ইমরানের দলের সাংসদের অভিযোগ: স্ত্রীর সঙ্গে তাকে নিয়ে আপত্তিকর ভিডিও পাঠানো হয়েছে
পাকিস্তানের তেহরিক- ই- ইনসাফ (পিটিআই) দলের সিনেটর আজম সোয়াতি দাবি করেছেন, একটি অজ্ঞাত নম্বর থেকে তার স্ত্রীর কাছে তাদের দুজনের ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের 'আপত্তিকর ভিডিও' পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। খবর দ্য ডনের
শনিবার (৫ নভেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
ইতঃপূর্বে সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার বিরুদ্ধে এক টুইট পোস্ট করেন সোয়াতি। বিতর্কিত টুইটের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। গত বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) এ মামলায় তাকে গ্রেপ্তারও করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
পরবর্তীতে তিনি জামিনে মুক্তি পান। নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করার অভিযোগও করেছেন সোয়াতি।
টুইটে তিনি লিখেছিলেন, 'জনাব বাজওয়া এবং আপনার সাথে সামান্য যে কয়েকজন রয়েছেন– তাদেরকে অভিনন্দন জানাই। আপনাদের পরিকল্পনা সত্যিই কাজ করছে। দেশের স্বার্থের বিনিময়ে সব অপরাধীকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। এসব দুর্বৃত্তকে মুক্তি দিয়ে, আপনি দুর্নীতিকে বৈধতা দিয়েছেন। এরপর দেশের ভবিষ্যৎ কী হবে বলে আপনি মনে করেন'।
বৃহস্পতিবার ইসলামাবাদের আদালত প্রাঙ্গনে তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তিনি কোনো আইন, সংবিধান বা মৌলিক অধিকার ভঙ্গের দায়ে গ্রেপ্তার হননি। বরং শুধু একটি নাম (বাজওয়ার) উল্লেখ করার জন্যই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 'এটাই আমার অপরাধ' বলেন তিনি।
শনিবারের সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষের এই সদস্য সেদিনের বক্তব্যের বরাত দিয়ে বলেন, আমি কোনো দুর্নীতি বা অন্যায় করিনি। প্রভাবশালী বলয়ের হাতে আমার এ ধরনের অনৈতিক ভিডিও থাকার কথা ভাবতেও পারিনি।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর শীর্ষস্থানীয়দের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, 'আমার এই ধারণা পুরোটাই ছিল বিভ্রম'।
আজম সোয়াতি গণমাধ্যমকে আরও বলেন, গত শুক্রবার রাত ৯টায় স্ত্রীর কাছ থেকে একটি ফোনকল পান তিনি। এসময়, তার স্ত্রী কাঁদছিলেন এবং চিৎকার করছিলেন। আসল ঘটনা তাতে বুঝতে পারেননি তিনি। তখন তার মেয়েকে বলেন, মায়ের সাথে কথা বলে যেন আসল ঘটনাটি শোনে।
মেয়ের পীড়াপীড়িতে শেষপর্যন্ত মুখ খোলেন তার স্ত্রী। এবং অজ্ঞাত নম্বর থেকে একটি আপত্তিজনক ভিডিও বার্তা পাওয়ার কথা জানান।
তিনি বলেন, পরে আমার মেয়ে আমাকে কাঁদতে কাঁদতে স্ত্রীর সাথে আমার অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিওর কথা জানায়। আমি বিস্মিত হয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করি, 'এটা কীভাবে সম্ভব'। এটা বলতেই তার চোখে পানি চলে আসে।
জ্যেষ্ঠ এ পিটিআই নেতা জানান, কোয়েটায় স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে একবার বেড়াতে যান তিনি। আর ভিডিওটি সেসময়ের।
'আমার দেশের কন্যা ও নাতনিরা আপনাদের মাধ্যমে আজ এসব বিষয় জানবে– তাই আমি আর বেশি কিছু বলব না'।
ওই সফরকালে কোয়েটায় সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের লজে আজম সোয়াতি ও তার স্ত্রীর থাকার বন্দোবস্ত করে দেন সিনেট চেয়ারপার্সন সাদিক সানজারনি। আজম জানান, সাদিক তার স্ত্রীকে খুবই সম্মান করতেন।
সোয়াতি বলেন, 'বয়োবৃদ্ধ একজন সিনেটর ও তোমার চাচির নিরাপত্তার জন্য সেখানে তাদের থাকার বন্দোবস্ত করে দিয়েছিলে। আমাকে বলেছিলে, ওই সময় কোয়েটায় সুপ্রিম কোর্টের কোনো বিচারপতি না থাকায়– আমরা সেখানে থাকতে পারব'।
এসব বলতে বলতে আবারো আবেগ-তাড়িত হয়ে পড়েন পিটিআইয়ের এই বয়স্ক সিনেটর। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমার স্ত্রীকে এখন দেশ ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে হবে। খুব সম্ভবত আমার মেয়ে ও নাতনিদেরও মনে গভীর ক্ষত আর অপমান নিয়ে দেশ ছাড়তে হবে।
'আমি খোদার কাছে জানতে চাই, পাকিস্তানে আজ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেকার সম্পর্কও কী নিরাপদ নয়'?