চাঁদ দিনে দিনে ছোট হচ্ছে!
শিল্পী লিওনার্দো দা ভিঞ্চিই পৃথিবীর প্রথম কোন ব্যক্তি যিনি গবেষণা করে বলেছিলেন, চাঁদ আসলে সঙ্কুচিত ও প্রসারিত হচ্ছে না, বরং এর কিছু অংশ লুকানো থাকে। চাঁদকে ক্রিসেন্টের আকারে বা অর্ধচন্দ্রাকৃতির মতো দেখে উনি এই মন্তব্য করেছিলেন।
এভাবেই রাতের আকাশে উজ্জ্বল রূপালি থালার মত দেখতে এক বিস্ময়কর বস্তু চাঁদকে ঘিরে যুগে যুগে এ গ্রহের মানুষের কৌতূহল শেষ ছিল না। চাঁদকে কেন্দ্র করে কত আবেগ-অনুভূতি, চিন্তা-ভাবনা, গল্প, কবিতা, রূপকথাই না গড়ে উঠেছে! এই সীমাহীন কৌতূহল মেটাতে ১৯৬৯ সালে প্রথমবারের মতো মানুষ চাঁদে অবতরণও করেছিল।
কিন্তু এবার শিল্পী লিওনার্দো দা ভিঞ্চির কথা ভুল প্রমাণিত হতে যাচ্ছে। পৃথিবী থেকে আনুমানিক ৩,৮৪,৪০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ দিনে দিনে ছোট বা সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি নাসার নতুন একটি গবেষণায় জানা গেছে এই চমকপ্রদ তথ্য। কী অবিশ্বাস্য! একদম কল্পকাহিনীর মতই শোনাচ্ছে। কিন্তু শুনতে যেমনই শোনাক, সত্য কঠিন হলেও সেটা সত্য!
এই সঙ্কোচনের ফলে পাথুরে পৃষ্ঠে সৃষ্টি হচ্ছে ভাঁজ এবং সেই সাথে সৃষ্টি হচ্ছে মৃদু কম্পন। গবেষণায় বলা হয়েছে, গত কয়েক শ কোটি বছরে চাঁদ পরিধির দিক থেকে প্রায় ১৫০ ফুট ছোট হয়েছে। বিশাল আকৃতির তুলনায় এই সংকোচন খুব নগণ্য হলেও এটি চাঁদ সম্পর্কে অভূতপূর্ব এক ধারণার সৃষ্টি করেছে বিশ্ববাসীর মনে!
নাসার নতুন এই গবেষণার তথ্য এ বছরের জুনে যুক্তরাজ্যেভিত্তিক গবেষণা সাময়িকী ‘নেচার জিওসায়েন্স’ এ প্রকাশিত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা নাসার রোবট মহাকাশযান লুনার রিকনোসেন্স অরবিটারের (এলআরও) তোলা ১২ হাজার ছবি বিশ্লেষণ করেছেন। চাঁদের উত্তর মেরুর কাছে নিচু এলাকা মারে ফ্রিগোরিসে (হিম সাগর) ওই ছবিগুলো তোলা হয়েছে। ছবিতে দেখা গেছে, সেখানে ক্রমেই ফাটল সৃষ্টি হচ্ছে এবং ভাঁজ পড়ছে।
এর পূর্বে ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৭ সালে নাসার অ্যাপোলো ১১, ১২, ১৪, ১৫ ও ১৬ চন্দ্রাভিযান চালায়। ঐ সময় চন্দ্রপৃষ্ঠের মোট ২৮টি মৃদু কম্পন রেকর্ড করা হয়। নভোচারীরা লক্ষ্য করেন, চাঁদের অধিকাংশ কম্পন এর অভ্যন্তরে উৎপন্ন হচ্ছে। তবে চাঁদে পৃথিবীর মতো কোনো টেকটোনিক প্লেট না থাকায় এই কম্পন কোথা থেকে হচ্ছে, তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের দারুণ এক কৌতূহল তৈরি হয়।
নতুন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, ৪৫০ কোটি বছর আগে চাঁদ যখন সৃষ্টি হয়, তখনকার চেয়ে তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। এর ফলে চাঁদ ভেতর থেকে সংকুচিত হচ্ছে। যার কারণে সৃষ্টি হচ্ছে এর পৃষ্ঠে কম্পন এবং পড়ছে ভাঁজ।
গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়, চাঁদ ক্রমে ছোট হওয়ার ফলে এর পৃষ্ঠের একটি এলাকা তার সংলগ্ন এলাকার ওপরে উঠে যাচ্ছে। কখনো কখনো এটি ৩৩০ ফুট (১০০ মিটার) উঁচুও হয়ে পড়ছে এবং বিস্তৃত হচ্ছে মাইলের পর মাইল।