খারকিভের কাছে সীমান্ত শহরে ঢুকে পড়েছে রুশ সেনারা, তীব্র লড়াই চলছে
ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভের কাছের একটি সীমান্ত শহরে ঢুকে পড়েছে রুশ সেনারা। খারকিভ অঞ্চলের দক্ষিণ-পূর্ব রুশ সীমান্ত লাগোয়া এই শহরের নাম ভোভচানস্ক। রাশিয়া দাবি করেছে, ভোভচানস্কে তাদের সেনারা প্রবেশ করেছে। যদিও ইউক্রেন জানিয়েছে, সেখানে এখনো প্রচণ্ড লড়াই চলছে। খবর বিবিসির
খারকিভ অঞ্চলে সাম্প্রতিক সময়ে আক্রমণ অভিযান শুরু করেছে রাশিয়া। এরমধ্যেই সীমান্ত লাগোয়া কিছু গ্রামও রুশ বাহিনীর দখলে চলে গেছে। এরমধ্যে অন্যন্ত নয়টি গ্রাম ও জনবসতি রয়েছে।
রুশ বাহিনী এগোনোর সাথে সাথে হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক খারকিভের দিকে পালাচ্ছে। এই অবস্থায় রুশ বাহিনী যদি শহরটিকে কামানের পাল্লার মধ্যে আনতে পারে, তাহলে ব্যাপক গোলাবর্ষণে বহু প্রাণহানির আশঙ্কা করছেন ইউক্রেনের কমান্ডাররা।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর পরে এটি রাশিয়ার অন্যতম ব্যাপক স্থল অভিযান।
ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী বলেছে, রাশিয়া তার এই সাম্প্রতিক আক্রমণে 'উল্লেখযোগ্য সংখ্যক' সেনা মোতায়েন করেছে – যা সর্বোচ্চ পাঁচ ব্যাটালিয়ন পর্যন্ত হতে পারে। রুশ সেনারা যুদ্ধক্ষেত্রে কার্যকর সাফল্য পেয়েছে বলেও স্বীকার করেছে তারা।
ইউক্রেনের সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, তারা একদিনেই একশ জনের বেশি রুশ সেনাকে হত্যা করেছে। রুশ বাহিনীর অগ্রযাত্রা রুখতে দরকারি পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে।
এরমধ্যেই ভোভচানস্কে প্রবেশের দাবি করেছে রাশিয়া। খারকিভ শহর থেকে মাত্র ৭৪ কিলোমিটার দূরে এই সীমান্ত শহরে গত কিছুদিন ধরে প্রচণ্ড বোমাবর্ষণ করা হয়েছে। নিকটবর্তী এলাকাগুলোর ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, জনবসতিগুলোয় গ্লাইড বোমা ফেলা হচ্ছে।
খারকিভের আঞ্চলিক প্রধান ওলেহ সিনেহুবভ বলেছেন, রাশিয়ানরা নতুন দিকে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে আক্রমণ চালাচ্ছে। এভাবে যুদ্ধের সম্মুখসারিকে আরো বিস্তৃত করতে চাইছে। স্থানীয় একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে তিনি বলেন, ইউক্রেনীয় সেনারা রুশ সেনাদের ঠেকিয়ে দিচ্ছে, তবে তারপরেও কিছু জনপদে নতুন করে লড়াই ছড়িয়ে পড়তে পারে। এরমধ্যেই প্রায় ৩০টি বসতিতে মর্টার ও কামানের গোলা এসে পড়েছে। এ অবস্থায়, খারকিভ অঞ্চলের প্রায় ৬ হাজার বাসিন্দাকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
সীমান্তের ওপাড় থেকে শুরু হওয়া রাশিয়ার এই আক্রমণ খারকিভের দখলে নেওয়ার মতো যথেষ্ট শক্তিশালী নয় বলে প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল। তবে রুশ সেনারা যতই সামনে এগোচ্ছে– সেই সম্ভাবনা ততোই বাড়ছে। এতে চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে স্থানীয়রা।
এই ঘটনায় হতাশা ভর করেছে ইউক্রেনীয় সেনাদের মধ্যেও। আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা কাঠামোর অভাবের কথা উল্লেখ করে তারা বিবিসিকে বলেছে, এই সুযোগ নিয়ে কিছু জায়গায় রুশ সেনারা বিনা বাধায় প্রবেশ করতে পেরেছে।
ভোভচানস্কের একজন বাসিন্দা কস্তায়েন্তিন টিমোশেঙ্কো। এই শহর ছেড়ে যারা খারকিভ শহরের তুলনামূলক নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে ছুটছে – তিনিই তাদেরই একজন। ভোভচানস্কের খুবই কাছে সংঘাত শুরু হওয়ায় আতঙ্ক ও বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি।
টিমোশেঙ্কো বলেন, "মাত্র আধা কিলোমিটার দূরে এরমধ্যেই লড়াই চলছে, শোনা যাচ্ছে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের গর্জন। (ভোভচা নদীর) এক পাড়ে রুশ সেনারা, অন্যদিকে আমাদের সেনারা।"
"দুই পক্ষের ট্যাংক সামনে এগিয়ে এসে গোলা নিক্ষেপ করছে, তারপর আবারো পিছিয়ে যাচ্ছে। আমি ভেবেছিলাম এখানে আমরা নিরাপদ। কিন্তু আমি চমকে গেছি। এমনটা হবে আরো আগেই যদি জানতাম!" - যোগ করেন তিনি।
খারকিভ ছাড়াও ইউক্রেনের রাশিয়ার দখলে থাকা শহর দনেয়স্কে গোলার আঘাতে দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছে। এছাড়া, ক্রিমিয়ার বেশকিছু এলাকায় ৩১টি ইউক্রেনীয় ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করেছে রাশিয়া।
অনুবাদ: নূর মাজিদ