন্য বিপিএলের মালিকানা নেননি বলে জানালেন তিনি। বিপিএলে মালিকানা কেনা, দল নিয়ে পরিকল্পনা, এবারের দলটির কাছে আশা, বড় প্ল্যাটফর্মে কোম্পানির মার্কেটিং, বিনোয়োগের উদ্দেশ্যসহ আরও অনেক বিষয় নিয়ে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে কথা বলেছেন রাজ্জাক খান। বিপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি স্বত্বাধিকারীদের নিয়ে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের বিশেষ সিরিজে আজ থাকছে চতুর্থ পর্ব।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড: শেষ দিকে এসে মালিকানা পেয়েছেন আপনারা। দলও বিসিবির গড়ে দেওয়া, বাকি সবকিছু গুছিয়ে নেওয়া কঠিন হয়ে গেছে কিনা?
এম এ রাজ্জাক খান রাজ: সত্যিকার অর্থে শেষ দিকে মালিকানা পেলেও আমার ইতোমধ্যে সবকিছু গুছিয়ে নিয়েছি। কিছু কাজ বাকি থাকলেও আশা করছি যেটুকু সময় আছে, এর মধ্যে সফলভাবে শেষ করে আমাদের দলের ম্যাচ শুরু করতে পারব।
টিবিএস: আরেকটু আগে থেকে বিপিএল আয়োজনের কার্যক্রম শুরু করলে আপনারা যারা ফ্র্যাঞ্চাইজি আছেন, তাদের জন্য সুবিধা হয় কিনা?
রাজ্জাক খান: অবশ্যই, আগে থেকে কার্যক্রম শুরু করলে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে পারতাম। সেটার মাধ্যমে আমাদের ফ্র্যাঞ্চাইজিকে আরও সুন্দরভাবে গুছিয়ে নিতে পারতাম। সে জন্য বোর্ডের প্রতি অনুরোধ থাকবে বিপিএলের কার্যক্রম যেন আগে থেকেই সময় নিয়ে আয়োজনটা শুরু করে।
টিবিএস: দলের যে প্রস্তুতি হয়েছে, সেটা কি যথেষ্ট?
রাজ্জাক খান: দেশের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করেই স্বল্প সময়ের মধ্যে টুর্নামেন্ট শুরু হতে যাচ্ছে। আমরা যতটুকু সময় পেয়েছি, এর মধ্যে আমাদের প্রস্তুতি অনেকটাই ভালো হয়েছে। এ ছাড়া আমাদের খেলোয়াড়রাও ইতোমধ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছে। আশা করি আমরা টুর্নামেন্টের মধ্য দিয়ে ভালো কিছু উপহার দিতে পারব এবং আমাদের খেলোয়াড়রা তাদের সর্বোচ্চটা দিতে পারবে।
টিবিএস: দলটা বিসিবির গড়া, কেমন দল হয়েছে বলে মনে করেন? কতদূর যেতে পারে দলটি, কতোটা আশাবাদী?
রাজ্জাক খান: আমাদের দল ভালো হয়েছে। অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের নিয়ে আমাদের দল সাজানো। এ ছাড়া বিপিএলের প্রত্যেকটি দল শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে মাঠে নামে। আমরাও সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছি। আশা করি আমাদের খেলোয়াড়রা ভালো পারফর্ম করবে এবং শিরোপা ছিনিয়ে আনবে।
টিবিএস: মাশরাফি, তামিম ও মাহমুদউল্লাহর মতো তিন সিনিয়র ক্রিকেটারকে একসঙ্গে পাওয়া দলের জন্য কতোটা অনুপ্রেরণার?
রাজ্জাক খান: মাশরাফি দলে থাকা মানেই অনেক বড় অনুপ্রেরণার ব্যাপার, মাঠে থাকুক কিংবা ড্রেসিং রুমে। তামিম, মাহমুদউল্লাহ, রুবেল, আরাফাত সানি তো আছেই। আমরা খবুই আনন্দিত এসব সিনিয়র খেলোয়াড় পেয়ে। এর সাথে আরও যুক্ত হচ্ছে বিদেশি খেলোয়াড় আন্দ্রে রাসেল, ইসুরু উদানা, মোহাম্মদ শাহজাদ মোহাম্মদী, কায়েস আহমেদ, , ফজল হক ফারুকীদের মতো ক্রিকেটাররা।
টিবিএস: মাশরাফির ইনজুরি সমস্যা আছে, শুরুর কয়েকটা ম্যাচে তাকে দলে পাবেন না। পরের ম্যাচগুলো খেলা নিয়েও শঙ্কা আছে। বিপিএল মিশন শুরুর আগে এটা দলের জন্য ধাক্কা কিনা?
রাজ্জাক খান: মাশরাফির বিষয় নিয়ে এখন কোনও মন্তব্য করতে চাচ্ছি না। এটা আমাদের টিম ম্যানেজার কিংবা কোচরা বুঝে শুনে সিদ্ধান্ত নেবেন। আমরা আশাবাদী শুরু থেকেই মাশরাফি খেলবে। তবে ইনজুরি হলে সেটা ভিন্ন ইস্যু। কিন্তু সেটা খুব বড় একটি ধাক্কা নয়। শুরু থেকে মাশরাফি থাকলে অবশ্যই ভালো হতো। আমরা চেষ্টা করব মারশাফিকে নিয়েই ম্যাচ শুরু করতে।
টিবিএস: বিপিএলের কয়েকটি দলের বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার, স্টাফ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে বলে বিসিবির মেডিকেল বিভাগ জানিয়েছে। চ্যালেঞ্জটা বেড়ে গেল কিনা?
রাজ্জাক খান: আসলেই পুরো পৃথিবীই এখন করোনার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে আছে। ইতোমধ্যে দেশে ওমিক্রনের মাত্রাও বেড়ে গেছে, আক্রান্তও বেড়েছে। আমরা শুনতে পেরেছি কয়েকজন স্টাফ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। সেক্ষেত্রে কিছুটা চ্যালেঞ্জ থেকেই যায়। তারপরও আমরা সবকিছু বিবেচনা করেই সামনের দিকে এগিয়ে যাব। এ ছাড়া এই সময়ে সবাইকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সবকিছু শুরু করার চেষ্টা করব।
টিবিএস: কোন ভাবনা থেকে ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত হওয়া? কিংবা বিপিএলকেই কেন বেছে নিলেন?
রাজ্জাক খান: মিনিস্টার গ্রুপের শুরু থেকেই দেশের বিভিন্ন ক্রিকেট খেলার সাথে যুক্ত ছিল। ২০১৪ সাল থেকে আমরা বিসিবি-এর সাথে যুক্ত হয়েছি। দেশের কিংবা বিদেশের মাঠিতে বিভিন্ন খেলায় আমরা স্পন্সর হিসেবে থেকেছি। এ ছাড়া বিপিএলে যুক্ত রয়েছি। গত বছরই রাজশাহী দলের মালিকানায় ছিল মিনিস্টার গ্রুপ। সবকিছু মিলিয়ে বিপিএল একটি বড় প্ল্যাটফর্ম, যেখানে দেশি ও বিদেশি খেলোয়াড়ের সমন্বয়ে একটি উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
টিবিএস: বিপিএলের আগে ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট কোনো কার্যক্রম ছিল আপনাদের?
রাজ্জাক খান: ২০১৪ সাল থেকে আমরা বিসিবির সাথে যুক্ত রয়েছি। দেশের কিংবা বিদেশের মাঠিতে বিভিন্ন খেলায় আমরা স্পন্সর, এসোসিয়েট স্পন্সর, টাইটেল স্পন্সর এবং পাওয়ার্ড বাই হিসেবে যুক্ত থেকেছি। এ ছাড়া শুধু ক্রিকেট নয়; ফুটবল, ভলিবলসহ দেশের অন্যান্য খেলার সাথেও আমরা যুক্ত রয়েছি।
টিবিএস: ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি ও প্লেয়ার্স পেমেন্ট বাবদ বিসিবিকে আপনাদের ৫ কোটি টাকার পে অর্ডার দিতে হয়েছে। এর বাইরেও বেশ খরচ আছে, সব মিলিয়ে এবার আপনাদের কতো খরচ হবে বলে মনে হচ্ছে? (চট্টগ্রাম ও বরিশালের মালিক বলেছে তাদের ১০-১২ কোটি টাকা খরচ হবে)
রাজ্জাক খান: আমরা এখনও অনুমান করে কিছু বলতে পারছি না কতো খরচ হবে। তবে পুরো টুর্নামেন্ট শেষ হলে বলতে পারব কত টাকা খরচ হয়েছে।
টিবিএস যেহেতু আপনি ব্যবসায়ী, ব্যবসার ব্যাপারটা নিশ্চয়ই মাথায় থাকে। এতো খরচ করে বিপিএল থেকে কতটা পাবেন? খরচটা কি তুলে নেওয়া সম্ভব? কিংবা যদি লাভের কথা বলি, সেটা কি সম্ভব?
রাজ্জাক খান: আসলে সব কিছুর মধ্যে লাভ-ক্ষতি চিন্তা করা যায় না। আমি ব্যাবসায়ী বলে কি খেলা পছন্দ করতে পারব না? ক্রিকেট খেলা আমার আবেগ ও ভালোবাসার জায়গা। সেই ইচ্ছে থেকেই আমি শুরু থেকে ক্রিকেট খেলার সাথে যুক্ত থেকেছি। আর যত দিন আছি তত দিনই খেলার সাথে যুক্ত থাকার চেষ্টা করব।
টিবিএস: বিপিএল থেকে লাভ করা বা আয়ের উৎস কোনগুলো? সেটা কি যথেষ্ট?
রাজ্জাক খান: লাভ-আয়ের কথা চিন্তা করে বিপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি নিইনি। আমাদের সাথে আরও কয়েকটি কোম্পানি যুক্ত হয়েছে। তাদের সকলের সহযোগিতায় আমার দলটি পরিচালনা করে যাব। লাভ–ক্ষতি সেটা পরের বিষয়। মানুষকে সুন্দর খেলা উপহার দেওয়াটাই বড় ব্যাপার।
টিবিএস: কোম্পানির মার্কেটিংয়ের জন্য বিপিএল কত বড় মঞ্চ? যে মার্কেটিং হবে, সেটা কতোটা মূলবান কোম্পানির জন্য?
রাজ্জাক খান: এর আগেই বলেছি ক্রিকেট কোনো ব্যবসার জায়গা নয়। নিজের ভালো লাগা থেকেই ক্রিকেটে যুক্ত রয়েছি। এর সাথে যুক্ত হতে পেরে নিজেকেও ধন্য মনে করছি।
টিবিএস: বিসিবি দীর্ঘমেয়াদীভাবে মালিকানা বিক্রি করবে বলে পরিকল্পনা সাজাচ্ছে, সেটা হলে মালিকানায় থাকবেন?
রাজ্জাক খান: বিসিবি বিপিএল নিয়ে কী পরিকল্পনা সাজাচ্ছে, সেটা তাদের বিষয়। তবে সময় হলে চিন্তা-ভাবনা করে দেখা যাবে কী করা যায়। সময়ই বলে দিবে কী করব তখন। এখন এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে যাচ্ছি না।
টিবিএস: আইপিএলে মালিকানা না বদলানোয় দলগুলোর নামে খুব বেশি পরিবর্তন আসে না, শুরু থেকে এখনও এক নাম। তাদের নির্দিষ্ট একটা ভক্ত-সমর্থক গোষ্ঠি আছে। কিন্তু বিপিএলে সেটা নেই। এটা টুর্নামেন্টটার জনপ্রিয়তা নষ্ট করছে কিনা?
রাজ্জাক খান: দলের নাম পরিবর্তনে কখনো ফ্যানবেজ নষ্ট হয় না। যারা খেলাকে পছন্দ করে, তাদের কাছে যে নামেই আসুক না কেন তারা সেটা খুব সহজেই গ্রহণ করবে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে মালিকানা পরিবর্তন হলে দলের নাম পরিবর্তন করবে, সেটাই স্বাভাবিক।
টিবিএস: বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য আপনার কোম্পানির কোনো ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আছে?
রাজ্জাক খান: মিনিস্টার গ্রুপ শুরু থেকেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাথে যুক্ত রয়েছে। ভবিষ্যতেও মিনিস্টার গ্রুপ ক্রিকেটের সাথে যুক্ত থাকার চেষ্টা করে যাবে।
টিবিএস: আপনার কোম্পানি সম্পর্কে একটু জানতে চাই…
রাজ্জাক খান: আমি মিনিস্টার গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ রাজ্জাক খান রাজ। এ ছাড়া এফবিসিসিআইর সহ-সভাপতি হিসেবে যুক্ত রয়েছি। মিনিস্টার গ্রুপ দেশীয় একটি ব্র্যান্ড হিসেবে যাত্রা শুরু করে। সেই সঙ্গে বিশ্বসেরা ব্র্যান্ড হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছে মিনিস্টার গ্রুপ। ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যের একটি সফল ব্র্যান্ড হিসেবে মিনিস্টার দেশের মানুষের কাছে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। 'আমার পণ্য আমার দেশ, গড়ব বাংলাদেশ' এই স্লোগানকে লালন করে ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছি। দেশ জয়ের পর মিনিস্টার গ্রুপের লক্ষ্য এবার বিশ্ব জয়। ২০০২ সালে যাত্রা শুরু করা এই প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে ৫ হাজারেরও বেশি মানুষ কাজ করছেন।