অঘটনে শুরু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে দিল নামিবিয়া
গত মাসেই টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের এশিয়া কাপের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিতেছে শ্রীলঙ্কা। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড খেলতে হলেও লঙ্কানদের ভাবা হচ্ছিল শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। রোববার মাঠে গড়ানো ধুমধারাক্কার বিশ্ব আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে তারাই কিনা অঘটনের শিকার! তিন বছর ধরে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলা নামিবিয়ার বিপক্ষে অসহায় আত্মসমর্পণে হার মেনে নিতে হলো শ্রীলঙ্কাকে।
রোববার অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডের 'এ' গ্রুপের ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ৫৫ রানে হারিয়েছে দিয়েছে আইসিসির সহযোগী দেশ নামিবিয়া। ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি অঙ্গনে পা রাখা নামিবিয়ার এটা ছিল ৩৯তম ম্যাচ। শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ২৭তম জয় তুলে নিলো তারা। তাদের ক্রিকেট ইতিহাসে এই জয়টি যে অন্যতম সেরা সাফল্য, সেটা বলাই বাহুল্য।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামে নাবিবিয়া। কয়েকটি মাঝারি ইনিংসের পর ম্যাচসেরা জ্যান ফ্রাইলিঙ্কের মারকুটে ব্যাটিং ও জনাথন স্মিটের ঝড়ো ইনিংসে ৭ উইকেটে ১৬৩ রান তোলে নামিবিয়া। জবাবে ডেভিড ভিসা, বার্নার্ড স্কল্টজ, বেন শিকোঙ্গোদের দারুণ বোলিংয়ের সামনে ১৯ ওভারে ১০৮ রানেই অলআউট হয়ে যায় শ্রীলঙ্কা।
রূপকথার গল্প লেখার পথে প্রতিশোধটাও নেওয়া হয়ে গেল নামিবিয়ার। ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ খেলে ২৫ লাখ ৪১ হাজার জনসংখ্যার দেশটি। প্রথম রাউন্ডের সেই ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে স্রেফ উড়ে যায় নামিবিয়া। ৯৬ রান তুলে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারে তারা। এবার নিজেদের প্রথম ম্যাচে একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে গল্পটা নিজেদের মতো করে লিখলো নামিবিয়া।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুটা দুঃপ্নের মতো হয় শ্রীলঙ্কার। ২১ রানের মধ্যেই ফিরে যান কুশল মেন্ডিস, পাথুম নিসাঙ্কা ও দানুশকা গুনাথিলাকা। দলের সবচেয়ে বড় তারকা ডেভিড ভিসা ও ২২ বছর তরুণ পেসার বেন শিকোঙ্গোর দারুণ বোলিংয়ে লঙ্কানদের ওপর চড়ে বসে নামিবিয়া।
শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে দলকে ঠিক পথে ফেরানোর চেষ্টা করেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ও অধিনায়ক দাসুন শানাকা। যদিও তাদের জুটিটাকে দীর্ঘ হতে দেননি আগে ব্যাট হাতে ঝড় তোলা ফ্রাইলিঙ্ক। ১১ বলে ১২ রান করা ধনঞ্জয়াকে ফিরিয়ে দেন বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার। ভানুকা রাজাপাকসেকে সঙ্গে নিয়ে শানাকা ইনিংস অনেকটাই গুছিয়ে নেন।
কিন্তু ১১তম ওভারে গিয়ে সবচেয়ে বড় আঘাতটি আসে লঙ্কানদের ইনিংসে। ২১ বলে ২টি চারে ২০ রান করে স্কল্টজের শিকারে পরিণত হন রাজাপাকসে। এরপর শানাকাই যা লড়েছেন। বাকিরা কেউ-ই নামিবিয়ার বোলিংয়ের সামনে দাঁড়াতে পারেননি। শানাকা ২৩ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় সর্বোচ্চ ২৯ রান করেন। একেবারে শেষে মাহেশ থিকশানা ১১ রান করেন। ভিসা, স্কল্টস, শিকোঙ্গো ও ফ্রাইলিঙ্ক ২টি করে উইকেট নেন। একটি উইকেট পান জনাথন স্মিট।
এর আগে ব্যাটিং করা নামিবিয়া ১৬ রানের মধ্যেই ২ উইকেট হারায়। শুরুর চাপ কাটিয়ে তুলে ছোট ছোট ইনিংস খেলেন জ্যান নিকল লফটি ইটন, স্টেফান বার্ড ও অধিনায়ক জেরহার্ড এরাসমাস। নিকোল ১২ বলে বার্ড ২৪ বলে ২৬ ও এরাসমাস ২৪ বলে ২০ রান করেন। তাদের ব্যাটে ছন্দ মিললেও ১৫তম ওভারে ডেভিড ভিসাকে হারিয়ে আবারও চাপ পড়ে নামিবিয়া।
যদিও দলকে কোনো চাপ বুঝতে দেননি ম্যাচসেরা ফ্রাইলিঙ্ক ও স্মিট। এখান ব্যাটিং শো শুরু করেন এ দুজন। মুহূর্তেই দলের স্কোরকার্ডের চেহারা পাল্টে দেন তারা। ১৪.২ ওভারে ৯৩ রান তোলা দলকে ১৬৩ রানে পৌঁছে দেন ম্যাচ জয়ের এই দুই নায়ক। ৩৩ বলে ৬৯ রানের অসাধারণ এক জুটি গড়েন তারা। ফ্রাইলিঙ্ক ২৮ বলে ৪টি চারে ৪৪ রান করেন। ১৬ বলে ২টি করে চার ও ছক্কায় ৩১ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলেন স্মিট। শ্রীলঙ্কার প্রমোদ মাদুশান ২টি উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান থিকাশানা, চামিরা, করুনারত্নে ও হাসারাঙ্গা।