১৫ বছর পর সান্তাহার হাসপাতালের অসমাপ্ত কাজ শুরু
বগুড়ার আদমদিঘী উপজেলার সান্তাহারে প্রায় ১৫ বছর পড়ে থাকা ২০ শয্যার হাসপাতালটিতে চিকিৎসার পরিবেশ নিশ্চিত করতে অবশেষে কাজ শুরু করেছে স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ।
আদমদিঘীসহ আশেপাশের উপজেলার প্রায় সাড়ে চার লাখ মানুষের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে ২০০৫ সালের ৩০ মে তিন কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে এ হাসপাতালের নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন সংসদ সদস্য আবদুল মোমিন তালুকদার খোকা। কাজ শেষ হওয়ার আগেই ২০০৬ সালের ২২ অক্টোবর ওই সংসদ সদস্য আনুষ্ঠানিকভাবে হাসপাতালটির উদ্ধোধন করার পরপরই কাজ অসমাপ্ত রেখেই বড় অংকের বিল নিয়ে পালিয়ে যায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কিটওয়ে প্যাক।
স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, অসমাপ্ত ভবনগুলো দীর্ঘদিন পরে থাকায় এখন সেগুলো ব্যবহার উপযোগী করতে নতুন করে ব্যয় করতে হচ্ছে তিন কোটি ১৩ লাখ টাকা।
বগুড়া স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন ভবনটি পড়ে থাকায় নষ্ট হয়ে গেছে জানালা-দরজাসহ অনেক কিছুই।
"হাসপাতালে চিকিৎসার পরিবেশ ফিরে আনতে নষ্ট হয়ে যাওয়া জানালা-দরজা, মেঝের মোজাইক তুলে ফেলতে হচ্ছে" বলেন তিনি।
স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, কিটওয়ে প্যাক পালিয়ে যাওয়ার পর তাদের কাজ করার জন্য অনেকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। এক পর্যায়ে তাদের কার্যাদেশ বাতিল করা হয়। বাজেয়াপ্ত করা হয় জামানতের ১৪ লাখ টাকা। একই সঙ্গে বাতিল করা হয় ঠিকাদারি লাইসেন্সও। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
বগুড়ায় স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশুতোষ কর্মকার জানান, প্রায় ১৪ বছর চেষ্টার পর কর্তৃপক্ষ এ হাসপাতালের অসমাপ্ত কাজের জন্য তিন কোটি ৪৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়।" অসমাপ্ত কাজের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করলেও সর্বনিম্ন তিন কোটি ১৩ লাখ টাকা দর দাখিল করায় কাজ পেয়েছে মেসার্স বসুন্ধরা হাউজ বিল্ডার্স।
ঠিকাদার ফারুক রহমান জানান, আগামী বছরের জুন পর্যন্ত কাজ করার সময় থাকলেও তার আগেই সব কাজ শেষ হবে।
''আমি আশা করছি সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ১০/১১ মাসের মধ্যে অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে পারবো" যোগ করেন তিনি।
২০ শয্যার সান্তাহার হাসপাতালের সব ধরনের কাজ তদারকি করছেন বগুড়া স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী মাহিনুর ইসলাম।
তিনি জানান, অনেক বছর পড়ে থাকার কারণে হাসপাতালের মূল ভবনের অনেক কিছুই নষ্ট হয়ে গেছে। তা ছাড়া কর্মকর্তাদের বাড়িঘরগুলোর বেশির ভাগ কাজই বাকি রয়েছে।
"আমরা আশা করছি আগামী কয়েক মাসের মধ্যে গুরুত্বপূর্ন কাজগুলো শেষ করা সম্ভব হবে। তারপর যেটুকু কাজ বাকি থাকবে সেগুলোও নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ করা সম্ভব হবে" বললেন সহকারী প্রকৌশলী।
স্থানীয় জনগণ অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন পড়ে থাকায় ভবনগুলো মাদকসেবীসহ নানা ধরনের অপরাধিদের আখড়ায় পরিণত হয়। সেফটিক ট্যাংকসহ অসমাপ্ত ভবনের বিভিন্ন কক্ষে নিয়মিত হতো নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড।
সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, শুরু থেকেই এ হাসপাতাল নির্মাণে অনিয়ম আর দুর্নীতি হওয়ায় সরকারের ক্ষতি হয়েছে কমপক্ষে তিন কোটি টাকা।