হাসপাতালের অব্যবস্থাপনার মধ্যেও ‘নিয়মিত চেক আপ ও মনোবলের কারণে’ সুস্থ হয়েছেন ওমর আলী
মারাত্মক প্রাণঘাতী রোগ কোভিড-১৯ এর সঙ্গে লড়াই করে পরিবারের অন্য চার সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালের থেকে নিজের ঘরে ফিরেছেন চট্টগ্রামের এক ব্যক্তি। তবে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে এখনো হাসপাতালের শয্যায় বেঁচে ফিরে আসার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তার মেয়ে।
করোনা সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসা এই ব্যক্তির নাম ওমর আলী। পেশায় তিনি একজন গার্মেন্টস কর্মকর্তা।
আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে হাসপাতালের চরম অব্যবস্থাপনার মধ্যেও মধ্যেও চিকিৎসক নার্সদের নিয়মিত চেক আপ ও নিজের মনোবলের কারণে কীভাবে সুস্থ হয়ে ফিরেছেন সে কথা তিনি জানিয়েছেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে।
তিনি বলেন, "আমার সবাই হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে চলে এসেছি। কিন্তু আমার মেয়েটা এখনো হাসপাতালে। তার জন্য এখন দুঃচিন্তা হচ্ছে।"
"ডাক্তাদের নিয়মিত চেকআপ ও নার্সদের নিয়মিত ওষুধ সেবন এবং মনোবল শক্ত থাকায় ২২ দিনের চিকিৎসায় করোনা সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছি আমি। তবে নিয়মিত চিকিৎসা হলেও হাসপাতালের প্রচুর অব্যবস্থাপনা রয়েছে।"
চট্টগ্রাম নগরীর নগরীর সিটি গেইট এলাকার একটি গার্মেন্টসে কমার্সিয়াল এসিসটেন্স হিসেবে কাজ করা ওমর আলী জানান, তীব্র জ্বর থাকার কারণে করোনা সংক্রমণের পরীক্ষার নমুনায় পজিটিভ আসে তার। এরপর গত ৯ এপ্রিল হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। টানা ১৪ দিন হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে ২২ এপ্রিল সুস্থ হয়ে বাসায় ফেরেন তিনি। তিনি ছাড়াও তার পরিবারের আরো ৪ জন করোনায় সংক্রমিত হয়। পরিবারের তিন জন সদস্য সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরলেও এখনও হাসপাতালে রয়েছে মেয়ে সামান্ত আক্তার।
হাপাতালের চিকিৎসা সম্পর্কে তিনি বলেন, "ভর্তির পর থেকে আমাকে রিকুনাল ট্যাবলেট এবং অ্যাজিত্রমাইসিন দেওয়া হয়। প্রতিদিন দুপুরে নিরাপদ দুরত্বে থেকে ডাক্তার দেখে যেত। এছাড়াও নার্সরা দিনে তিনবার এসে ওষুধ দিয়ে যেত। প্রথম দুই থেকে তিন দিন খাবার হিসেবে দেওয়া হয়েছে ভাজি আর ডিম। কিন্তু তিন দিন পর থেকে মুরগী, ডিম ও মাছ দেওয়া হতো। সকালে ডিম ও পাউরুটি দেওয়া হতো। আমরা শুনেছি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রোগীদের জন্য খাবার পাঠাতো।"
তিনি বলেন, "আমরা ৪০ জন রোগী ছিলাম একটি ওয়ার্ডে। সবার জন্য একটি বাথরুম এবং একটি বেসিন। ফলে চিকিৎসা নিয়ে যে নেগেটিভ হচ্ছে, সেই আবার ওই বাথরুম ব্যবহার করে আবার পরীক্ষায় পজিটিভ হয়ে যাচ্ছে। প্রথম ২ দিন খাবার পানি পাইনি। হাসপাতালের লাইনের পানি পান করে অনেকে আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছে। পরবর্তীতে বাইরে থেকে মিনারেল ওয়াটার আনিয়ে আমরা পান করেছি। তাছাড়া হাসপাতালের ওয়ার্ড বয়রা খাবার দেওয়ার জন্য দরজায় এসে দিয়ে যেত।"
ভর্তি রোগীদের খাবার-দাবারের অনিয়ম সম্পর্কে তিনি বলেন, "রমজান আসার পর থেকে খাবার দেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়ম শুরু হয়েছে। আমার মেয়ে এখনো হাসপাতালে ভর্তি আছে। তাদের দুপুরের খাবার দেওয়া হচ্ছে বিকেলে। পুরুষ ওয়ার্ড খাবার আসলেও মেয়েদের ১০ নং ওয়ার্ডে খাবার যাচ্ছে না।"
ওমর আলী বলেন, "আমার পরিবারের অন্যরা আমার সংস্পর্শে এসে এ করোনায় সংক্রমিত হয়েছে। তাদের শুধু হালকা জ্বর ও সামান্য কাশি ছিল। কিন্তু আমার সাড়ে তিন বছরের মেয়ে সে সবার সংস্পর্শে ছিল। তার নমুনা পরীক্ষায় নেগেটিভ এসেছে। আমরা সবাই যখন হাসপাতালে চলে যাই তখন আমার ছোট মেয়েকে কে রাখবে তা নিয়ে দুঃচিন্তা ছিল। পরে আমার স্ত্রীর ফুফাত ভাই তাকে লালন পালনের দায়িত্ব নেয়।"
নিজের স্বাস্থ্যের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, "হাসপাতাল থেকে আসার পর থেকে শরীর খুবই দুর্বল হয়ে পড়ছে। জ্বর জ্বর ভাব লাগছে। হাসপাতাল থেকে যে ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হয়েছে তা মেনে চলতেছি। যারা এ রোগে সংক্রমিত হচ্ছেন তাদের কাছে অনুরোধ। নিজে আক্রন্ত হলে অন্যদের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকুন। দ্রুত চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠা যায়।"
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগীদের নগরীর জেনারেল হাসপাতাল ও ফৌজদারহাট বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজ (বিআইটিআইডি) চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ১০ শয্যার আইসিইউ ওয়ার্ড রাখা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার নাথ বলেন, "কোন জেনালের হাসপাতালে পার্সোনাল বাথরুম থাকে না। এটা কাঠামোতেই নেই। দুইটি বাথরুম রয়েছে সবার জন্য। তাছাড়া রমজান আসার কারণে খাবারের শিডিউলে সামান্য পরিবর্তন হয়েছে। দু'য়েক দিনের মধ্যেই সব ঠিক হয়ে যাবে।"
বর্তমানে ২৮ জন করোনা সংক্রমিত রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে।