মহাস্থানগড়সহ দেশের সকল পুরাকীর্তি উন্নয়নের উদ্যোগ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের
বগুড়ার মহাস্থানগড়সহ দেশের ৫০৯টি পুরাকীর্তি ও সবগুলো গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। এই প্রকল্পের অংশ হিসেবে পুরাকীর্তিগুলোতে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে তারা।
সম্প্রতি মহাস্থানগড় পরিদর্শনের সময় এসব কথা জানান প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক মো: হান্নান মিয়া।
তিনি জানান, প্রাচীন এই দূর্গ নগরীর ভেতরে সব জমি অধিগ্রহণের পাশাপাশি নতুন যাদুঘর তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক ড. মোছা: নাহিদ সুলতানা জানান, মহাস্থানগড় দূর্গনগরীতে জমি রয়েছে প্রায় ৫১৬ একর। ইতোমধ্যে দূর্গের ভেতরে প্রায় ৫৫ একর ও বাইরে প্রায় ৪১ একর জমি অধিগ্রহণ করেছে সরকার।
মহা-পরিচালক জানান, মহাস্থানগড় দূর্গ নগরীর পুরোটাই যেন তরুণ-প্রবীনসহ সবাই দেখতে পারেন সেজন্য দূর্গের চারিদিকে রাস্তা নির্মানের পরিকল্পনা আছে। একই সাথে করতোয়া নদীর পূর্ব পার্শ্বে আধুনিক একটি যাদুঘর নির্মাণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সাবেক মহা-পরিচালক ড. শফিকুল আলম জানান, গবেষণা ও জরিপে পাওয়া তথ্যে বলা হয়েছে, বাংলার সবচেয়ে বড় এবং প্রাচীন দূর্গনগরী মহাস্থানগড়কে কেন্দ্র করে ৭৬ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিভিন্ন সময় তৈরি করা হয় নানা ধরনের অবকাঠামো। এর মধ্যে আছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভাসু বিহার ও বিহার। এমনকি এ দূর্গনগরীর সাথে এক সময় ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল রোমান সাম্রাজ্যেরও।
প্রত্নতাত্ত্বিকরা বলছেন, প্রত্নতাত্ত্বিক খননে পুন্ড্রনগর, মহাস্থানগড় এবং আশেপাশের এলাকায় পাওয়া গেছে খৃষ্টপূর্ব প্রায় ৪’শ বছরেরও পুরানো নিদর্শন।
খননে মহাস্থানগড় এলাকায় পাওয়া গেছে মৌর্যপূর্ব, মৌর্য, গুপ্ত, পাল, সেন ও মুসলিমসহ নানা আমলের বেশ কিছু নিদর্শন আর অবকাঠামো। কিন্তু এখনো মাটির নিচে রয়ে গেছে আরও নানা ধরনের নিদর্শন।
“পুরো এলাকা খনন করে দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হলে একদিকে যেমন পর্যটকদের আকর্ষণ করা যাবে অন্যদিকে এ অঞ্চলের ইতিহাস আর ঐতিহ্য হবে আরও সমৃদ্ধ”, বললেন ড. শফিকুল আলম।
মৌর্যপূর্ব, মৌর্য, গুপ্ত, পাল, সেন আর মুসলিমসহ নানা আমলের বিভিন্ন পুরাকীর্তিগুলো দেখতে আসা দশনার্থীদের সুবিধার জন্য অবকাঠামো উন্নয়নের গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, "পর্যটকদের প্রত্নস্থলে ধরে রাখতে হলে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।"
দিনাজপুরে কান্তজিউ মন্দির, রাজশাহীতে পুঠিয়া, নওগাঁয় বিশ্বঐতিহ্য পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার, বগুড়ার বেহুলার বাসরঘর, বিহার আর ভাসুবিহারের মতো আলোচিত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর পরিচিতি বাড়ানো গেলে সেগুলো গবেষক আর পর্যটকদের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে আশা প্রকাশ করেন ড. শফিকুল আলম।