‘শক্তিশালী রুশ আক্রমণের’ মুখে ইউক্রেন, পূর্বাঞ্চলে নতুন নতুন এলাকা রাশিয়ার দখলে
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পরে অন্যতম শক্তিশালী এক রুশ আক্রমণ অভিযান চলছে বর্তমানে, এই অভিযানের মধ্যে দিয়ে দেশটির পূর্বাঞ্চলের নতুন এলাকা দখলে নিচ্ছে মস্কো। এসব কথা জানিয়ে, ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্রদের সতর্ক করেছেন দেশটির সেনাপ্রধান ওলেকসান্দর সিরস্কি।
রাশিয়ান সেনারা পূর্বের ডনবাস অঞ্চলে ধারাবাহিকভাবে অগ্রসর হচ্ছে, এই অঞ্চলটি পুরোপুরি দখলে নিতে চান রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
যুদ্ধের গতি-প্রকৃতি পর্যবেক্ষণের সাথে জড়িত 'ওপেন সোর্স' এর বরাত দিয়ে বার্তাসংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত এক বছরের মধ্যে বর্তমানেই রুশ সেনারা সবচেয়ে দ্রুত সামনে এগোচ্ছে।
এরমধ্যেই মুখ খুললেন ইউক্রেনের কমান্ডার-ইন-চিফ। শনিবার সকালে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম– টেলিগ্রামে দেওয়া এক বিবৃতিতে ওলেকসান্দর সিরস্কি বলেছেন, রণাঙ্গনের সম্মুখভাগের পরিস্থিতি বেশ কঠিন, এবং বেশকিছু জায়গায় ইউক্রেনীয় সেনা ইউনিটগুলোকে সাজ-সরঞ্জাম ও জনশক্তি প্রতিনিয়ত নতুন করে পাঠাতে হচ্ছে।
তিনি জানান, ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর পরে– রাশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী এই আক্রমণ অভিযান, যা ঠেকিয়ে রাখতে লড়ছে কিয়েভের সেনারা।
এদিকে গত এক সপ্তাহের মধ্যে দনেয়স্ক অঞ্চলের কুরাখিভা ও ভিশনিভ – নামের দুটি বসতি এলাকা দখলে নেওয়ার দাবি করেছে রাশিয়া।
পকরোভস্কের কাছাকাছি অবস্থিত ভিশনিভ, আর পূব রণাঞ্চনে ইউক্রেনের সেনা ও রসদ পরিবহনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ লজিস্টিকস কেন্দ্র পকরোভস্ক। এই শহর দখলে নেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে রাশিয়ার। এতে করে, ইউক্রেনের জন্য বড় সমস্যা তৈরি হবে।
রাশিয়া তার ড্রোন হামলাও অব্যাহত রেখেছে, যার অন্যতম লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোগুলো। ফলে আসন্ন শীতে ইউক্রেনের নাগরিকদের দুর্ভোগ আরো বাড়তে চলেছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গত রোববার রাতভর ৫০টির বেশি ড্রোন হামলা করেছে রাশিয়া। এছাড়া, গত এক সপ্তাহে ইউক্রেনে ৯০০টি বোমা ফেলেছে রুশ যুদ্ধবিমান, একইসময়ে প্রায় ৩০টি মিসাইল ও ৫০০টি শাহেদ ড্রোন নিক্ষেপ করা হয় ইউক্রেনজুড়ে।
জেলেনস্কির বিবৃতিতে বলা হয়, বেশিরভাগ হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল ইউক্রেনের বেসামরিক ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো।
গত কয়েক মাস ধরে ইউক্রেন রাশিয়ার আরো অভ্যন্তরে মিসাইল হামলার অনুমতি চাইছে এসব অস্ত্রের জোগানদাতা পশ্চিমা মিত্রদের কাছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে এই চেষ্টা আরো জোরালো করেছেন জেলেনস্কি। তবে এখনও স্পষ্টভাবে সে অনুমতি পাচ্ছে না ইউক্রেন।
রাশিয়ার তীব্র আক্রমণের মুখে জেলেনস্কি আরো পশ্চিমা সহায়তারও অনুরোধ করছেন, এবিষয়ে তিনি বিবৃতিতে বলেন, "বিশ্ব সম্প্রদায়ের থেকে আরো (সামরিক) সহায়তা পেলে (রাশিয়ার পক্ষে) এসব হামলা করা সম্ভব হতো না।"
জেলেনস্কি হুঁশিয়ার করে বলেন, রাশিয়া তার (সামরিক) কর্মকাণ্ড পর্যায়ক্রমে বাড়াচ্ছে, এবং এখনও সমরাস্ত্র নির্মাণে পশ্চিমা দেশগুলোয় তৈরি উপকরণ (বিশেষত মাইক্রোচিপ) ব্যবহার করতে পারছে।
তিনি বলেন, এসব উপকরণের বেশিরভাগই বাইরে থেকে রাশিয়ায় সরবরাহ করা হচ্ছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, চীন, ইউরোপ ও আমেরিকা থেকে পাওয়া (মাইক্রোচিপের) চালানের কারণে 'রাশিয়ার সন্ত্রাস' অব্যাহত রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন– তারমধ্যেই এমন সমস্যার মধ্যে রয়েছে ইউক্রেন।
আগামী ৫ তারিখে ভোট দেবেন মার্কিনীরা। এই নির্বাচনের মাধ্যমে অনেকটাই নির্ধারিত হয়ে যাবে ইউক্রেনের ভাগ্য। প্রেসিডেন্ট বদলানোর সাথেসাথে যুক্তরাষ্ট্রের ইউক্রেন নীতিতেও আসতে পারে আমূল পরিবর্তন। বিশেষত যদি ডেমোক্রেট দলের প্রার্থী কমলা হ্যারিসের পরিবর্তে বিজয়ী হন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বর্তমান বাইডেন প্রশাসন ইউক্রেনকে উদারহস্তে সহায়তা দিয়েছে, জো বাইডেনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কমলা হ্যারিসও ইউক্রেনের পক্ষ নিয়েছেন। নির্বাচিত হলে, তিনি এই নীতি ধরে রাখবেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে। অন্যদিকে, ট্রাম্প বিভিন্ন সময়ে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা বন্ধের কথা বলেছেন। তিনি দাবিও করেন যে, এভাবে মাত্র একদিনেই এই যুদ্ধ থামিয়ে দেবেন।
এদিকে রণাঙ্গনে উত্তর কোরিয়ার সেনাদের যুক্ত করে জনবল বাড়াচ্ছে রাশিয়া এমন খবর আসছে। অন্তত ৮ হাজার উ. কোরীয় সেনা ইতোমধ্যেই রাশিয়ার কুর্স্ক অঞ্চলে অবস্থান করছে, খুব শিগগিরই তারা সেখানে ইউক্রেনীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামতে পারে বলে গত সপ্তাহেই জানান শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তারা।