জুলাইয়ে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি প্রায় ১৪ শতাংশ
বিলম্বিত এলসি নিষ্পত্তি ও ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে অধিক আমদানি মূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে গ্রাহকদের। এর ফলে জুলাইয়ে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি ব্যাপক পরিমাণে বেড়েছে।
এ সময়ে ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩.৯৫ শতাংশে, যা আগের মাসের ১২.৬৬ শতাংশের চেয়ে কিছুটা বেশি এবং চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ১৪.১ শতাংশের কাছাকাছি।
চলতি বছরের জুলাইয়ের শেষে বেসরকারি খাতে ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৫২ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১১ লাখ ৮৭ হাজার ১০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরের গড় ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ১০.৬৭ শতাংশ, যা সে বছরের আর্থিক লক্ষ্যমাত্রা ১৪.৮ শতাংশের চেয়ে অনেক কম।
এদিকে, বেসরকারি খাতের সঙ্গে সঙ্গে সরকারি খাতের ঋণও জুলাইয়ে ২৩.৩৮ শতাংশ বেড়েছে। জুলাইতে এ খাতে মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ১৯ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা। যদিও আগের বছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৫৯ হাজার ২৭২ কোটি টাকা।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলেন, কোভিড পরবর্তী দেশে আমদানির উর্ধ্বমুখী প্রবণতার কারণে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। এছাড়া, দেশের বাজারে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় অধিক মূল্য পরিশোধের কারণে গ্রাহকদের ঋণের চাহিদা বেড়েছে, যা বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধিকে আরও সম্প্রসারণ করেছে।
এ বিষয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইইও সৈয়দ মাহবুবুর রাহমান দ্য বিজনেস স্টান্ডার্ডকে বলেন, প্রাইভেট সেক্টেরের কার্যক্রম সচল রাখতে ঋণের সুদহার বাড়ানো হয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পলিসি রেট বাড়লেও লেন্ডিং রেট বাড়েনি, তাই ঋণের প্রবৃদ্ধিটা বেড়েছে।
তিনি বলেন, বেসরকারি খাতে ঋণের পরিমাণ বেড়েছে, কারণ তাদের এখন বিলম্বিত এলসি পেমেন্টগুলো নিষ্পত্তি করতে হচ্ছে।
বেসরকারি আরেকটি ব্যাংকের ট্রেজারি হেড টিবিএসকে বলেন, চলতি বছরের শুরু থেকেই বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। গত ৬ মাসে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ বেড়েছে তাদের প্রতিষ্ঠানে।
নতুন ২০২২-২৩ অর্থবছর মুদ্রানীতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগের অর্থবছরের তুলনায় বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি কমিয়ে ১৪.১ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য বাজারে নগদ তারল্য কমিয়ে আনতে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি কমিয়েছে।
যদিও ২০২০ সালের মার্চে দেশে কোভিডের প্রভাব দেখা দেওয়ায় বেসরকারি খাতের ঋণ ধীরগতিতে ছিল। এ সময় বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় ৮ শতাংশের কাছাকাছি।
বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে আমদানি হয়েছে ৮২.৪৯ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় বেড়েছে ৩৫.৯৫ শতাংশ। যদিও একই বছরে রপ্তানি হয়েছে ৪৯.২৫ বিলিয়ন ডলার। এই সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়ায় ৩৩.২৪ বিলিয়ন ডলারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ টিবিএসকে বলেন, "দেশে এখন মুদ্রাস্ফীতি বাড়ছে, এই মুদ্রাস্ফীতি কমাতে হলে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমাতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যাংকের লেন্ডিং রেট বাড়াতে হবে।"
জুলাইয়ে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে; তবে এটি যদি উৎপাদন খাতে ব্যয় হয়, তাহলে মুদ্রাস্ফীতিতে প্রভাব পড়বে না। কিন্তু এটি দেশের জন্য ভালো হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ডলারের ঘাটতিতে ভুগছে এমন ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সাড়ে ৬৭ হাজার কোটি টাকায় সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার কিনেছে ২০২২ অর্থবছরে।
একইভাবে চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে ব্যাংকগুলো চলমান ডলার সংকটে রয়েছে।
সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া চলতি অর্থবছরের ৪৭ দিনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১৭ হাজার ৬০৩ কোটি টাকায় ১.৮ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে।
বৈদেশিক মুদ্রার বাজার স্থিতিশীল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিলাসবহুল পণ্যের পাশাপাশি কম প্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি কমাতে এলসি মার্জিন বাড়ানোসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। একই সময়ে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে, যাতে জরুরি সরকারি আমদানির ক্ষেত্রে লেনদেন নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়।