মহাস্থানগড়ে এবার মিললো আড়াই হাজার বছরের পুরনো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন
বগুড়ার মহাস্থানগড়ে প্রত্নতাত্ত্বিক খননে এবার পাওয়া গেছে মৌর্য, শুংগ, গুপ্ত, পালসহ বিভিন্ন আমলের ইটের অবকাঠামোর পাশাপাশি নানা ধরনের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন।
বাংলাদেশ-ফ্রান্সের ১১ সদস্যের একটি যৌথ খনন দল গত ৯ নভেম্বর মহাস্থানগড়ে বৈরাগী ভিটা এলাকায় খনন শুরুর কয়েকদিনের মধ্যেই মাটির নিচে পাওয়া যায় যিশু খ্রিস্টের জন্মেরও অন্তত তিনশ বছর আগে ইটের তৈরি অবকাঠামো। একই সঙ্গে খননে মিলেছে শুংগ আমলে তৈরি বেশ কিছু ইটের অবকাঠামো।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ও বাংলাদেশ খনন দলের অন্যতম সদস্য মজিবুর রহমান বলেন, ওই এলাকায় যৌথ খননে মৌর্য আমল অর্থাৎ ২ হাজার ৩০০ বছর আগের তৈরি ইটের কিছু অবকাঠামো পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে শুংগ আমলে তৈরি কিছু টাইলসও পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ খনন দলের আরেক সদস্য মো. জাহেদ বলেন, খননে পাওয়া কূপগুলোর মধ্যে ইটের তৈরি একটি কূপও রয়েছে। সুন্দর গাঁথুনি দিয়ে তৈরি করা এই কূপটি কোন আমলে তৈরি তা এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। তবে মহাস্থানগড়ে খননে এর আগে কখনো ইটের তৈরি কূপ পাওয়া যায়নি।
‘অপূর্ব নকশায় তৈরি করা এই কূপে যেসব ইট ব্যবহার করা হয়েছে, তা শুধু কূপ নির্মাণের জন্যই তৈরি’ বলেন তিনি।
বাংলাদেশ খনন দলের আরেক সদস্য মহাস্থান জাদুঘরের তত্ত্বাবধায়ক রাজিয়া সুলতানা বলেন, ‘এবারের খননে এসব নিদর্শনের পাশাপাশি মৃৎ পাত্র, পোড়ামাটির গুটিকা, অলংকৃত ইট ও উত্তরাঞ্চালীয় কালো মৃৎ পাত্রের চকচকে টুকরোসহ আরও অনেক কিছু পাওয়া গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মহাস্থানগড় এমন একটি প্রত্নতাত্ত্বিক সাইট, যেখানে খনন করলেই কিছু না কিছু পাওয়া যায়। এবারও আমরা পেয়েছি অনেক কিছু। এসবের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এখানে খনন চালিয়ে গেলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও তথ্য পাওয়া যাবে।’
ফ্রান্স দলের ফিন্ড ডিরেক্টর কলিন লিফফ্রাঙ্ক বলেন, ‘গুপ্ত আর শুংগ আমলে নিদর্শনের পাশাপাশি পাওয়া গেছে দুই তিনটি তামার মুদ্রা। এসব মুদ্রা ছাপাঙ্কিত।’
তিনি আরও জানান, ‘এবারের খননে সাত থেকে আটটি কূপ পাওয়া গেছে। এর অধিকাংশই প্রাচীন। এই কূপগুলো গুপ্ত ও পাল আমলের বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।’
‘তামার তৈরি মুদ্রাগুলো পাওয়া গেছে খননের উপরে অংশে। আর সে কারণেই নিশ্চিত করে বলা কঠিন কোন সময়ে এই মুদ্রা ব্যবহৃত হয়েছে’ বললেন কলিন।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক (রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ) ড. নাহিদ সুলতানা বলেন, এই খনন কার্যক্রম আরও কিছুদিন চলবে। মহাস্থানগড়ে প্রথম বৈরাগী ভিটা এলাকায় খনন করা হয় ১৯২৮ সালে। ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক কে এন দিক্ষিত সে সময় খনন পরিচালনা করেন। খননে তখনও পাওয়া যায় প্রাচীন অবকাঠামোসহ নানা ধরনের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন।