ঢাকায় জলাবদ্ধতা: কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতেই সপ্তাহ ধরে দুর্ভোগ
শনিবার সকালে ঢাকা নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলামসহ অনেকেই তাদের দোকানের ভেজা কাপড়গুলো রোদে শুকানোর জন্য নেড়ে দিচ্ছিলেন। কোনো কোনো দোকানের কর্মীদের দেখা যায়, দোকানের ভিতরে জমে থাকা পানি অপসারণ করছেন।
জহিরুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "দোকানের ফ্লোরে (মেঝে) যেসব কাপড় রাখা ছিল, সবই পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। শুক্রবার বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পরে দোকানে এসে দেখি পানিতে ভাসছে কাপড়। একদিকে যেমন ময়লা পানিতে ভিজে কাপড় নষ্ট হয়েছে, অন্যদিকে বেচাকেনা না হওয়ার ক্ষতি।"
তিনি আরও বলেন, "বৃষ্টিতে যা ভিজেছে, সেগুলো শুকিয়ে দোকান ঠিক করতে এ সপ্তাহ পার হয়ে যাবে। প্রতিবার বৃষ্টি হলেই আমাদের ব্যবসায় ক্ষতি। নিউমার্কেট এলাকার ড্রেনেজ সিস্টেম কি আদৌ ঠিক হবে? আমরা এ সমস্যার সমাধান চাই।"
শুধু জহিরুল ইসলামেরই নয়, শুক্রবারের ৪ ঘণ্টার ভারি বৃষ্টিতে রাজধানী ঢাকার নিউ মার্কেট, পল্টন, হাতিরপুল, মিরপুর, যাত্রাবাড়িসহ অধিকাংশ এলাকায়ই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে অনেক স্থানের প্রধান সড়কগুলো কোমরসম পানিতে প্লাবিত হয়। নিচতলায় ব্যবসা করা অনেক ব্যবসায়ীরই দোকানে পানি উঠে তাদের মালামাল নষ্ট হয়ে যায়।
এছাড়া, শুক্রবারের ভারী বৃষ্টিতে জমা হওয়া পানি শনিবার বিকাল পর্যন্তও অপসারিত হয়নি বকশিবাজার, বুয়েট ক্যাম্পাস, যাত্রাবাড়ির কিছু এলাকা, মোহাম্মদপুর ও মিরপুরের কিছু এলাকাসহ দুই সিটি কর্পোরেশনের অধিকাংশ এলাকা থেকে।
নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহিন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "শনিবার দুপুরের পরে কিছু দোকান খুলেছে। তবে বিক্রি কম। নিউ মার্কেটে বৃহস্পতিবার-শুক্রবার-শনিবারে পুরো সপ্তাহের প্রায় ৮০% বিক্রি হয়। আর এ সপ্তাহে কোটা আন্দোলেনের কারণে বিক্রি তেমন ছিল না। প্রত্যাশা ছিল শুক্র-শনিবারে ভালো বিক্রি হবে। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি, আমরা পুরাই লোকসানে।"
নীলক্ষেতের ইসলামিয়া বুক মার্কেটের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আক্কাস টিবিএসকে বলেন, "আমার মার্কেটসহ আশেপাশের কোনো মার্কেটের দোকানই শুক্রবার খোলা সম্ভব হয়নি। শনিবারে দোকানীরা দোকানগুলো ঠিক করেছেন এবং ভেজা বই-কাগজ রোদে শুকিয়েছেন। দুপুরের পর থেকে কিছু দোকান চালু হয়েছে; তখন কিছু কাস্টমার এসেছিলেন।"
তিনি আরও বলেন, "শুক্র ও শনিবারে নীলক্ষেত বই মার্কেটে স্বাভাবিক দিনের থেকে অনেক বেশি কাস্টমার থাকেন। নীলক্ষেতে প্রায় ৮০০ বইয়ের দোকন আছে এবং শুক্রবার এসব দোকানে প্রায় ৮০-৯০ লাখ টাকার বই বিক্রি হয়।"
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, "নিউমার্কেট এলাকায় পানি নিষ্কাশনের আউটলেট নিরাপত্তাজনিত কারণে বিজিবি বন্ধ করে দিয়েছিল। সেখানে শীঘ্রই কাজ শুরু হবে। সেটি সম্পন্ন হলে নিউমার্কেট ও সংলগ্ন এলাকায় আর জলাবদ্ধতা থাকবে না।"
তাছাড়া গ্রিন রোড, কলাবাগানসহ সংলগ্ন এলাকার পানি হাতিরঝিল হয়ে নিষ্কাশিত হয়। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজের জন্য হাতিরঝিল দিয়ে নিষ্কাশন সক্ষমতা অনেক কমে গেছে বলে জানান তিনি।
সেবা সংস্থাগুলোর উন্নয়ন প্রকল্প ও কার্যক্রমের জন্য বিভিন্ন জায়গায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। সেসব কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত জলাবদ্ধতার সুরাহা দেওয়া সম্ভব হবে না বলেও উল্লেখ করেন এই কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, "কম সময়ে বিপুল পরিমাণ বৃষ্টিপাত হওয়ায় পানি সরতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। এছাড়াও নগরবাসীর অসচেতনতায় যত্রতত্র বিপুল পরিমাণ পলিথিন ও প্লাস্টিক জাতীয় বর্জ্যের কারণে নর্দমার ক্যাচপিটগুলো সক্ষমতা অনুযায়ী পানি নিষ্কাশন করতে পারছে না বলে, বৃষ্টির পানি সরতে সময় লেগেছে।"
বিদ্যুতায়িত হয়ে ৪ জনের মৃত্যু
এদিকে, শুক্রবারের প্রবল বর্ষণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় বিদ্যুতায়িত হয়ে ঢাকার তিন স্থানে চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
দুইজন মারা গেছেন তাদের কারখানায় যন্ত্রপাতি সরাতে গিয়ে, একজন বিদ্যুতায়িত হয়েছেন নিজের ঘরে, একজন রাস্তায় বিদ্যুতের খুঁটি ধরার পর প্রাণ হারিয়েছেন।
শুক্রবার মিরপুর, ভাসানটেক ও সূত্রাপুর এলাকায় ঘটনায় তাদের প্রাণ যায় বলে পুলিশ জানিয়েছে।
নিহতরা হলেন— কাঠমিস্ত্রি রাসেল দাস ও তার সহকারী আলাউদ্দিন, নির্মাণ শ্রমিক আব্দুন নূর এবং রংমিস্ত্রী আইয়ুব আলী।
ঢাকায় জলাবদ্ধতা
শনিবার (১৩ জুলাই) দুপুরেও রাজধানীর বকশীবাজার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু এলাকা, বুয়েট ক্যাম্পাস, মিরপুরের কাজীপাড়া, মোহাম্মদপুরের কিছু এলাকা, যাত্রাবাড়ীর কিছু এলাকাসহ বেশকিছু এলাকায় পানি জমে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
যাত্রাবাড়ির বাসিন্দা শাখাওয়াত হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "গতকাল বৃষ্টির পরে বাসার ফ্লোরে (মেঝে) পানি উঠে গিয়েছিল। এখনও রাস্তায় পানি জমে আছে। সকালে বের হয়েছি, তিনগুণ রিকশা ভাড়া দিতে হয়েছে।"
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদুল্লাহ হলের শিক্ষার্থী ওসমান টিবিএসকে বলেন, "হলের রাস্তায় ও আশপাশ থেকে এখনও পানি নামেনি। কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে যদি এ অবস্থা হয়, কখনও সারাদিন বৃষ্টি হলে ঢাকার পানি তো তিনদিনেও নামবে না!"
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসেন টিবিএসকে বলেন, "ঢাকা উত্তরের প্রধান সড়কে কোথাও পানি নেই। তবে নতুন এলাকা দক্ষিণখান, উত্তরখান এলাকায় পানি আছে। এছাড়া মিরপুর ও মোহাম্মদপুর কিছু শাখা রাস্তায় পানি রয়েছে। এগুলো সরাতে কর্মীরা কাজ করছেন।"
এদিকে, আবহাওয়া অফিস গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুরু করে আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের ৮ বিভাগে বজ্রসহ বৃষ্টি ও দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের এবং কিছু জায়গায় ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আগামী চার দিন পর বৃষ্টিপাত আরও বাড়তে পারে।