নিঃস্বার্থ, নিবেদিতপ্রাণ কিছু মানুষ পথশিশুদের জীবন রাঙিয়ে দিচ্ছে
নাম কী?
-শামীম
থাকো কোথায়? রাতে ঘুমাও কই?
-কোনো জায়গা নাই, এহানেই মাটিতে ঘুমাই।
কয়বেলা খাও? কে দেয় খাবার?
-দুইবার খাই, জানিনা কেডা দেয়
বাবা-মা আছেন?
-বাবায় মারা গেছে, মায়ে পাগল…।
এই ছিল সেদিন টিএসসিতে ঘোরাফেরা করা পথশিশু শামীমের সঙ্গে চিকিৎসক তপুর (ছদ্মনাম) কথোপকথন।
জানা গেল, ক্যাম্পাসের এসব শিশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে প্রতি সোমবার এখানে আসেন তিনি। প্রথমে সবার প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়, এরপর সে অনুযায়ী পরবর্তী চিকিৎসা ব্যবস্থা নেওয়া হয় বলে জানালেন তপু।
পথশিশুদের নিয়ে কাজ করছে এমন কিছু সংগঠনের সঙ্গে কথা হয় টিবিএসের।
মজার ইশকুল
একদিকে চলছিল স্বাস্থ্য পরীক্ষা, আর অন্যদিকে সবাই সারিবদ্ধভাবে বসা। কিছুক্ষণ পরই দুপুরের খাবারের আয়োজন। কখনো ভাত-মুরগি, কখনো পোলাও। সেদিন ছিল ভাত আর ডিমভুনার দিন। করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়াতে প্রতি সোমবার একবেলার খাবার দেওয়া হয় এই বাচ্চাদের।
আর এই মহৎ কাজটি করে যাচ্ছে অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা অদম্য ফাউন্ডেশনের পরিচালিত 'মজার ইশকুল'।
২০১৩ সাল থেকে বিগত নয় বছর ধরে তরুণদের সমন্বয়ে কাজ করে যাচ্ছে অদম্য বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগ হিসেবে পরিচালিত 'মজার ইশকুল'। একদল তরুণের সামাজিক দায়বদ্ধতার উপলব্ধি থেকে এই মহৎ কাজের সূত্রপাত।
আসলে এই পথশিশুরা সাধারণ জীবন ব্যবস্থার সঙ্গে পরিচিত নয়। এরা যেমন তিনবেলা খেতে পারে না, তেমনি এদের ঘুমোনোর জায়গা থাকে না। সামান্য স্যানিটারী ল্যাট্রিনের সুবিধাটুকুও নেই ওদের। মানবেতর জীবনেরও নিম্নে তাদের বসবাস—সমাজের অপেক্ষায়, অনাদরে। মজার ইশকুল স্বপ্ন দেখে ২০৩৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে পথশিশুমুক্ত করার। আর সে লক্ষ্যে চারটি ধাপে কাজ করছে তারা।
ধাপগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানান মজার ইশকুলের সিনিয়র স্বেচ্ছাসেবী আশিকুর রহমান। এখানে খোলা আকাশের নিচে পরিচালিত মজার ইশকুলে (ধাপ-১) যে কোনো পথশিশুই পড়তে পারে। সপ্তাহে একদিন করে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, কমলাপুর রেলস্টেশন, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল, ধানমন্ডি রবীন্দ্র সরোবরে খোলা আকাশের নিচে ক্লাস নেওয়া হয়। পড়ালেখার চেয়ে এসব ক্লাসে পারস্পরিক বিশ্বাস ও বন্ধুত্ব স্থাপন আর খাদ্য সরবরাহই মূল উদ্দেশ্য। সেইসাথে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজের কুফল জানিয়ে, সুস্থ জীবনযাপনের প্রতি আগ্রহী করে তোলা হয়। এসব শিশুদের মধ্যে যারা নিয়মিত ক্লাসে আসছে বা মোটামুটি থাকার জায়গা আছে তাদেরকে পথঘাট থেকে ঢাকার ভেতর স্থায়ী মজার ইশকুলে (ধাপ-২) নিয়ে আসা হয় এবং তারা যেন স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে সে নিশ্চয়তার ব্যবস্থা করা হয়।
আবার যাদের থাকার জায়গা নেই, বা পড়াশোনার খরচ চালাতে পারছেনা তাদের জন্য রাজধানী ঢাকার বাইরে মজার ইশকুল (ধাপ-৩)। আর যাদের কেউ-ই নেই, কোথাও থাকা বা যাবার জায়গা নেই তাদের জন্য রয়েছে অদম্য বাংলাদেশ চিলড্রেন ভিলেজ (ধাপ- ৪)। যেখানে এসব শিশুদের স্থায়ী থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।
বন্ধু হওয়া, স্বাবলম্বী ও সুস্থ জীবন নিশ্চিত করা-এই তিনটি উদ্দেশ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করা 'মজার ইশকুল' এখন অনেকটাই আশাবাদী। তারা স্বপ্ন দেখে প্রতিটি শিশুই সুস্থ, সুন্দর ও স্বাভাবিক জীবন কাটাবে।
পথের ইশকুল
একই রকম উদ্দেশ্য নিয়ে যাত্রা করে আরেকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'পথের ইশকুল'।
ঢাকার গুলিস্তানে মহানগর নাট্যমঞ্চের পার্কটিতে গেলে দেখা মেলে অসংখ্য গৃহহীন শিশুর। শতাধিক মানুষ রাত্রিযাপন করে সেখানে। এখানকার শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে সক্রিয় রয়েছে 'পথের ইশকুল'।
'পথের ইশকুলের' প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান পরিচালক সাকির ইব্রাহিম মাটি জানান, "প্রথমদিকে আমরা সপ্তাহে একদিন ফরমাল এডুকেশনের ক্লাস নিতাম। কিন্তু পেটে খাবার না থাকলে, শিক্ষা তখন বিলাসিতার উপকরণ। তাই শিক্ষাব্যবস্থা বন্ধ করে দিয়ে ওদের মানবিক সহায়তা নিয়ে কাজ শুরু করি। তখন থেকে আমরা 'শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য' এই ধারণা থেকে কাজ করে চলেছি"।
প্রতি শুক্র ও শনিবার বর্তমান স্বেচ্ছাসেবকদের নেতৃত্বে চলে পাঠদান, রয়েছে পাঠ্যক্রম। তাদের শেখানো হয় দৈনন্দিন জীবনের সব গুরুত্বপূর্ণ কাজও।
তাছাড়া এ অঞ্চলের শিশুরা ভিক্ষাবৃত্তি কিংবা মাদক বিক্রির মতো কাজগুলোর সঙ্গে যেন না জড়িয়ে পড়ে তাই গত একবছরে স্বল্প পরিসরে ২০ জন শিশু এবং তাদের পরিবারের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। ফলে এখন অপরাধমূলক কর্মকান্ড থেকে অনেকটাই সরে এসেছে শিশুরা, জানান সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সাকির ইব্রাহীম মাটি।
তাছাড়া এসব শিশুকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে নিয়মিত স্বাস্থ্য সেবার দিকে সংগঠনটি বিশেষ জোর দিচ্ছে। যেহেতু এসব শিশুদের অনেকেই আত্মহত্যাপ্রবণ এবং বিষণ্ণতায় ভোগে তাই প্রতি মাসে প্রফেশনাল কাউন্সেলর এনেও তাদের ক্লাস নেওয়া হয়। ক্লাসগুলোর পাশাপাশি তারা সাইকিয়াট্রিস্ট দিয়েও প্রতিটি শিশুর পৃথক বা দলীয় সেবা নিশ্চিত করে যাচ্ছেন।
গুলিস্তান এবং মতিঝিল– দুই শাখা মিলিয়ে প্রায় ৮০'র বেশি শিশু পথের ইশকুলে পড়ালেখা করছে বর্তমানে।
এই শিশুরা পড়তে চায়, শিখতে চায়, নিজেদের ভাগ্য বদলাতে চায়।
তাদের শিক্ষা কার্যক্রম প্রসঙ্গে সাকির বলেন, "আমরা মূলত খাবার দিয়ে বা খেলার ছলে খোলা আকাশের নিচে এসব শিশুদের পড়িয়ে থাকি। আনুষ্ঠানিক শিক্ষা দেয়া সম্ভব না হলেও আমাদের নির্দিষ্ট কিছু কারিকুলাম আছে। এসব শিশু যেহেতু সবসময় রাস্তায় থাকে, তাই আনুষ্ঠানিক লেখাপড়ার মাঝে নিয়ে আসতে আমরা প্রি-স্কুল সেবাও দিয়ে থাকি। এছাড়া কোনো শিশুর শারীরিক-সামাজিক অবস্থা অনুযায়ী বিভিন্ন আবাসিক স্কুল, মাদ্রাসা, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পুনর্বাসন কেন্দ্রে হস্তান্তর করি আমরা এসব শিশুদের"।
আপন পাঠশালা
আপন ফাউন্ডেশন ২০০৭ সালে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে 'আপন পাঠশালা' কার্যক্রম শুরু করে। শুরুতে আপন পাঠশালা ১৫-২০ জন ছেলেমেয়ে নিয়ে কাজ শুরু করে। এখন ঢাকার ৭টি স্থানের ১৩টি কেন্দ্রে, প্রায় ৪০০ শিশুর মাঝে খাদ্য, পুষ্টি, শিক্ষা সেবা দিয়ে যাচ্ছে এই ফাউন্ডেশন।
আপন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মোঃ আফতাবুজ্জামান বলেন, "আমরা সবাই এদেশেরই আলো-বাতাসে বড় হয়েছি, এদেশের প্রতি আমাদের ঋণ এবং দায়বদ্ধতা রয়েছে। সেই দায়বদ্ধতা থেকেই আমরা এই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য কিছু করতে চাই। সমাজে মূলধারার সবার সঙ্গে মিশে তাদের একটা সুন্দর জীবন উপহার দিতে চাই"।
আফতাবুজ্জামান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি শিশুগুলোর পরিবারকে স্বাস্থ্য সচেতনতা, বাল্যবিবাহ, যৌতুকপ্রথা, করোনাকালীন স্বাস্থ্য সহায়তা, পারিবারিক সহিংসতা এ ধরনের বিষয়গুলোর ওপরও সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক ক্লাস প্রদান করে থাকেন তারা।
শুধু পথশিশুদের জন্য তাদের 'ঠিকানা শেলটার' নামে একটি আশ্রয়কেন্দ্র আছে, যেখান হারিয়ে যাওয়া বা এতিম শিশুদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়। কিংবা কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে হস্তান্তর করা হয়। এ বিষয়ে আপন ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম অফিসার ফারজানা তৃণা বলেন, "আমাদের এখানে অনেক বাচ্চা আছে যারা পরিবার থেকে কোনো কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, আমরা তাদেরকে আশ্রয়কেন্দ্রে রাখি এবং এরপর পুলিশি সহযোগিতায় তাদেরকে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিই। এখন এমনও হয় যে, কোথাও এমন কোনো বাচ্চা দেখলে পুলিশরাই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাচ্চাগুলোকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য"।
উল্লেখযোগ্য কোন প্রতিবন্ধকতা না থাকলেও 'ফান্ডিং' স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর জন্য একটি বড় বাধা, এমনটাই মনে করেন আপন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক।
আফতাবুজ্জামান বলেন, "এছাড়াও সরকারি-বেসরকারি সমন্বয়হীনতার একটা বিষয় আছে, যেগুলোর মুখোমুখি হতে হয় আমাদের। এসব সমন্বয়হীনতাগুলো যদি ঠিক হয়, সবাই একটু কো-অপারেটিভ হয় তবে এই সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা আরও লাভবান হবে"।
রায়েরবাজার বস্তি, ধানমন্ডি লেক, গুলশান ঝিল পাড়া বস্তি, রেললাইন বস্তি, বউবাজার, নারায়ণগঞ্জ এরকম ১৩টি কেন্দ্রে তারা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন বর্তমানে।
আপন পাঠশালার ধানমন্ডি কেন্দ্রে গিয়ে দেখা হয়, এই পাঠশালার প্রাক্তন শিক্ষার্থী নূরজাহানের সঙ্গে। নূরজাহান নিজে আপন পাঠশালার ছাত্রী ছিলেন, এখন ছেলে শিপনকেও এখানে পড়াতে নিয়ে আসেন।
স্কুল অব ঘাসফুল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক পথশিশুদের নিয়ে কাজ করা একমাত্র সংগঠন এটি। শুক্রবারের মতো ছুটির দিনগুলোতে কোনো এক হলের ক্যান্টিনে বাচ্চাদেরকে সাধারণ জ্ঞান সম্পর্কে শিক্ষা, স্বাস্থ্য-নিরাপত্তা ও শরীরচর্চা বিষয়ক ক্লাস নেয় এই সংগঠন।
স্কুল অব ঘাসফুলের অফিস সেক্রেটারি ফাহাদ বিন হাসান বলেন, "আমরা ওদেরকে সাধারণ বা মূলধারার জীবন দিতে পারব না। তাই আমরা চাই ওরা যেন বেঁচে থাকার জন্য সাধারণ যে সুযোগ সুবিধাগুলো আছে, সেগুলো পেয়ে অন্তত একটা সুস্থ জীবন কাটাতে পারে"।
এছাড়া স্কুল অব ঘাসফুলের রয়েছে পিকনিক বা ভ্রমণ কার্যক্রম, শীতের সময় শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচি; বইখাতা, লেখাপড়ার আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র কিনে দেওয়ার পাশাপাশি এসব পরিবারের কেউ অসুস্থ থাকলে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং প্রয়োজনে ব্যয়ভার বহন করে থাকে স্কুল অব ঘাসফুল।
এটি পুরোপুরি ক্যাম্পাস কেন্দ্রিক কার্যক্রম। যে সব শিশুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বিচরণ করে বেড়ায় তাদের নিয়েই কাজ স্কুল অব ঘাসফুলের।
তবে করোনার মধ্যে এখন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়াতে স্বেচ্ছাসেবীরাও বাড়িতে চলে গেছেন। তাই কার্যক্রম আপাতত বন্ধ আছে।
জীবন যখন পথেঘাটে
১৯৭৪ সালের ২২ জুন জাতীয় শিশু আইনে শিশুদের নাম ও জাতীয়তার অধিকারের স্বীকৃতি, সব ধরনের অবহেলা, শোষণ, বঞ্ছনা, নিষ্ঠুরতা, নির্যাতন, খারাপ কাজে লাগানো ইত্যাদি থেকে নিরাপত্তার অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রতিবছর জাতীয় বাজেটে এসব শিশুদের জন্য বরাদ্দ থাকে। কিন্তু আমাদের আদমশুমারিতেও পথশিশুদের কখনো গণনা করা হয় না। চোখের সামনে থেকেও তারা যেন অদৃশ্য।
বাংলাদেশে পথশিশুর সংখ্যা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো জরিপ নেই৷ তবে ইন্টারনেট থেকে পাওয়া তথ্যমতে, ২০১৫ সালের হিসেব অনুযায়ী এই সংখ্যা ১০ লাখ বলে জানা যায়। তবে বর্তমানে এই সংখ্যা বেড়ে ২০-২৫ লাখে দাঁড়িয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এদের মধ্যে ঢাকা শহরে আছে, এমন সংখ্যা হবে ৬-৭ লাখ।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি দৈনিক সংবাদপত্র যায়যায়দিনে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সোশ্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক এনহান্সমেন্ট প্রোগ্রাম (সিপ) নামের একটি সংস্থার মতে, পথশিশুদের প্রায় ৪৪ শতাংশ মাদকাসক্ত, ৪১ শতাংশ শিশুর ঘুমানোর কোনো বিছানা নেই, ৪০ শতাংশ শিশু গোসল করতে পারে না, ৩৫ শতাংশ খোলা জায়গায় মলত্যাগ করে, ৫৪ শতাংশ অসুস্থ হলে দেখার কেউ নেই এবং ৭৫ শতাংশ শিশু অসুস্থ হলে ডাক্তারের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করতে পারে না৷
এভাবেই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বেড়ে ওঠে তারা।
দৈনিক ইনকিলাবে উল্লেখিত বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্যমতে, পথশিশুদের ৮৫ ভাগই কোনো না কোনোভাবে মাদক সেবন করে। তাদের ১৯ শতাংশ হেরোইন, ৪৪ শতাংশ শিশু ধূমপান, ২৮ শতাংশ নানা ট্যাবলেট, ৮ শতাংশ শিশু ইনজেকশনে আসক্ত।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, ৮৫ শতাংশ শিশু ভারি কাজ করে, স্কুলে যায় না ২৪ লাখ শিশু, মজুরি পায় না ১৬ লাখ শিশু, পরিবারকে সহায়তা দিতে কাজ করে ৩০ শতাংশ শিশু, কৃষি ও কলকারখানায় কাজ করে ৬৫ শতাংশ শিশু।
বর্তমানে পুরো দেশজুড়েই পথশিশুদের নিয়ে কাজ করার লক্ষ্যে এগিয়ে আসছে অনেক সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান। তারা পথশিশুদের শিক্ষা, চিকিৎসাসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। করোনার কারণে অনেক জায়গায় খাদ্যের বিনিময়ে শিক্ষা কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। কোথাও আছে অর্থের বিনিময়ে শিক্ষা কর্মসূচি। অনেক ছোট-বড় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও), সরকারি সংস্থার উদ্যোগে পথশিশুদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীদের একটি বড় অংশ এখন শিশুদের অধিকার বিষয়ে সচেতন। সরকারি, বেসরকারি, ব্যক্তিপর্যায় ও আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে আসছে আর্থিক সহায়তা। ইতোমধ্যে অনেক শিশুই তাদের পুরোনো ছিন্নমূল জীবন ছেড়ে ন্যূনতম মৌলিক চাহিদাগুলো পাচ্ছে। অনেকে হয়তো মূলধারার সঙ্গে মিশেও যেতে পারছে, যদিও পথশিশুদের সংখ্যার তুলনায় তা খুবই কম।